সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের মূলস্রোতে ফিরিয়ে আনার ওপর দুই উপদেষ্টার গুরুত্বারোপ

সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের সমাজের মূলস্রোতে ফিরিয়ে আনার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক ই আজম বীর প্রতীক এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক উপদেষ্টা শারমীন এস মুর্শিদ।
শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) দুপুরে চট্টগ্রাম মেট্টোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) আয়োজিত “পথশিশুদেরকে সমাজ ও রাষ্ট্রের মূল ধারায় ফেরানো” শীর্ষক বিশেষ আলোচনা সভায় তারা এ গুরুত্বারোপ করেন।
এর আগে, উপদেষ্টাগণ চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে সমন্বিত শিশু পুনর্বাসন কেন্দ্র এবং সরকারি শিশু সদন, শিশু ও কিশোরীদের নিরাপদ হেফাজত কেন্দ্র পরিদর্শন করেন।
আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপদেষ্টা ফারুক ই আজম বলেন, সমাজের একটি শ্রেণিকে বঞ্চিত রেখে সুন্দর সমাজ গঠন সম্ভব নয়। আজকের এ আয়োজনের কারণে তারা আমাদের সঙ্গে মিশতে পেরেছে, মনের অনুভূতি প্রকাশ করতে পেরেছে। আমরা চাই তাদেরকে হৃদয়ের উত্তাপে আপন করে নিতে। কারণ আমরা সবাই এ দেশের মানুষ, মৌলিক অধিকার পাওয়ার অধিকার আমাদের সকলের। সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের অধিকার নিশ্চিতে সরকারও বদ্ধপরিকর। শিক্ষা, খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার মাধ্যমে তাদের সমাজের সঙ্গে আর্ও বেশি সম্পৃক্ত করতে হবে।
কবিতার পঙ্ক্তি উল্লেখ করে ফারুক ই আজম আরও বলেন, “আমি যারে পশ্চাতে রেখে এসেছি, সে আমারে পশ্চাতে টানিছে”। সমাজ যাদের হাতে নিরাপদ হবে, যাদের হাতে সাবলীল থাকবে, যাদের দ্বারা সমাজ প্রস্ফুটিত হবে তাদেরকে আমরা পেছনে ফেলে এসেছি। তাদের জন্য না রেখেছি খেলাধুলার সুযোগ ও স্নেহ-ভালোবাসা, না রেখেছি জীবিকা সহায়ক আয়োজন। সমাজের এ পরিত্যাজ্যতা পথশিশুদের মনে সংক্ষুব্ধতা তৈরি করেছে বলে আমি মনে করি।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মহিলা ও শিশু বিষয়ক এবং সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ বলেন, যে দেশ শিশুদের সুরক্ষিত রাখতে পারে না, সে দেশকে আমরা সফল বলতে পারি না। আমার দৃষ্টিতে বাংলাদেশ হতে হবে শিশুদের জন্য।
শারমীন এস মুরশিদ আরও বলেন, দরিদ্র শিশুদের বিনামূল্যে সরকারি স্কুলে শিক্ষা, বসবাসের জায়গা করে দেয়া, সুস্বাস্থ্যের জন্য চিকিৎসার ব্যবস্থা করা এবং তাদের জীবনমান উন্নয়ন নিশ্চিত করতে সরকারের পাশাপাশি এলাকার কমিউনিটির মাধ্যমে সবাইকে সম্মিলিতভাবে দায়িত্ব নিয়ে কাজ করতে হবে। তাহলে সারা পৃথিবী জানবে বাচ্চারা নিরাপদ, বাচ্চারা সুস্থ এবং বাচ্চারা গড়ে উঠেছে একটি দায়িত্বশীল পরিমণ্ডলে।
সিএমপি কমিশনার হাসিব আজিজের সভাপতিত্বে চসিক মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন, বিভাগীয় কমিশনার ড. মো. জিয়াউদ্দীন, ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামছুল আলম, চট্টগ্রাম রেঞ্জ ডিআইজি আহসান হাবীব পলাশ, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী নুরুল করিম, দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক প্রমুখ বক্তৃতা করেন। এরপর সুবিধা বঞ্চিত কিশোরদের সঙ্গে মধ্যাহ্নভোজে অংশগ্রহণ করেন এবং শিশু কিশোরদের হাতে উপহার সামগ্রী তুলে দেন অতিথিরা।
এর আগে সকালে হাটহাজারী শিশু পুনর্বাসন কেন্দ্রে গিয়ে উপদেষ্টাগণ সেখানকার শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন এবং তাদের সাংস্কৃতিক পরিবেশনা দেখে মুগ্ধ হন। এসময় শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে তারা দিক নির্দেশনামূলক বক্তব্য প্রদান করেন।
পরবর্তীতে দুই উপদেষ্টা হাটহাজারীর ফরহাদাবাদ শিশু সদন, শিশু ও কিশোরীদের নিরাপদ হেফাজত কেন্দ্র পরিদর্শন করেন। সেখানকার ভেতরের পরিবেশ দেখে চরম অসন্তোষ প্রকাশ করেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ। এ সময় তিনি কেন্দ্রের তত্ত্বাবধায়ককে প্রতিমাসে চিকিৎসক দিয়ে সকল হেফাজতিদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার ও হেফাজত কেন্দ্রের পরিবেশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করার নির্দেশ প্রদান করেন।