এবার ঈদে কমেছে সড়ক দুর্ঘটনা

গত বছরের তুলনায় এ বছর ঈদের ছুটিতে সড়ক দুর্ঘটনা কমেছে। মানুষ স্বাচ্ছন্দ্যে ঈদ উদযাপন করেছে। সড়ক দুর্ঘটনা রোধে এবং মানুষের শান্তিপূর্ণভাবে ঈদ উদযাপনে বর্তমান সরকার কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ায় সড়কে দুর্ঘটনা কমেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা এ বছর ঈদের আগে থেকে সারা দেশে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সড়কে কঠোর নজরদারি ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করে। সে কারণে সড়কে দুর্ঘটনার হার কমেছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন।
এ বছর ঈদের ছুটিতে সেনাবাহিনী, পুলিশ, বিজিবি ও আনসার কেউ ছুটিতে বাড়ি যায়নি। রাজধানী ঢাকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়। টার্মিনালের প্রবেশমুখে পুলিশ ও র্যাবের কন্ট্রোল রুম স্থাপন করা হয়।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি সড়ক দুর্ঘটনা মনিটরিং সেলের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর ২৪ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত ঈদের আগে ও পরে ২১৫টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২৩৯ জন নিহত হয়েছেন এবং ৫১৬ জন আহত হয়েছেন। গত বছর ২০২৪ সালে ঈদের আগে ও পরে ৩৯৯টি দুর্ঘটনায় ৪০৭ জন নিহত, ১ হাজার ৩৯৮ আহত হয়েছেন।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী ঈদের আগে একটি বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের বলেন, সরকারের ব্যবস্থাপনা ভালো থাকায় এবারের ঈদযাত্রা স্বস্তিদায়ক হচ্ছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার ও সতর্ক থাকায় এবার ঈদে ঘরমুখো মানুষ স্বস্তিতে বাড়ি ফিরেছে। তিনি বলেন, কোনো ভোগান্তি ছাড়াই যাত্রীরা ঈদের ছুটিতে বাড়ি যেতে পারবে। ঈদযাত্রাকে কেন্দ্রকরে রেলওয়ে পুলিশের কন্ট্রোল রুম বসানো হয়। সময়মতো ট্রেন ও লঞ্চ ছেড়ে যায়।
পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে নাড়ির টানে বাড়ি ফেরা মানুষ ছুটি শেষে এখন স্বস্তিতে রাজধানীতে ফিরছে।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, গাড়ির বেপরোয়া গতি, বিপজ্জনক ওভারটেকিং, সড়কের নির্মাণ ত্রুটি, ফিটনেসবিহীন যানবাহন, চালক, যাত্রী ও পথচারীদের অসতর্কতা এবং চালকের অদক্ষতা ও ট্রাফিক আইন সংক্রান্ত অজ্ঞতার কারণে সড়কে দুর্ঘটনাগুলো হয়। এ ছাড়া পরিবহণ চালক ও মালিকের বেপরোয়া মনোভাব, চলন্ত অবস্থায় মোবাইল বা হেডফোন ব্যবহার, মাদক সেবন করে যানবাহন চালানো, অরক্ষিত রেলক্রসিংয়ের ফলেও সড়কে দুর্ঘটনা হচ্ছে।
মোজাম্মেল হক বলেন, দেশব্যাপী নিরাপদ, আধুনিক ও স্মার্ট গণপরিবহণ ব্যবস্থার পরিবর্তে টুকটুকি-ইজিবাইক-ব্যাটারিচালিত রিকশা, মোটরসাইকেল, সিএনজি অটোরিকশা নির্ভর গণপরিবহণ ব্যবস্থার দিকে ধাবিত হওয়ার কারণে সড়ক দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটছে।
দুর্ঘটনা রোধে যানজট নিরসনে মনিটরিং জোরদার করা, রাস্তার ওপর হাট-বাজার না বসানো, ফুটপাত দখলমুক্ত রাখা, ট্রাফিক আইন জোরদার করা, সড়কে আলোকসজ্জা বৃদ্ধি করার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি।
এ ছাড়া সড়ক দুর্ঘটনা কমানোর দায়িত্বরত প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনার ওপরও জোর দেন যাত্রী কল্যাণ সমিতি।
যাত্রী কল্যাণ সমিতির দুর্ঘটনা পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে ২০২৪ সালে ৬ হাজার ৩৫৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৮ হাজার ৫৪৩ জন নিহত এবং ১২ হাজার ৬০৮ জন আহত হয়েছে। রেলপথে ৪৯৭টি দুর্ঘটনায় ৫১২ জন নিহত এবং ৩১৫ জন আহত হয়েছে।
নৌপথে ১১৮টি দুর্ঘটনায় ১৮২ জন নিহত, ২৬৭ জন আহত এবং ১৫৫ জন নিখোঁজ হয়েছে। এই সময়ে ২ হাজার ৩২৯টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ২ হাজার ৫৭০ জন নিহত ও ৩ হাজার ১৫১ জন আহত হয়েছে, যা মোট দুর্ঘটনার ৩৬ দশমিক ৬২ শতাংশ, নিহতের ৩০ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ ও আহতের ২৪ দশমিক ৯৯ শতাংশ। সড়ক, রেল ও নৌপথে সর্বমোট ৬ হাজার ৯৭৪টি দুর্ঘটনায় ৯ হাজার ২৩৭ জন নিহত এবং ১৩ হাজার ১৯০ জন আহত হয়েছে। চলতি বছর দুর্ঘটনায় ক্ষতির হার কমে আসবে বলে মনে করছেন বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি।