বাল্যবিয়ের ছোবলে ঝরে পড়ল শতাধিক স্কুলছাত্রী

নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার ধানুড়া বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের ছাত্রীদের মধ্যে বাল্যবিয়ের প্রবণতা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। ফলে পড়াশোনা ছেড়ে যাচ্ছে একের পর এক শিক্ষার্থী। গেল চার বছরে স্কুলটির ১০৬ জন ছাত্রী বাল্যবিয়ের কারণে বিদ্যালয় ত্যাগ করেছে। এতে শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার হার ব্যাপকভাবে বেড়েছে, যা বিদ্যালয়টির টিকে থাকার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বিদ্যালয় সূত্র জানায়, চাপিলা ইউনিয়নের ধানুড়া, চন্দ্রপুর, শ্যামপুর, পুঠিমারী ও ওয়াপদাবাজার এলাকার মেয়েরা এই বিদ্যালয়ে পড়ে। অধিকাংশ ছাত্রীর পরিবারই নিম্নআয়ের কৃষক ও দিনমজুর। দারিদ্র্য, কুসংস্কার ও শিক্ষার প্রতি উদাসীনতার সুযোগে অল্প বয়সেই মেয়েদের বিয়ে দিয়ে দিচ্ছে অভিভাবকরা।
বিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বলছে, ২০২২ সাল থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছিল ২০৩ জন ছাত্রী। কিন্তু অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত টিকেছে মাত্র ১২৩ জন। বাকি ৮০ জন ছাত্রী বাল্যবিয়ের কারণে বিদ্যালয় ছেড়ে দিয়েছে। এ ছাড়া ২০২৫ সালের এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার জন্য ফরম পূরণ করেছিল ২৫ জন ছাত্রী। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেনি ১০ জন। তাদেরও সবার বিয়ে হয়ে গেছে বলে জানায় বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
বিদ্যালয়টি ২০০০ সাল থেকে শিক্ষার্থীদের জন্য ‘মিড ডে মিল’ চালু করেছিল। সপ্তাহে এক কেজি চাল ও ২০ টাকা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করে শিক্ষকদের সহায়তায় পরিচালিত হতো এ কর্মসূচি। এতে উপস্থিতি কিছুটা বাড়লেও চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে অর্থ সংকটে তা বন্ধ হয়ে যায়।
বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, প্রতিদিন দেখি কেউ না কেউ বিয়ে হয়ে চলে যাচ্ছে। আমাদের মাঝেও ভয় ঢুকে যায়, আমার পালা কবে আসবে! ক্লাসে বান্ধবী কমে যাচ্ছে, অথচ তারা শ্বশুরবাড়িতে সংসার করছে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আলমগীর বলেন, আমরা সচেতনতা বৃদ্ধিতে সভা করছি, এলাকাভিত্তিক শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছি, এমনকি বিদ্যালয়ের খরচে ছাত্রীদের যাতায়াতের ব্যবস্থাও করেছি। তবু পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে না। অষ্টম শ্রেণিতে উঠলেই অনেক পরিবার মেয়েদের বিয়ের প্রস্তুতি নেয়।
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফাহমিদা আফরোজ বলেন, বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে। মিড ডে মিল চালুর জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহায়তা দেওয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে আরও কর্মসূচি নেওয়া হবে, যাতে পরিবারগুলো মেয়েদের বিয়ে না দিয়ে পড়ালেখা চালিয়ে যেতে উৎসাহিত হয়।