ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন হলে দেশ সঠিক পথে থাকবে : আমীর খসরু

ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন হলে দেশ সঠিক পথে থাকবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, “সবাই ধরেই নিয়েছে ডিসেম্বরে পরে নির্বাচন দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। ইতোমধ্যে অনেকে বলছেন, ডিসেম্বর অনেক দেরি। কিন্তু তারপরেও ডিসেম্বর ‘কাট অব টাইম’ হিসেবে ধরে নিয়েছে সবাই। সবার ধারণা, ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন হলে আমরা সঠিক পথে থাকব। গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। জনগণের মালিকানা ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য আমরা ১৭ বছর সংগ্রাম করেছি, সেটা ফিরিয়ে দেওয়ার একমাত্র মাধ্যম নির্বাচন।”
আজ বৃহস্পতিবার (২০ মার্চ) রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলারের সঙ্গে বৈঠক শেষে আমীর খসরু এসব কথা বলেন। বেলা ১১টায় অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন দলটির স্থায়ী কমিটি ও চেয়ারপারসন ফরেন অ্যাফেয়ার্স অ্যাডভাইজারি কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক ও চেয়ারপারসনের পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক বিশেষ সহযোগী উপদেষ্টা কমিটির সদস্য শামা ওবায়েদ।
বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক, সামাজিক, বৈদেশিক সম্পর্কের অবস্থান নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে। রাজনীতির ক্ষেত্রে স্বাভাবিকভাবেই নির্বাচন এবং সংস্কার কমিশনগুলোর ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার যে চেষ্টা চলছে, এ ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে। সংস্কারের যে বিষয়গুলোতে ঐকমত্য হবে, সে বিষয়গুলো এগিয়ে নিয়ে যাব। যে বিষয়গুলো ঐকমত্য হবে না সেখানে সাংবিধানীয় হোক, নির্বাচনি হোক বা অন্য যেকোনো বিষয় হোক, সেটা আগামী নির্বাচনে প্রত্যেকটা রাজনৈতিক দলের অধিকার আছে, জনগণের কাছে নিয়ে যাওয়ার। তারা জনগণের কাছে উপস্থাপন করবে, জনগণের মতামত নিয়ে এসে সংসদে আলোচনা হবে, তর্ক হবে, বিতর্ক হবে তারপর সংসদে পাস হবে। বৈঠকে আলোচনাটা এভাবেই হয়েছে।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘নির্বাচন নিয়ে দেশ ও দেশের বাইরে সবাই ভাবছে নির্বাচন কবে হবে, কবে দেশে গণতান্ত্রিক অর্ডার (শৃঙ্খলা) ফিরে আসবে। দেশে একটি সরকার আছে, কিন্তু এখনও গণতান্ত্রিক অর্ডার ফিরে আসেনি। সেটা না এলে, জনগণ সমর্থিত একটা সরকার ব্যতীত কোনো অ্যাডমিনিস্ট্রেশন, পুলিশ সাপোর্ট দিয়ে সেটা দাঁড়াতে পারবে না। সেটা আমরা লক্ষ করছি। জনগণের সমর্থিত সরকার-সংসদ, যা জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকবে, সেটা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব করতে পারলে, অনেকগুলো সমস্যা সমাধান হবে। (দেশ) অনেকগুলো সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে, এগুলো একটা পলিটিকাল উইং ছাড়া সমাধান করা কঠিন। এজন্য আলোচনায় এ বিষয়টি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।’
ইইউতে সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানি হয় জানিয়ে বিএনপিনেতা আমীর খসরু বলেন, ‘আগামী দিনে ইইউর সঙ্গে আমাদের কর্মপন্থা কী হবে, তা আলোচনা হয়েছে। বর্তমানে নির্বাচন ঘিরে, সংস্কার ঘিরে ইইউ সহযোগিতা করতে রাজি আছে। বিশেষ করে ইলেকট্রো প্রসেস থেকে শুরু করে যে প্রতিষ্ঠান ভেঙে পড়েছে, তা সংস্কার-পরিবর্তন—এগুলো সঠিক জায়গায় ফিরিয়ে আনার জন্য তারা এগিয়ে আসতে রাজি আছে।’
এক প্রশ্নের জবাবে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘নির্বাচন আগে-পরের বিষয়টা গুরুত্বপূর্ণ না। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, যে বিষয়গুলো আমরা ঐকমত্য হব, সেই বিষয়গুলো বাস্তবায়ন করতে হবে। বিভিন্ন পার্টির বিভিন্ন চিন্তা, বিভিন্ন দর্শন রয়েছে। সবাই যদি মনে করে সব বিষয়ে সবাই ঐকমত্য হবে, তাহলে এত রাজনৈতিক দলের দরকার নেই। বাকশাল নিয়ে আসতে পারে। কিন্তু আমরা তো আবার বাকশালেও ফিরে যেতে চাই না। যেখানে ঐকমত্য হবে, সে বিষয়গুলো সমাধান করতে পারব ইমিডিয়েটলি (তাৎক্ষণিক)। আর যেখানে ঐকমত্য হবে না, সেটা আগামী দিনে নির্বাচনে প্রত্যেকটি দল তাদের মেন্ডেট নিয়ে, মেনুফেস্টু নিয়ে, চিন্তা নিয়ে জনগণের কাছে যাবে এবং জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে যে সংসদ হবে, সেখানে বাস্তবায়ন করবে।’