ভাইরাল তরমুজ বিক্রেতা রনি অসুস্থ, দোয়া চেয়েছেন বিশ্ববাসীর

‘ওই কীরে, ওই কীরে, মধু মধু, রসমালাই’— এই হাকঁডাক এরইমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ সর্বত্র ভাইরাল হয়ে গেছে। এই হাঁকডাক কোনো মধু বা রসমালাই বিক্রেতার নয়, এটা রাজধানীর কারওয়ান বাজারের তরমুজ বিক্রেতা রনির তরমুজ বিক্রির কৌশল। এরইমধ্যে ভাইরাল হয়ে গেছেন তরমুজ বিক্রেতা রনি। সাংবাদিক ও ইউটিউবাররা হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন তার দোকানে। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, এই বিড়ম্বনায় অসুস্থ হয়ে গেছেন ভাইরাল রনি। তাঁর গলা বসে গেছে। কথা বলতে পারছেন না ভালোভাবে। তাঁকে ছাড়তে হয়েছে কারওয়ান বাজারের চিরচেনা ফলপট্টি।
কারওয়ান বাজারে আজ বুধবারও (১৯ মার্চ) তাঁকে পাওয়া যায়নি। তবে এই প্রতিবেদকের সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছে রনির। দর্শক, ভক্ত ও বিশ্ববাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন তিনি।
রনির প্রত্যাশা, সবার দোয়া ও ভালোবাসায় তিনি দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবেন। আবারও ফিরতে চান তরমুজ বিক্রিতে। অসুস্থ শরীর নিয়ে রনি এখন পরিবারের সঙ্গে গ্রামের বাড়ি মুন্সিগঞ্জের বিক্রমপুরে অবস্থান করছেন। তবে, এতকিছুর পরও তিনি অভিভূত সবার ভালোবাসায়।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রনির ‘ওই কীরে, ওই কীরে, মধু মধু, রসমালাই’ হাঁকডাক ভাইরাল হওয়ার পর অন্য ফল বিক্রেতারা তাঁকে কারওয়ান বাজারের ফলপট্টি ছেড়ে যেতে বলেছেন। কারণ হিসেবে অন্য তরমুজ বিক্রেতারা বলছেন, রনি তরমুজ বিক্রি করতে থাকলে শতশত ইউটিউবার সেখানে ভিড় করেন, অন্য দোকানগুলোতে ক্রেতা কমে যায়। সবাই ভিড় করেন রনি আর তার কাছে আসা ইউটিউবারদের কাছে।
আজ বুধবার বিকেলে ফলপট্টিতে গিয়ে রনিকে পাওয়া যায়নি। পাওয়া গেছে রনির ছোট ভাই রকিকে। তরমুজের বাজারে রনি না থাকলেও রয়ে গেছে তাঁর ভাইরাল উক্তি— ‘ওই কীরে, ওই কীরে, মধু মধু, রসমালাই’।
কারওয়ান বাজারের ফলপট্টিতে পৌনে এক ঘণ্টা অবস্থান করে দেখা গেছে, রনির বলা ওই ভাইরাল হাঁকডাক উচ্চস্বরে বলে বলে অন্য বিক্রেতারা তরমুজ বিক্রি করছেন। খোদ রনির ছোটভাই রকিও তরমুজ বিক্রির সময় বলছিলেন, ‘তরমুজের নাম, ওই কিরে, ওই কীরে, রসমালাই।’
ভাইরাল রনির ছোট ভাই রকি এ প্রতিবেদকের সঙ্গে ‘রনি ও তরমুজ’ সংক্রান্ত নানা বিষয়ে কথা বলেন। জানান, রনি ছোট বেলাতেই এখানে তরমুজ বিক্রি শুরু করেন। দেড় যুগেরও বেশি সময় ধরে তিনি কারওয়ান বাজারে তরমুজ বিক্রি করেন।
কথায় কথায় রকি বলেন, ‘আমার বড় ভাই রনির ওই বক্তব্য ভাইরাল হওয়ার পর মিডিয়া আর ইউটিউবারদের জ্বালায় সবাই বিরক্ত। মুখে মাস্ক ব্যবহার করেও এখানে টিকতে পারেননি রনি। লোকে তাঁর মাস্ক খুলে ভিডিও করা শুরু করেন। পরে ভাই এখান থেকে গ্রামে চলে গেছেন।’
আলাপের এক পর্যায়ে এ প্রতিবেদক রনির সঙ্গে কথার সুযোগ চান রকির কাছে। এরপর রকি তাঁর ভাইয়ের একটি মুঠোফোন নম্বর দেন। ওই নম্বরে কল দিলে অপর প্রান্ত থেকে রনি কথা বলে উঠেন। ভালোভাবে কথা বলতে পারছিলেন না। তাঁর গলা বসে গেছে। সালাম বিনিময়ের পর্ব শেষে রনি বলেন, ‘আমি একটু অসুস্থ ভাই। কয়েকদিন গ্রামে বিশ্রাম নিয়ে আবার কারওয়ান বাজারে তরমুজ বিক্রি শুরু করব। এখন আমার ছোট ভাই রকি বিক্রি করছে।’
দীর্ঘ ১৫ মিনিট রনির সঙ্গে মুঠোফোনে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। অসুস্থতার কথা বলতে বলতে হঠাৎ রনি বলে ওঠেন, ‘ওই কীরে, ওই কীরে, মধু মধু, রসমালাই, আগুন আগুন’। আপনাদের ‘সেলিব্রেটি রনি ভাই’ সবার কাছে দোয়া চেয়েছেন। আপনারা আল্লার কাছে দোয়া প্রার্থনা করবেন। আমি সবার ভালোবাসা চাই। দর্শক-ভক্তদের ভালোবাসা চাই। আমি বিশ্বের সবার দোয়া ও ভালোবাসা চাই। টাকা দিয়ে ভালোবাসা পাওয়া যায় না। ভালোবাসা পেতে হয় ভালোবাসার বিনিময়ে। আপনি (প্রতিবেদক) সবার কাছে আমার জন্য দোয়া চাইবেন। চিল্লায়ে চিল্লায়ে তরমুজ বিক্রি করে গলার অবস্থা খারাপ। শরীরটাও খুব খারাপ।’
রনি যেখানে তরমুজ বিক্রি করেন তার পাশেই তরমুজ বিক্রি করছিলেন সামসুর আলম ও মোবারক হোসেন। কারওয়ান বাজারে ৯ বছর ধরে তরমুজ বিক্রি করে আসা সামসুর আলম বলছিলেন, ‘আমরা রনিকে বলেছি, ব্যবসা করতে হলে অন্যদিকে গিয়ে করেন। আমাদের ক্ষতি কইরেন না। কারণ, রনি দোকানে থাকলে আমাদের এখানে কারও দোকানে কোনো ক্রেতা দাঁড়ায় না। সবাই রনি আর ইউটিউবারদের ওখানে ভিড় করেন। আমাদের বিক্রিও কম হয়। এবার এমনিতেই বেচা-বিক্রি ভালো না।’

আরেক বিক্রেতা মোবারক হোসেন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গেও এত ক্যামেরাম্যান থাকতো না। পুরো দোকান সব খালি হয়ে যেত, রনি এলে। শেষে মাস্ক পরে এসেও কুল পেত না। তারপরও বিক্রি হতো না। বিক্রির তো সুযোগই পেতেন না।’
কারওয়ান বাজারের অধিকাংশ তরমুজ বিক্রেতা রনির ওই ভাইরাল বক্তব্য ব্যবহার করে উচ্চস্বরে ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছিলেন। অনেকেই তা ভিডিও করছিলেন। এ সময় মাসুদ নামের এক তরমুজ বিক্রেতা বলেন, ‘রনির বক্তব্য আর রনির একা নেই। এখন সবার হয়ে গেছে। আমরাও ব্যবহার করছি।’
ফলপট্টি থেকে ফিরে আসার সময় একজন রিকশাচালক ‘কীরে, ওই কীরে, মধু মধু’ বলতে বলতে রিকশা চালাচ্ছিলেন।
একটু দূরে ইফতার বিক্রি করছিলেন নজরুল নামে একজন। তিনিও ‘কীরে, ওই কীরে’ বলছিলেন এক ক্রেতার সঙ্গে। সে সময় নজরুল বলেন, ‘রনি ভাইরাল, পুরাই ভাইরাল।’