বেরোবির রিসার্চ অফিসারদের বিরুদ্ধে অভিযানে দুদক

রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) ড. ওয়াজেদ ইন্টারন্যাশনাল রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের ১১ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী কোনো কাজ না করেই বেতন-ভাতা উত্তোলন করছেন, এমন তথ্য দিয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) রংপুর অফিসের পরিচালক হোসেন শরীফ।
আজ বুধবার (১২ মার্চ) সকালে দুদকের রংপুর অফিসের পরিচালক হোসেন শরীফের নেতৃত্বে চার সদস্যবিশিষ্ট একটি প্রতিনিধিদল বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের রিসার্চ অফিসারদের বিরুদ্ধে অভিযানে পরিচালনা করেন।
এ বিষয়ে হোসেন শরীফ জানান, সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. জলিল মিয়ার উদ্যোগে ২০০৯ সালে ড. ওয়াজেদ ইন্টারন্যাশনাল রিসার্চ ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করা হয়। প্রতিষ্ঠার পর তিনি কয়েকজন রিসার্চ অফিসারসহ প্রায় ২০৫ জন ফেলো ভর্তি করান। তবে, প্রতিষ্ঠানটির কোনো অনুমোদন বা নীতিমালা না থাকায় সেই ফেলোরা ডিগ্রি সম্পন্ন করতে পারেননি।
হোসেন শরীফ বলেন, দুদকের অভিযানে ইনস্টিটিউটের নথিপত্র যাচাই-বাছাই করে প্রাথমিকভাবে অনিয়মের সত্যতা পাওয়া গেছে। আমরা এই সংক্রান্ত রিপোর্ট কমিশনে প্রেরণ করব, সেখান থেকে পরবর্তী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
সূত্র জানায়, ড. ওয়াজেদ ইন্টারন্যাশনাল রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের গবেষক ভর্তির অনুমোদন না পাওয়ার বিষয়টি ২০২২ সালে প্রকাশ্যে এলে, এরপর থেকে ইনস্টিটিউটটিতে কার্যক্রম প্রায় স্থবির হয়ে পড়ে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট অনুযায়ী, ইনস্টিটিউটে মোট সাতজন কর্মকর্তা, একজন কম্পিউটার অপারেটর এবং একজন এমএলএসএস কর্মরত আছেন। সাতজন কর্মকর্তার মধ্যে রয়েছেন—অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার খন্দকার গোলাম মোস্তফা, প্রিন্সিপাল সায়েন্টিফিক অফিসার ড. প্রসন্নজিৎ সরকার, সাবেক উপাচার্য আবদুল জলিলের মেয়ে রুমানা ফেরদৌসী জলিল, ম্যানেজমেন্ট বিভাগের বিভাগীয় প্রধান রফিউল আজম খানের স্ত্রী, ডেপুটি রেজিস্ট্রার সিরাজুম মুনিরা, সিনিয়র সায়েন্টিফিক অফিসার আবু সায়েম, সিনিয়র রিসার্চ অফিসার ও মুখতার ইলাহীর বোন, মেহজাবিন ইলাহী, রংপুর বিভাগের জিয়া পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক ও রিসার্চ অফিসার ড. মো. রোকনুজ্জামান
জানা গেছে, ২০০৯ সালের ৩ ডিসেম্বর দশম সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ড. ওয়াজেদ ইন্টারন্যাশনাল রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠিত হয়। এরপর ২০১১ সালে সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষ থেকে এমফিল ও পিএইচডি প্রোগ্রামে ভর্তি শুরু হয়, যদিও গবেষণার অনুমোদন ছিল না।
সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আব্দুল জলিল মিয়ার আমলে তার মেয়ে রুমানা ফেরদৌসী জলিলকে নিয়োগ দিতে ইউজিসির অনুমোদন ছাড়াই গবেষক ভর্তি শুরু হয়। ২০১২ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে ২০৫ জন গবেষক ভর্তি হন, তবে ভর্তির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় কার্যক্রম স্থবির হয়ে যায়।
২০২২ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত অধিকাংশ কর্মকর্তা-কর্মচারী কার্যত কোনো কাজ ছাড়াই বেতন পাচ্ছেন। নিয়মিত অফিসে উপস্থিত না থাকার পাশাপাশি রিসার্চ অফিসার ড. মো. রোকনুজ্জামান গবেষণার চেয়ে বিএনপির রাজনীতিতে বেশি সক্রিয় বলে অভিযোগ রয়েছে। কর্মকর্তারা মনে করছেন, প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তার কারণে ভবিষ্যতে এখানকার কর্মকর্তারা প্রকাশ্যে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে আরও জড়িয়ে পড়তে পারেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে এই অফিসারদের গবেষণা কার্যক্রম সম্পর্কে খোঁজ নিতে গিয়ে দেখা যায়, কোনো কর্মকর্তারই উল্লেখযোগ্য গবেষণা নেই। গবেষণা বিষয়ক আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্ম রিসার্চগেটেও মাত্র দুইজন—ড. প্রসন্নজিৎ সরকার ও সিনিয়র সায়েন্টিফিক অফিসার আবু সায়েমের দুই-তিনটি গবেষণা সংক্রান্ত প্রবন্ধ পাওয়া গেছে, বাকিদের কোনো গবেষণা কার্যক্রমের তথ্য নেই।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. শওকাত আলী বলেন, আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদানের পর জানতে পারি যে, এই ইনস্টিটিউটের পরিচালক আমি নিজেই। দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে ইনস্টিটিউট সম্পর্কে খোঁজ নিতে শুরু করি।
ড. মো. শওকাত আলী জানান, প্রতিষ্ঠার প্রথম দিকে ইনস্টিটিউটের কোনো অনুমোদন ছিল না। তবে ২০২৪ সালের মে মাসে এটি অনুমোদন পেলেও এখনো নীতিমালা তৈরি হয়নি। আমি নিজ উদ্যোগে নীতিমালা তৈরির জন্য কাজ করছি।
উল্লেখ্য, এর আগে এই ইনস্টিটিউটের রিসার্চ অফিসারদের বিরুদ্ধে অনিয়মিত অফিস করা ও কার্যত কোনো কাজ না করেই প্রতি মাসে বেতন নেওয়ার অভিযোগে বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এ অভিযোগের ভিত্তিতে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তদন্তে অভিযান পরিচালনা করে।