আধা ঘণ্টার শিলাবৃষ্টিতে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি, কৃষকের মাথায় হাত

যশোরে মাত্র আধা ঘণ্টার শিলাবৃষ্টিতে বোরো ধান, পাট ও বিভিন্ন সবজির ক্ষেত ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গতকাল সোমবার (২৮ এপ্রিল) দুপুরে শুরু হওয়া হঠাৎ শিলাবৃষ্টিতে চাষিদের স্বপ্ন যেন মুহূর্তেই ভেঙে পড়ে।
দুপুর ২টা ২৫ মিনিটে শিলাবৃষ্টি শুরু হয়ে থেমে থেমে চলে বিকেল ৪টা ২০ পর্যন্ত। এই সময় ৩৫ কিলোমিটার বেগে ঝোড়ো হাওয়ার সঙ্গে পড়ে প্রচুর পরিমাণে শিলা। যশোর বিমানবন্দর সংলগ্ন আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, এ সময় ছয় মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়।
স্থানীয় কৃষকরা জানান, শিলার আঘাতে ধান ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পাকা ধানের শিষ থেকে ধান ঝরে পড়ে গেছে মাঠজুড়ে। অনেক ক্ষেতই যেন খড়ের মাঠে পরিণত হয়েছে। শুধু ধান নয়, পাটক্ষেতেও শিলার আঘাতে আগা ভেঙে গেছে। এছাড়া আম ও লিচু গাছে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
চৌগাছা উপজেলার সিংহঝুলী গ্রামের কৃষক নবীর হোসেন জানান, ‘জমির ধানগাছ দাঁড়িয়ে থাকলেও শিষে কিছুই নেই। সব মাটিতে পড়ে গেছে।’
একই গ্রামের কৃষক টনিরাজ বলেন, ‘আমার দুই বিঘা জমিতে ধান ছিল। ১৫ কাঠা কেটেছিলাম, বাকিটা কাটা হয়নি। শিলাবৃষ্টির পর দেখি একটি ধানও মাঠে নেই। এখনও জমির লিজ বাবদ ২০ হাজার টাকা বাকি।’

আলতাফ নামের আরেক কৃষক বলেন, ‘১১ বিঘা জমিতে ধান আবাদ করেছিলাম। ৪ বিঘা কাটা হয়নি, দেড় বিঘা কেটে খেতেই রেখেছিলাম, সবই শেষ। সাড়ে তিন লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।’
হৈবতপুর গ্রামের নুর আলম জানান, শিলাবৃষ্টিতে তার বাড়ির টিনের চাল ফুটো হয়ে গেছে। চুড়ামনকাটির আদর্শপাড়ায় দুটি ঘরের ছাউনি পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, সিংহঝুলী, বলিদাপাড়া, ঝাউতলা, জামালতা, জগন্নাথপুর, কয়ারপাড়া, মন্মথপুরসহ বিভিন্ন এলাকার বোরো ধান ও সবজি ক্ষেত সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির তালিকায় রয়েছে আম, লিচু, পটল, কচুসহ নানা রকম সবজিও।
বাঘারপাড়ায় বজ্রপাতে আগুন ধরে কয়েকটি মাঠে কাটা ধানের গাদা পুড়ে যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে বলে জানা গেছে।
যশোর সদর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা হাসান আলী বলেন, মাত্র কয়েক মিনিটের শিলাবৃষ্টিতে চাষিদের স্বপ্ন ভেঙে গেছে। ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ এখনও সম্ভব হয়নি।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোশাররফ হোসেন বলেন, সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে চৌগাছা উপজেলায়। সেখানে ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ ধানক্ষেত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জেলার মোট ১ লাখ ৫৭ হাজার ৫০ হেক্টর জমিতে ধান চাষ হয়েছিল, যার মধ্যে ৫১ শতাংশ জমির ধান ইতোমধ্যে কাটা হয়েছে।
মোশাররফ হোসেন আরও জানান, দুপুরের শিলাবৃষ্টিতে সদর, চৌগাছা, শার্শা ও বাঘারপাড়া উপজেলায় ৪ হাজার ৯০১ হেক্টর জমির ধান নষ্ট হয়েছে। এর মধ্যে চৌগাছায় ১ হাজার ২০৪ হেক্টর, সদরে ১ হাজার ৮৬০ হেক্টর, এবং শার্শা ও বাঘারপাড়ায় ১ হাজার ৬৫৭ হেক্টর।
উপপরিচালক মোশাররফ হোসেন বলেন, আবহাওয়া ধীরে ধীরে উন্নতি করছে। তাই চাষিদের দ্রুত পাকা ধান কেটে নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।