মানিকগঞ্জে ভিন্ন গ্রুপের রক্ত পুশ, রোগীর মৃত্যু

মানিকগঞ্জ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যায় চিকিৎসাধীন মো. বিল্লাল নামের এক রোগীর দেহে ‘ও’ পজিটিভ রক্তের পরিবর্তে ‘বি’ পজিটিভ রক্ত পুশ করার ঘটনা ঘটেছে। পরে ওই রোগীর মৃত্যু হয়।
গতকাল শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) বিকেলে ৪টার দিকে ওই রোগীর শরীরে ভিন্ন গ্রুপের রক্ত পুশ করার ঘটনা ঘটে। পরে রাত ১১টার দিকে তিনি মারা যান।
মো. বিল্লাল মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার খাগড়াকুড়ি গ্রামের বাসিন্দা। গত বুধবার (১৬ এপ্রিল) সকাল ১০টার দিকে শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা নিয়ে তিনি মানিকগঞ্জ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন।
রোগীর স্বজনরা অভিযোগ করে বলেন, ‘হাসপাতালের ব্লাড ব্যাংক থেকে আমাদের কাছে ভুল রক্ত দেওয়া হয়েছে। আমরা সেটি এনে নার্সের কাছে দেওয়ার পর নার্সরা বলে ডাক্তারের অর্ডারপত্র লাগবে। ডাক্তারের কাছে যাওয়ার পর ডাক্তার রক্ত দেখে অর্ডারপত্র দেন। এরপর নার্সরা রোগীর শরীরে সেটি পুশ করেন। এরপর থেকেই রোগীর সারা শরীর ঠান্ডা হয়ে যায়। আমরা তখনও বুঝিনি যে রোগীকে ভুল রক্ত দেওয়া হয়েছে। পরে বাইরের একজন লোক দেখে আমাদের বলে রোগীকে ভুল রক্ত দেওয়া হচ্ছে। এরপর আমরা হাসপাতালের নার্স ও ডাক্তারদের অনেক ডাকাডাকি করলেও তারা এসে রোগীর কোনো চিকিৎসা দেননি। তারা তড়িঘড়ি করে সেই রক্তের ব্যাগ ও রক্ত সংক্রান্ত কাগজপত্র নিয়ে চলে যান। পরে রাত ৮টার দিকে আরেকজন ডাক্তার এসে আমাদের রোগীকে ঢাকায় নিয়ে যেতে বলেন। আমরা বলেছি, রোগীকে ঢাকায় নেওয়ার মতো অবস্থা আমাদের নেই। এটা একটা সরকারি মেডিকেল কলেজ, আমাদের রোগীর চিকিৎসা এখানেই করেন। তারপর তারা রোগীকে আর কোনো চিকিৎসা দেননি।’
রোগীর স্বজনরা আরও বলেন, ‘এটি ভুল রক্ত নাকি সঠিক রক্ত সেটি বুঝার ক্ষমতাতো আমাদের নেই। তারা তিন জায়গায় চেক করে রক্ত দিয়েছে। এক জায়গায় ভুল হতে পারে, তিন জায়গায়তো ভুল হওয়ার কথা না। তাদের ইচ্ছাকৃত অবহেলার কারণেই আমাদের রোগীর মৃত্যু হয়েছে। আমরা এর সঠিক বিচার চাই।’
বিষয়টি নিয়ে মানিকগঞ্জ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. ইশতিয়াক আহমেদ বলেন, ‘বিকেল চারটার দিকে ডিউটিতে ছিলেন ইন্টার্ন চিকিৎসক ঐশি ও মেডিকেল অফিসার ডা. নূরজাহান। সেসময় রোগীর শরীরে ‘ও’ পজিটিভ রক্তের পরিবর্তে ‘বি’ পজিটিভ রক্ত পুশ করা হয়েছে। এরপর থেকেই তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। আমি রাত আটটায় ডিউটি শুরু করেছি। আমি ডিউটি শুরু করার পর যতটুকু সম্ভব চেষ্টা করেছি। এরপরও রোগীকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি।’
ডা. ইশতিয়াক আহমেদ আরও বলেন, ‘রোগীর শরীরে খুব বেশি রক্ত যায়নি। তবে কাগজপত্র না দেখে রক্ত পুশ করা ঠিক হয়নি। এটি একটি মারাত্মক ভুল।
রোগীর মৃত্যু সনদে মৃত্যুর কারণ উল্লেখ করা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে ওই চিকিৎসক বলেন, শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা উল্লেখ করা হয়েছে। ভুল রক্ত পুশ করার বিষয়টি উল্লেখ না করার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে এটি করা হয়েছে।
এ বিষয়ে ইন্টার্ন চিকিৎসক ঐশি ও ঘটনার সময়ে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. নূরজাহানকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। ফলে তাদের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
এদিকে মানিকগঞ্জ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. শফিকুল ইসলামের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
বিষয়টি নিয়ে মানিকগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসএম আমান উল্লাহ বলেন, ‘এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে কেউ অভিযোগ করেননি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।