বরযাত্রী উদ্ধারে গিয়ে ওসি অবরুদ্ধ, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করল সেনা সদস্যরা

‘গেটের টাকা’, ‘নরম ভাত পরিবেশন’কে কেন্দ্র করে উত্তেজনা, ধাক্কাধাক্কি ও ভাঙচুরের ঘটনায় কনের বাড়িতে আটক বরপক্ষের লোকজনদের উদ্ধার করতে গিয়ে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নিজেই ফোর্সসহ অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন। একপর্যায়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে এবং উদ্ধার করা হয় ওসিসহ সংশ্লিষ্টদের।
আজ রোববার (৬ এপ্রিল) সকালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর গাইবান্ধা ক্যাম্পের সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার মো. ওয়াজেদ হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অবরুদ্ধ হওয়ার ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করে প্রশাসন মামলার পর বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রকাশ হতে থাকে।
জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার (৩ এপ্রিল) দিবাগত রাতে সুন্দরগঞ্জ উপজেলার ছাপড়হাটী ইউনিয়নের পশ্চিম ছাপড়হাটী হাজিপাড়া গ্রামে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করতে গিয়ে বরপক্ষের লোকজনের সঙ্গে কনে পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ওইদিন কনে পক্ষের লোকজন বরসহ কয়েকজনকে অবরুদ্ধ করে রাখেন।
পরদিন শুক্রবার (৪ এপ্রিল) অভিযোগ পেয়ে থানা পুলিশ অবরুদ্ধ বর ও তাদের লোকজনকে উদ্ধার করতে গিয়ে নিজেরাই অবরুদ্ধ হন। সুন্দরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ঘটনাস্থলে নিজে গেলে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। এ সময় কনে পক্ষের লোকজন পুলিশকে লক্ষ্য করে ঢিল ছুড়তে শুরু করে এবং একপর্যায়ে ওসিকেও অবরুদ্ধ করে ফেলে। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে ওসিসহ ফোর্স অন্য বাড়িতে আশ্রয় নেন, কিন্তু সেখানেও তাদের ঘিরে রাখে কনে পক্ষের লোকজন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে রাত ১টার পর সেনাবাহিনীর একটি দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে বরপক্ষের লোকজন, ওসিসহ পুলিশ সদস্যদের উদ্ধার করেন।
স্থানীয়রা জানায়, পশ্চিম ছাপড়হাটী হাজিপাড়া গ্রামের প্রবাসী মো. দুখু মিয়ার স্কুলপড়ুয়া মেয়ের সঙ্গে পাশের রামজীবন ইউনিয়নের মো. আয়নাল হকের ছেলে মো. সবুজ সরকারের (২৮) বিয়ে হয়। শুরু থেকেই গেটের টাকা নিয়ে কিছুটা টানাপোড়েন চলছিল। এরপর খাবার পরিবেশনের সময় ভাত নরম হওয়ায় ক্ষোভে ফেটে পড়ে বরপক্ষ। একে একে তারা ভাতের প্লেট ছুড়ে ফেলেন, চেয়ার ভাঙচুরসহ লোকজনের ওপর হামলা চালায়।
কনের বাবার অনুপস্থিতিতে অনুষ্ঠান তদারকির দায়িত্বে থাকা কনের জ্যাঠা পরিস্থিতি শান্ত করতে গেলে বরপক্ষের একাংশ তাঁর কলার ধরে মাটিতে ফেলে মারধর করে। স্থানীয় লোকজন এগিয়ে এলে অধিকাংশ বরযাত্রী পালিয়ে যান, তবে বরসহ কয়েকজনকে আটক করে এলাকাবাসী।
এ বিষয়ে সেনাবাহিনীর সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার মো. ওয়াজেদ হোসেন বলেন, ‘ওসি সাহেব ফোন করেছিলেন, আমরা দায়িত্ববোধ থেকে ঘটনাস্থলে গিয়ে ওসিসহ সবাইকে উদ্ধার করেছি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর গ্রামবাসীদের এমন আচরণে আমি হতভম্ব।’
সুন্দরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবদুল হাকিম আজাদ বলেন, ‘বিয়ের বাড়িতে বরপক্ষের তিনজন আটকা ছিলেন। তাঁদের উদ্ধারে গেলে আমাদের লক্ষ্য করে ঢিল ছোড়া হয়। আমি পেছনে পড়ে গিয়ে পাশের একটি বাড়িতে আশ্রয় নেই। পরে ওই বাড়িটিও ঘিরে ফেলে উত্তেজিত জনতা। এ বিষয়ে সুন্দরগঞ্জ থানায় মামলা হয়েছে।’