সংস্কারের সুযোগ হাতছাড়া করা উচিত নয় : আলী রীয়াজ

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেছেন, সংস্কারের যে সুযোগ তৈরি হয়েছে তা কোনো অবস্থাতেই হাতছাড়া করা উচিত নয়।
আজ শনিবার (২৬ এপ্রিল) সকালে জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হলে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর প্রতিনিধি দলের সঙ্গে আলোচনার শুরুতে তিনি এ কথা বলেন।
আলী রীয়াজ বলেন, ‘আমরা এক ঐতিহাসিক মুহূর্তে আছি। আমাদের জন্য এই সুযোগ তৈরি করে দেওয়া সাহসী শহীদদের কাছে আমরা ঋণী। এটিকে অবশ্যই হাতছাড়া করা উচিত নয়।’
আলী রীয়াজ আরও বলেন, এই সুযোগকে এমন একটি বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য কাজে লাগানো উচিত, যেখানে কেউ নিপীড়নের মুখোমুখি হবে না এবং কাউকে বিচারবহির্ভূত শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে না।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমরা আলোচনা করব এবং সংলাপের মাধ্যমে আমাদের লক্ষ্য হলো একটি জাতীয় ঐকমত্যে পৌঁছানোর দিকে এগিয়ে যাওয়া।’
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের ভাইস চেয়ারম্যান আরও বলেন, ‘এই প্রক্রিয়ায় আমরা সবাই একসঙ্গে আছি। একটি সম্মিলিত প্রচেষ্টা চালাচ্ছি। এটি কোনো একক রাজনৈতিক দলের বিষয় নয়। প্রকৃতপক্ষে, এটি কেবল রাজনৈতিক দলের বিষয় নয়—এটি সকলের সঙ্গে সম্পর্কিত। আমরা জাতির আকাঙ্ক্ষা প্রতিফলিত করার চেষ্টা করছি।’
প্রয়োজনে আলোচনা অব্যাহত থাকবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সকলের লক্ষ্য একই। আমরা সম্মিলিতভাবে চেষ্টা করছি এবং সামষ্টিক সাফল্য আমাদের আন্তরিক যৌথ প্রচেষ্টার উপর নির্ভর করছে।’
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আলোচনায় জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহেরের নেতৃত্বে ১০ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল অংশগ্রহণ করে।
অধ্যাপক আলী রীয়াজের সভাপতিত্বে সকাল সাড়ে ১০টায় আলোচনা শুরু হয়।
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারের সঞ্চালনায় আজকের আলোচনায় ঐক্যমত্য কমিশনের সদস্য সফর রাজ হোসেন, বিচারপতি এমদাদুল হক, ড. বদিউল আলম মজুমদার এবং ড. ইফতেখারুজ্জামান উপস্থিত ছিলেন।
জামায়াতের প্রতিনিধিদলের সদস্যদের মধ্যে ছিলেন—দলটির সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান, এএইচএম হামিদুর রহমান আজাদ ও এহসানুল মাহবুব জুবায়ের। এছাড়া ছিলেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য সাইফুল ইসলাম খান মিলন, অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমির নূরুল ইসলাম বুলবুল ও অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের গৃহীত রাষ্ট্রীয় সংস্কার উদ্যোগের বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য তৈরির জন্য চলতি বছরের ২০ মার্চ থেকে ঐকমত্য কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ধারাবাহিক আলোচনা শুরু করে।
কমিশন ইতিমধ্যে বিএনপি এবং জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-সহ ১৫টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করেছে।

চলতি বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত এই কমিশনকে গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারের ওপর একটি ঐক্যবদ্ধ জাতীয় অবস্থান তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
প্রাথমিক পর্যায়ে এটি পাঁচটি সংস্কার কমিশনের মূল সুপারিশগুলো প্রস্তুত করেছে। এর মধ্যে রয়েছে—সাংবিধানিক, জনপ্রশাসন, নির্বাচনী, বিচার বিভাগীয় এবং দুর্নীতিবিরোধী সংস্কারগুলো।
মূল সুপারিশগুলোর ওপর মতামত চেয়ে ৩৯টি রাজনৈতিক দলের কাছে এর স্প্রেডশিট পাঠানো হয়েছে। এখন পর্যন্ত ৩৪টি দল তাদের মতামত জানিয়েছে।
কমিশন মে মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রথম দফার আলোচনা সম্পন্ন করবে। একই মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে দ্বিতীয় দফার আলোচনা শুরু করার কথা এবং জুলাইয়ের মাঝামাঝি সময়ে একটি জাতীয় ঐকমত্যে পৌঁছানোর লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে।