কারখানা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে শ্রমিকের আত্মহত্যা

গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার মৌচাক এলাকায় মন্ডল গ্রুপের মন্ট্রিমস কারখানা কর্তৃপক্ষের ‘মানসিক নির্যাতন’ ও ‘স্বেচ্ছাচারিতা’র বিরুদ্ধে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে ‘আত্মহত্যা’ করেছেন এক শ্রমিক। এ ঘটনার পর থেকে কারখানা ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।
নিহত ওই শ্রমিকের নাম মোহাম্মদ ইদ্রিস আলী (২৩)। তিনি স্থানীয় নিশ্চিন্তপুর এলাকায় বসবাস করতেন এবং কারখানার কার্টন সেকশনে কাজ করতেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) দিনগত রাত ১২টার দিকে ইদ্রিস আলী ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে বিষাক্ত কেমিক্যাল খায় বলে জানা গেছে। পরে রাত সাড়ে তিনটার দিকে তার মৃত্যু হয়।
মৃত্যুর আগে ওই শ্রমিক ফেসবুকে দেওয়া স্ট্যাটাসে লিখেন, মন্ডল গ্রুপ মন্ট্রিমস লিমিটেড এখানে এক বছর যাবৎ চাকরি করি। কিছু লোক আসার তিন মাস এবং ছয় মাস হওয়ার পর তাদেরকে স্থায়ী করে। কিন্তু আমাকে করে না।
কারখানার দুইজন ব্যক্তির নাম উল্লেখ করে ইদ্রিস আলী আরও লিখেন, ওরা মানুষকে মানুষ মনে করে না। তারা মনে করে ওরা সোনার তৈরি, আমরা মাটির তৈরি। আমি আজকে সুইসাইড করব। এই পৃথিবীর মানুষ বড়ই নিষ্ঠুর। আপনারা এর বিচার করবেন।
নিহতের স্বজন ও কারখানা শ্রমিকরা জানান, ইদ্রিস আলী এক বছর হলো ডেইলি বেসিকে কাজ করতেন ওই কারখানায়। অনেককে স্থায়ী করা হলেও তাকে করা হয়নি। এ ছাড়াও কর্তৃপক্ষ তাকে বকাঝকা করে। পরে তিনি কেমিক্যাল খেয়ে আত্মহত্যা করেন। প্রথমে তাকে সফিপুর তানহা হাসপাতালে নেওয়া হলে তারা ভর্তি করেনি। গাজীপুর সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে মারা যান ইদ্রিস।
নিহত শ্রমিকের স্ত্রী হাসি আক্তার মুঠোফোনে বলেন, আমার স্বামী মারা গেছে। এর বেশি কিছু আমি বলতে পারবো না।
নিহতের বোন জামাই বাবু বলেন, ইদ্রিস অনেকদিন হলো মন্ট্রিমস কারখানায় কাজ করে। ওর সঙ্গের সবাইকে চাকরিতে স্থায়ী করলেও কর্তৃপক্ষ ওকে স্থায়ী করেনি। অসুস্থ থাকার কারণে ৬টায় কারখানায় হতে বের হয়। এজন্য পরের দিন ম্যানেজমেন্ট হারুন ও কামরুল তাকে রুমে ডেকে বকাঝকা করে। পরে দুঃখ যন্ত্রণায় আত্মহত্যা করেছে।

সফিপুর তানহা হাসপাতালের ম্যানেজার মো. মোস্তফা জানান, গুরুতর অসুস্থ হওয়ায় একজন শ্রমিককে হাসপাতালটিতে আনা হয়েছিল। অবস্থার বেগতিক দেখে তাকে সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছিল।
কারখানার এডমিন ম্যানেজার মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে প্রতিবেদককে সংবাদটি প্রচার না করার অনুরোধ জানান।
মৌচাক পুলিশ ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সেলিম জানান, কারখানা থেকে ফোন দিয়ে জানানো হয়েছে একজন শ্রমিক মারা গেছে। যার কারণে কারখানাটি পরিদর্শনে এসেছি। এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।