এবারের লালন স্মরণোৎসবে শুধু সংক্ষিপ্ত আলোচনা

পবিত্র রমজানের কারণে কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়ায় আখড়াবাড়িতে দৌলপূর্ণিমার এবারের লালন স্মরণোৎসব শুধু আজকের সংক্ষিপ্ত আলোচনায় সীমাবদ্ধ রাখা হয়েছে।
প্রতি বছর দৌলপূর্ণিমার তিথিতে জমকালো আয়োজনে তিন দিনব্যাপী লালন স্মরণোৎসব হয়ে থাকে। দেশ-বিদেশ থেকে লাখ লাখ ভক্ত-দর্শনার্থী আসেন। এবার আজকের দৌলপূর্ণিমার তিথি পবিত্র রমজানে পড়ায় শুধু আলোচনা সভাতেই অনুষ্ঠান শেষ করবে লালন অ্যাকাডেমি। তবে অ্যাকাডেমি থেকে আজ রাতে দুই দফায় লালন ভক্তদের সেবা (খাবার) দেওয়া হবে।
আজ বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে ‘মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি’ স্লোগানে লালন অ্যাকাডেমি মিলনায়তনে সংক্ষিপ্ত আলোচনায় প্রধান অতিথি থাকবেন কবি ও চিন্তক ফরহাদ মজহার।
এদিকে প্রাণের সেই উৎসব না থাকায় আখড়াবাড়িতে সাধু ভক্তদের উপস্থিতি একেবারেই কম। দৌলপূর্ণিমার তিথি এলে যেখানে পা ফেলার জায়গা থাকে না এবার সেখানে লালন ভক্ত অনুসারীদের উপস্থিতি নেই বললেই চলে। বাউল মেলা, সংগীতানুষ্ঠান না থাকায় তেমন কোনো দর্শনার্থী নেই।
তবে অনুসারী যারা এসেছেন তারা লালনের রীতি মেনে সাধুসঙ্গ করবেন। তারা লালনের ভাব বিনিময় ও স্বল্প পরিসরে লালনের বাণী প্রচার করছেন।
আজ সন্ধ্যার পর অ্যাকাডেমির আনুষ্ঠানিকতা শেষ হলেও আগামীকাল দুপুরে নিজ উদ্যোগে পূর্ণসেবা গ্রহণ করে তারা আখড়াবাড়ি ছেড়ে যাবেন।
জেলা প্রশাসন বলছে, কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার আশঙ্কা নেই, রাতে সেবা দেওয়া ছাড়াও সাধু-ভক্তদের নিরাপত্তায় কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। পুলিশি পাহারার পাশাপাশি র্যাব ও সেনা সদস্যরাও টহল দিচ্ছেন।

২০০ বছর আগের কথা। নিজের ভক্ত বাউলদের খাটি করে গড়ে তুলতে বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহ তার জীবদ্দশায় ছেঁউড়িয়ার এই আখড়াবাড়িতে প্রতি বছর চৈত্রের দৌলপূর্ণিমা রাতে সাধুসঙ্গ উৎসব করতেন। ১২৯৭ বঙ্গাব্দের পহেলা কার্তিক তার মৃত্যুর পরও এ উৎসব চালিয়ে আসছে তার ভক্ত ও অনুসারীরা।
পরের উৎসবে একতারা, দোতরা আর ঢোল বাঁশির সুরে ও আধ্যাত্মিক গানে প্রকম্পিত হয়ে উঠবে লালন আখড়াবাড়ি, এমনটাই প্রত্যাশা লালন ভক্তদের।
কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান বলেন, লালন আখড়াবাড়িতে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার আশঙ্কা নেই। যেকোনো পরিস্থিতি খতিয়ে দেখা হয়েছে। মাজারসহ সাধু ভক্তদের নিরাপত্তায় কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। সিসিটিভি স্থাপনসহ পুরো এলাকা নজরদারির মধ্যে রাখা হয়েছে।
জেলা প্রশাসক ও লালন অ্যাকাডেমির সভাপতি তৌফিকুর রহমান বলেন, রমজানের পবিত্রতা রক্ষয় প্রস্তুতি সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক লালন মেলা, সঙ্গীতানুষ্ঠান বাদ দেওয়া হয়েছে। স্বল্প পরিসরে পালনের জন্য সাধু-ভক্তরাও সহযোগিতা করছেন। আর কোনো ধরনের মাদক সেবন, বেচাবিক্রি নিষেধ করা হয়েছে। শুধু এবারের জন্য না আগামীতেও এই নির্দেশ বলবৎ থাকবে। আলোচনা সভার পর রাতে দুই দফায় সাধু-ভক্তদের সেবা (খাবার) দেওয়া হবে।