গোপালগঞ্জে ব্রি হাইব্রিড ধানে খাদ্য নিরাপত্তার হাতছানি

খাদ্য নিরাপত্তার অর্থ হলো অবাধ খাদ্য সরবরাহ। সারাবছর খাদ্যের পর্যাপ্ত প্রাপ্যতা ও মানুষের খাদ্য ভোগের অধিকার। এ অধিকার নিশ্চিতে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত ব্রি হাইব্রিড ধান ৮ ব্যাপক ভূমিকা রাখছে। অধিক ফলন দিতে সক্ষম এ ধান চাষাবাদ করে কৃষক লাভবান হচ্ছেন। গোপালগঞ্জ জেলায় এ বছর ১৫ হেক্টর জমিতে ধানটির আবাদ হয়েছে। হেক্টরে এ ধান সাড়ে ১০ টন ফলন দিয়েছে।
গত বছর গোপালগঞ্জ জেলায় প্রথম ৮ হেক্টর জমিতে এ ধানের চাষ করা হয়। এ বছর ৭ হেক্টর জমিতে ব্রি হাইব্রিড ধান ৮ এর আবাদ বৃদ্ধি পেয়েছে। এই জাতের ধান দেশের খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিতের হাতছানি দিচ্ছে।
ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের গোপালগঞ্জ আঞ্চলিক কার্যালয়ের প্রধান ও মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আমিনা খাতুন এসব তথ্য জানিয়েছেন।
ড. আমিনা খাতুন আরও জানান, দেশে প্রচলিত হাইব্রিড জাতের ধানের চালের ভাত মোটা, আঠালো। তাই অধিকাংশ মানুষ হাইব্রিড চালের ভাত খেতে পছন্দ করেন না। কিন্তু ব্রি হাইব্রিড ৮ ধানের আকৃতি লম্বা ও চিকন, ভাত ঝরঝরে। খেতে খুবই সুস্বাদু। তাই এ ধানের ভাত সবার কাছে পছন্দের ও সমাধৃত। এ ধানের জীবনকাল ১৪৫ দিন থেকে ১৪৮ দিন। ভালো পরিচর্যা পেলে এ জাতের ধান হেক্টরে ১১ থেকে ১২ টন পর্যন্ত ফলন দিতে সক্ষম। ধানটিতে তেমন কোন রোগ বালাই নেই। সেচ, সার ও কীটনাশক সাশ্রয়ী।

গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার চরগোবরা গ্রামে ব্রি হাইব্রিড ধান ৮ আবাদকারী কৃষক নয়ন মালাকার ও তসিকুর রহমান খাঁ বলেন, ‘আমরা হীরা হাইব্রিড ধান-২, এসএল-৮-সহ অনেক জাতের হাইব্রিড ধানের আবাদ করে আসছি। ওইসব জাত হেক্টরে ৮ থেকে সাড়ে ৮ টন ফলন দিয়ে থাকে। কিন্তু ব্রি হাইব্রিড৮ ধান চাষাবাদ করে শতাংশে এক মনের বেশি ফলন পেয়েছি। সে হিসাবে হেক্টরে এই ধান সাড়ে ১০ টন ফলন দিয়েছে। এ ধানের চাল লম্বা। ওজনও বেশি। প্রতিটি ছড়ায় ধানের পরিমাণও বেশি পেয়েছি। জমিতে আগে এত ধান ফলেনি। এই ধান চাষাবাদে সেচ, কীটনাশক ও সার খরচ কম লেগেছে। তেমন কোনো রোগবালাই নেই। তাই কম খরচে বেশি ধান উৎপাদন করতে পেরে আমরা লাভবান হয়েছি। আমাদের দেখে অনেকেই আগামী বছর এ জাতের ধান চাষ করতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন।
ওই গ্রামের কৃষাণী বিনা বিশ্বাস ও প্রমিলা মজুমদার বলেন, ‘হাইব্রিড ধান সাধারণত মোটা হয়। এটি লম্বা ও চিকন। এ জাতের ধানের ফলনও প্রচলিত হাইব্রিডের তুলনায় অনেক বেশি। বাজারে এ ধান বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। তাই বীজ পেলে আগামী বছর এ জাতের ধান আবাদ করব।’
একই গ্রামের কৃষক বিবেক পাইক বলেন, ‘হাইব্রিড ধানের বীজ রাখা যায় না। প্রতি বছর বাজার থেকে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা কেজি দরে বীজ কিনে চাষাবাদ করতে হয়। এ বীজের মান নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। আমরা সরকারের ভর্তুকি মূল্যে মানসম্পন্ন বীজ পেলে লাভজনক ব্রি হাইব্রিড ৮ ধানের আবাদ বাড়াব।’
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাফরোজা আক্তার বলেন, ‘হাইব্রিড ধানের জাতের মধ্যে ব্রি হাইব্রিড ধান ৮ অধিক ফলনশীল। এটির চাষাবাদ সম্প্রসারিত হলে কৃষক লাভবান হবে। দেশে ধানের উৎপাদন বহুগুণে বাড়বে। দেশ ধানে সমৃদ্ধ হবে। তাই আমরা এ জাতের ধানের চাষাবাদ সম্প্রসারণে কৃষকের সাথে নিবিড়ভাবে কাজ করে যাচ্ছি।
ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের গোপালগঞ্জ আঞ্চলিক কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. রোমেল বিশ্বাস বলেন, ‘এই ধানের গাছ খাট জাতের, শক্ত। তাই হেলেপড়ার সম্ভাবনা থাকে না। রোগবালাই সহিষ্ণু। এক হাজারটি পুষ্ট ধানের ওজন ২৪ দশমিক ৩ গ্রাম। চালে অ্যামাইলোজ ২৩ দশমিক ৩ শতাংশ এবং প্রোটিন ৯ দশমিক ২ শতাংশ। দানার পুষ্টতা ৮৮ দশমিক ৬ শতাংশ। প্রতি বছর পুষ্টি সমৃদ্ধ এ ধানের আবাদ আরও বাড়াতে ভর্তুতি মূল্য ১৫০ টাকা কেজি দরে ধান বীজ সরবরাহের চিন্তা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যেই বাংলাদেশর কৃষিতে এ ধান সমৃদ্ধির আশা জাগিয়েছে। আমার এ ধারা অব্যাহত রাখব।
গোপালগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ আ. কাদের সরদার বলেন, ‘বিলবেষ্টিত গোপালগঞ্জ জেলার অন্তত ৭৮ শতাংশ জমিতে হাইব্রিড ধানের আবাদ হয়। এই ধান অধিক ফলন দিচ্ছে। এ জেলায় এ জাতের ধানের আবাদ বাড়াতে পারলে ধান উৎপাদন ব্যাপক হারে বাড়বে।’