আ.লীগে সাকিবের যোগদান কেবল ভুল নয়, বরং বিশ্বাসঘাতকতা : প্রেস সচিব

জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের আওয়ামী লীগে যোগদানের সিদ্ধান্ত শুধু একটি ভুল পদক্ষেপই নয়, বরং এটি বিশ্বাসঘাতকতা ছিল—এমন মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
গতকাল বুধবার (১৬ এপ্রিল) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নিজের ভেরিফায়েড আইডিতে দেয়া এক পোস্টে শফিকুল আলম এ কথা বলেন।
ফেসবুকের ওই পোস্টে প্রেস সচিব লেখেন, ‘সাকিব আল হাসানের রাজনীতিতে প্রবেশের সিদ্ধান্ত স্বভাবতই ভুল ছিল না। প্রতিটি নাগরিকের রাজনৈতিক সক্রিয়তায় অংশগ্রহণ করার, এমনকি রাজনৈতিক ক্যারিয়ার গড়ে তোলার অধিকার রয়েছে। কিন্তু মুখ্য বিষয়টি হলো তিনি রাজনীতিতে যোগদান করেছেন কি না তা নয়, বরং তিনি কার সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তা নিয়ে।’
শফিকুল আলম লেখেন, ‘যখন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বের বিরুদ্ধে ব্যাপকভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ ছিল—যেমন গণহত্যা, জোরপূর্বক গুম, নির্বিচারে গ্রেপ্তার, বিরোধী দলের সদস্যদের বিরুদ্ধে মিথ্যা আইনি অভিযোগ, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, পদ্ধতিগত দুর্নীতি, এমনকি ব্যাংক ডাকাতি; সাকিব নৈতিকভাবে অগ্রহণযোগ্য একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। এটি কেবল একটি রাজনৈতিক পদক্ষেপ ছিল না, এটি ছিল কঠোর আন্তর্জাতিক তদন্তের অধীনে থাকা একটি শাসন ব্যবস্থার প্রতি নীরব সমর্থন।’
প্রেস সচিব আরও লেখেন, ‘সাকিব কেবল জনসাধারণের মনোভাব ভুল বোঝেননি, তিনি তার সিদ্ধান্তের নৈতিক গুরুত্ব উপেক্ষা করেছিলেন। এটি দুটি বিষয়ের একটির ইঙ্গিত দেয়—হয় গভীর রাজনৈতিক সরলতা অথবা আরও খারাপ কিছু, যা ব্যক্তিগত লাভের জন্য পরিচালিত সুযোগসন্ধান। যা এটিকে আরও ভয়াবহ করে তোলে, তা হলো তার নীরবতা।’
‘বিশেষ করে, তার সরকার এবং তার নিজের শহর মাগুরায় তার সমর্থকদের দ্বারা পরিচালিত সহিংসতা এবং হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে নীরবতা। মাগুরায় বেশ কয়েকজন বিরোধী কর্মীকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল, তবুও সাকিব কিছুই বলেননি। কোনো নিন্দা নেই, ন্যায়বিচারের জন্য আহ্বানও অনুপস্থিত। কোনো ক্ষমা প্রার্থনা নেই। তার নীরবতা কেবল হতাশাজনক ছিল না, এটি বধিরতা ছিল’, যোগ করেন শফিকুল আলম।

ওই পোস্টে প্রেস সচিব আরও লেখেন, ‘সাকিব বাংলাদেশের সর্বকালের সবচেয়ে প্রতিভাবান ক্রিকেটার হতে পারেন। কিন্তু প্রতিভা ও জাতীয় দলের হয়ে পারফর্ম করা কিন্তু দায়মুক্তি দেয় না। জাতিসংঘ কর্তৃক অভিযুক্ত এমন একটি সরকারের পাশে দাঁড়িয়ে তিনি দেশটির সাম্প্রতিক ইতিহাসের কিছু অন্ধকারতম অধ্যায়ের সূচনা করেছেন, যে দলের বিরুদ্ধে তার নিজের জনগণের সঙ্গে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ রয়েছে।’
শফিকুল আলম লেখেন, ‘আশা করা যেতে পারে, একদিন তিনি (সাকিব) হয়তো জাতিসংঘের ১২৭ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনটি পড়বেন, যেখানে তার রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বে সংঘটিত নৃশংসতার ঘটনা নথিভুক্ত করা হয়েছে।’
প্রেস সচিব শফিকুল আলম লেখেন, ‘এই মুহূর্তে, তার কর্মকাণ্ডের সবচেয়ে যুক্তিসঙ্গত ব্যাখ্যা হলো লোভ। তার রাজনৈতিক পদক্ষেপে বিতর্কিত ব্যক্তিত্বদের সঙ্গে তার সম্পর্ক, সবকিছু একই দিকে নির্দেশ করে; সেটি হলো ব্যক্তিগত লাভ, জনসেবা নয়।’
সর্বশেষে প্রেস সচিব লেখেন, ‘একদিন সাকিবকে ফিরে আসতে হতে পারে। সম্ভবত তখন তিনি সত্যের মুখোমুখি হবেন আর জানবেন আওয়ামী লীগে তার যোগদানের সিদ্ধান্ত কেবল একটি ভুল পদক্ষেপই ছিল না, বরং বিশ্বাসঘাতকতা ছিল।’