পরাজিত শক্তির বিরুদ্ধে পুলিশকে সতর্ক থাকতে হবে : প্রধান উপদেষ্টা

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে পরাজিত শক্তি দেশকে অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস পুলিশ সদস্যদের এ ব্যাপারে সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশে বলেন, ‘বিদ্যমান আইন মেনে পুলিশকে অবশ্যই আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নিতে হবে। জুলাইয়ের পরাজিত শক্তির বিরুদ্ধে পুলিশকে সতর্ক থাকতে হবে।’
আজ সোমবার (১৭ মার্চ) রাজধানীর তেজগাঁও প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে জ্যেষ্ঠ পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক বৈঠকে ড. মুহাম্মদ ইউনূস এ কথা বলেন।
সভায় প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘ভবিষ্যতে যে সরকার নির্বাচিত হবে, সেটি হবে আইনের শাসনের সরকার, তাই পুলিশকে সে অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করতে হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কার্যক্রম সহজ করতে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানোর পাশাপাশি অনলাইনে মামলার আবেদন গ্রহণের ব্যবস্থা করতে হবে।
অধ্যাপক ইউনূস পুলিশ সুপারদের কাজের মূল্যায়নের ওপর জোর দেন, যাতে মাঠ পর্যায়ে প্রতিযোগিতা আরও গতিশীল হয়।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ফলে আমরা মস্ত বড় সুযোগ পেয়েছি। এটাকে যেন হারিয়ে না ফেলি। আমরাও সেটা চেষ্টা করব, ভবিষ্যতে যারা আসবে তারাও আশা করি চেষ্টা করবে। পথটা যেন আমরা সৃষ্টি করে দিই। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে যে সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে, সেটিকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশ পুলিশকে নতুন বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে নেতৃত্বের ভূমিকা পালন করতে হবে।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘বাংলাদেশ একটি সম্ভাবনাময় দেশ। দেশে যে সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে, সেটিকে কাজে লাগাতে হবে।
বাংলাদেশের বিশ্বের নেতৃস্থানীয় দেশের কাতারে পৌঁছানোর সুযোগ রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন ‘আমাদের অবশ্যই এই সুযোগকে কাজে লাগাতে হবে। দেশ বদলাতে হলে একক নির্দেশে নয়, বরং সবাইকে নিয়ে এক একটি টিম হয়ে কাজ করতে হবে এবং বাংলাদেশে যত টিম আছে, তার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ টিম হলো পুলিশ।’
মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের হাতে খুব বেশি সময় নেই। আমরা ইতোমধ্যে সাত মাস পার করেছি। আমরা বলছি, ডিসেম্বরে নির্বাচন হবে। কাজেই কি কি সংস্কার করতে চাই করে ফেলতে হবে। আপনারাও সংস্কারের কথা বলেছেন। কারো জন্য অপেক্ষা করে কোনো ফায়দা হবে না। কাজটা করতে হবে এবং সেটা আমাদের প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘সরকার যা কিছুই করতে চায়, শেষ পর্যন্ত পুলিশের হাত দিয়েই করতে হয়। তবে তারা সব করে দেয় না, তারা পরিবেশটা সৃষ্টি করে। যে পরিবেশটা না থাকলে কোনো কাজই আর হয় না। পুলিশের কথা প্রসঙ্গে বারবার আমরা দুটো শব্দ বলছি— আইন ও শৃঙ্খলা। পুলিশের হাতেই এটাকে এক্সিকিউট করতে হবে। এই পরিবেশ সৃষ্টি করা না গেলে সরকার, গণতান্ত্রিক অধিকার, মানুষের অধিকার, নাগরিকের অধিকার— কিছুই থাকে না।’
ড. ইউনূস বলেন, ‘আমরা পুলিশকে অবহেলা করে দেশ গড়তে পারব না। তারাই সম্মুখসারির মানুষ। তারা ক্ষেত্র প্রস্তুত করলেই বাকি জিনিসগুলো হয়। আইনশৃঙ্খলা না থাকলে যত বড় বড় চিন্তাই হোক, যত টাকাই থাকুক, কোনো কাজে আসবে না।’
পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে কাজ করতে পুলিশের অত্যন্ত বেগ পেতে হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এগুলো সমাধানের চেষ্টা করব।’
এই পথ সৃষ্টির ক্ষেত্রে পুলিশ বাহিনী একটা মস্ত বড় ভূমিকা পালন করতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
সভায় অন্যান্যের মধ্যে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, স্বরাষ্ট্র সচিব নাসিমুল গনি এবং পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম বক্তব্য দেন।
মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আহসান হাবিব পলাশ এবং রাজশাহীর পুলিশ সুপার ফারজানা ইসলাম। সভায় পুলিশের ঊর্ধ্বতন ১২৭ কর্মকর্তা যোগ দেন।