ভারতে মুসলমানদের ওপর নির্যাতন গ্রহণযোগ্য নয় : শামসুজ্জামান দুদু

ভারত সম্প্রতি নিজেদেরকে সারা বিশ্বে সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র হিসেবে তুলে ধরেছে। ইসরায়েল ফিলিস্তিনের গাজায় প্রায় ৫০ হাজারের বেশি নারী, পুরুষ ও শিশুকে নির্বিচারে হত্যা করেছে। ইসরায়েলের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে ইসরায়েলের বন্ধু রাষ্ট্র ভারতেও যে হত্যাকাণ্ড হচ্ছে এটা গ্রহণযোগ্য নয় বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু।
আজ শনিবার (১৯ এপ্রিল) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে দেশ বাঁচাও, মানুষ বাঁচাও আন্দোলনের উদ্যোগে আয়োজিত ‘ভারতে মুসলিম নির্যাতন ও হত্যার প্রতিবাদে নাগরিক সমাবেশে’ প্রধান অতিথির বক্তব্যে শামসুজ্জামান দুদু এসব কথা বলেন।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, ভারত শুধু মুসলমানদেরকে হত্যা করছে তা নয়, সেই দেশের নিম্নমানের (নিচু জাতের) হিন্দু ও নানান জাতি-উপজাতির ওপরে আক্রমণ করছে। ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হচ্ছে। আমি দেশ, দল ও নিজের পক্ষ থেকে ভারতের অগণতান্ত্রিক পৈশাচিক ভূমিকার প্রতিবাদ জানাই।
বাংলাদেশে যখন মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল তখন ভারত আমাদেরকে জায়গা দিয়েছে। তারা মুক্তিযুদ্ধে আমাদেরকে সহযোগিতা করেছে। সেজন্য আমরা তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ আছি। কিন্তু সেই দেশে যখন নির্বিচারে নারী-পুরুষ এবং মুসলমানদেরকে নিশ্চিহ্ন করার উদ্দেশ্যে হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়, তখন এটি কোনোভাবেই সমর্থন করা যায় না, যোগ করেন শামসুজ্জামান দুদু।
বিএনপির এই ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, ভারত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে নিজেদেরকে দাবি করতে পারে না। বরং তারা বাংলাদেশের লুটেরা, গণহত্যাকারী, বাংলাদেশকে নিশ্চিহ্ন করার মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তি শেখ হাসিনাকে নিজ দেশে জায়গা দিয়ে নিজেরকেও ফ্যাসিস্ট প্রমাণ করেছে। ভারতকে আমরা বন্ধু রাষ্ট্র মনে করি। কিন্তু ভারত কি বাংলাদেশকে বন্ধুরাষ্ট্র মনে করে? ভারত যা করছে, তাতে ভারতকে বাংলাদেশের বন্ধু রাষ্ট্র বলা খুব কঠিন।
শামসুজ্জামান দুদু আরও বলেন, আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। ভারত আমাদেরকে নানাভাবে উসকানি দিচ্ছে। ভারত এ দেশে গণতন্ত্র বিনাশী শক্তিকে শুধু ক্ষমতায় রাখেনি, এ দেশের নির্বাচন ব্যবস্থাকেও ধ্বংস করেছে। ভারত শেখ হাসিনাকে দিয়ে তিনটা নির্বাচনের মাধ্যমে প্রমাণ করেছিল বাংলাদেশে কোনো নির্বাচনি ব্যবস্থা নেই। তিনি (শেখ হাসিনা) নির্বাচনের নামে জালিয়াতি করেছেন। তিনি গণতন্ত্র ধ্বংসের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশকে সকল অর্থে ভারতের ক্রীতদাসে পরিণত করেছিলেন। হয়ত আরেকটু সময় পেলে বাংলাদেশকেও ভারতের সঙ্গে যুক্ত করে ফেলতো।
বিএনপির এই ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, আমরা ফ্যাসিস্টকে রুখে দিয়েছি। আমাদের দেশে তার (শেখ হাসিনা) জায়গা হয়নি। তাকে আমরা তাড়িয়ে দিয়েছি। সে জীবন বাঁচানোর জন্য শুধু ভারত পালায়নি, তার আসল ঠিকানাই হচ্ছে ভারত। আমরাতো হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকেও পরাজিত করেছিলাম। কিন্তু সে ভারতে যায়নি। সে জেলখানায় গিয়েছিল। ভারত বলছে, শেখ হাসিনাকে রক্ষা করার জন্য তারা জায়গা দিয়েছে। মূলত রক্ষা নয়, শেখ হাসিনার আদর্শ হচ্ছে ভারত এবং তার ঠিকানাও ভারত। সেজন্য সে ভারতে গিয়েছে। তাকে জায়গা দিয়ে ভারত নিজেদেরকে গণতন্ত্রের স্বপক্ষের শক্তি বলে কখনো দাবি করতে পারে না। একজন ফ্যাসিস্ট শুধু ফ্যাসিস্টের সঙ্গেই থাকতে পারে।
সাবেক এই সংসদ সদস্য বলেন, বাংলাদেশকে ধ্বংস করার জন্য নানাভাবে, নানা ধরনের ষড়যন্ত্র হচ্ছে। সেজন্য আমি বর্তমান সরকারের প্রতি আহ্বান জানাব, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আপনাদের প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পূর্ণ করে, এ দেশে একটি রাজনৈতিক সরকার প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন। যেটা বিএনপি বারবার আপনাদেরকে বলেছে। সেই উদ্যোগ না নিলে, জনগণকে ঐক্যবদ্ধ রাখা কঠিন হবে। আর জনগণ ঐক্যবদ্ধ না থাকলে ভারতের জন্য সুবিধা হবে। সেজন্যে সকল ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় মানুষকে ভোটাধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে। মানুষের পছন্দের ব্যক্তিকে নির্বাচিত করার ক্ষমতা দিতে হবে। সেই নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে একটি গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে, যা দেশকে রক্ষা করতে পারবে এবং মানুষকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে পারবে।
এ সময় ‘দেশ বাঁচাও মানুষ বাঁচাও’ আন্দোলনের সভাপতি কে এম রকিবুল ইসলাম রিপনের সভাপতিত্বে ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আরিফা সুলতানা রুমার উপস্থিতিতে নাগরিক সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান লায়ন ফারুক রহমান, জাগপার সহসভাপতি রাশেদ প্রধান, মুক্তিযোদ্ধা দলের সাংগঠনিক সম্পাদক লায়ন মিয়া মো. আনোয়ার, কৃষকদলের সাবেক দপ্তর সম্পাদক এস কে সাদি প্রমুখ।