মোংলায় রেল সংযোগ চালু হলেও শুরু হয়নি পণ্য পরিবহণ, হতাশায় ব্যবসায়ীরা

প্রতিষ্ঠার দীর্ঘ ৭৪ বছর পর ২০২৩ সালে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্রবন্দর মোংলা রেল নেটওয়ার্কে যুক্ত হলেও এখনও এই রুট দিয়ে পণ্য পরিবহণ শুরু হয়নি। এরই মধ্যে ভারত বাংলাদেশে চলমান সব রেল প্রকল্প স্থগিত ঘোষণা করেছে। সেই স্থগিত প্রকল্পগুলোর একটি হলো খুলনা-মোংলা রেলপথ। ফলে চরম অনিশ্চয়তায় পড়েছে মোংলা বন্দরকে ঘিরে গড়ে ওঠা রেলভিত্তিক পণ্য পরিবহণ ব্যবস্থা।
দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জন্য নেওয়া অন্যতম মেগাপ্রকল্প খুলনা-মোংলা রেলপথ বাস্তবায়নে ভারত সরকার ব্যয় করেছে প্রায় ৩ হাজার ৩০০ কোটি রুপি। ২০২৩ সালের ১ নভেম্বর ভার্চুয়ালি এই রেলপথ উদ্বোধন করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরবর্তীতে, ২০২৪ সালের ১ জুন খুলনা থেকে মোংলা রুটে যাত্রীবাহী ট্রেন চালু করা হয়। সরকারের ভাষ্য অনুযায়ী, এই রেলপথ চালুর ফলে মোংলা বন্দরের কার্যকারিতা বাড়বে এবং ভারত, নেপাল ও ভুটানসহ বিভিন্ন দেশের সঙ্গে পণ্য পরিবহণ সহজ হবে।
তবে উদ্বোধনের প্রায় দেড় বছর পার হলেও এখনও পণ্যবাহী ট্রেন চালু হয়নি। এতে হতাশ মোংলা বন্দর ব্যবহারকারী ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য ছিল মোংলা বন্দর থেকে সারা দেশে এবং আন্তর্জাতিক গন্তব্যে পণ্য পরিবহণ সহজতর করা। অথচ এখন তা ব্যর্থ প্রকল্পে পরিণত হয়েছে।
মোংলা বার্থ অ্যান্ড শিপ অপারেটর অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সৈয়দ জাহিদ হোসেন বলেন, পণ্য পরিবহণের ট্রেন না থাকায় আমরা কোনো সুফল পাচ্ছি না। ব্যবসায়ীদের উপকারে আনতে হলে সরাসরি রেলযোগে পণ্য পরিবহণ চালু করতে হবে।
ব্যবসায়ী জুলফিকার আলী জানান, মোংলা বন্দর প্রতিষ্ঠার ৭৪ বছর পর ২০২৩ সালে রেল সংযোগ হওয়ায় আমরা আশাবাদী হয়েছিলাম। কারণ এতে দ্রুত ও কম খরচে পণ্য পরিবহণ সম্ভব হতো। কিন্তু দেড় বছর পরও সেই সুবিধা পাইনি, এটা খুবই দুঃখজনক।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের পরিচালক (ট্রাফিক) মো. কামাল হোসেন বলেন, রেল চলাচলের জন্য আমরা পুরোপুরি প্রস্তুত। বন্দর জেটির ভেতরে রেল সংযোগও স্থাপন করা হয়েছে। এখন সরকারের নীতিনির্ধারকদের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা।
প্রকল্প সূত্র জানায়, ২০১০ সালের ২১ ডিসেম্বর খুলনা-মোংলা রেলপথ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। এরপর একনেক অনুমোদন পেয়ে ২০১৬ সালে প্রকল্পের কাজ শুরু করে ভারতীয় প্রতিষ্ঠান ‘ইরকন ইন্টারন্যাশনাল’। প্রকল্পের আওতায় ৯১ কিলোমিটার রেলপথ, রূপসা নদীর ওপর ৫.১৩ কিলোমিটার রেলসেতু, ১০৭টি ছোট ব্রিজ, ৯টি আন্ডারপাস এবং ১১টি স্টেশন নির্মাণ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, ১৯৫০ সালের ১ ডিসেম্বর মোংলা বন্দরের যাত্রা শুরু হয়। কিন্তু ২০২৩ সালে রেল নেটওয়ার্কে যুক্ত হলেও এখনও পণ্য পরিবহণ ব্যবস্থা চালু না হওয়ায় সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তারা হতাশ হয়েছেন। তাদের দাবি, দ্রুত এই রুট চালু করে মোংলা বন্দরের সম্ভাবনাকে বাস্তব রূপ দেওয়া হোক।