ছাত্রীদের উত্ত্যক্ত করায় শিক্ষকের বিচার দাবিতে বিক্ষোভ, প্রধান শিক্ষককে গণধোলাই

বিভিন্ন সময় অশালীন কথা বলে ছাত্রীদের উত্ত্যক্ত করতেন। এমনকি নানাসময় ছাত্রীদের কুপ্রস্তাবও দিয়েছেন। কিন্তু যথাযথ প্রমাণের অভাবে ও লোকলজ্জার ভয়ে কেউ মুখ খোলেননি। আবার কেউ বিষয়টি নিয়ে প্রধান শিক্ষকের কাছে বিচার চাইতে গেলেও বিচার পাননি। কারণ ওই শিক্ষক প্রধান শিক্ষকের ভাই। তবে এবার এক ছাত্রীকে কুপ্রস্তাব দেওয়ার অডিও ভাইরাল হওয়ার পর ওই শিক্ষকের বিচার দাবিতে ক্লাসবর্জন ও বিক্ষোভ করেছে বিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা। অপরদিকে বিক্ষোভের সময় বিদ্যালয়ে আসার পথে প্রধান শিক্ষককে গণধোলাই দিয়েছেন এলাকাবাসী।
গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলায় আজ মঙ্গলবার (৬ মে) মান্দ্রা-রাধাগঞ্জ ইউনাইটেড ইনস্টিটিউশনে এ ঘটনা ঘটে। সকাল ১০টায় প্রতিদিনের মতো শিক্ষার্থীরা সমাবেশে অংশ নেয়। সমাবেশ শেষে শিক্ষার্থীরা ক্লাসে না গিয়ে বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক সাইফুদ্দিন কাজলের পদত্যাগ ও বিচারের দাবিতে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ শুরু করে। বিক্ষোভের এক পর্যায়ে তারা মিছিল নিয়ে রাধাগঞ্জ-কুশলা সড়কে গিয়ে অবস্থান নেয়। এসময় প্রধান শিক্ষক নাসিরউদ্দিন বিদ্যালয়ের আসার সময় এলাকাবাসী তাকে গণধোলাই দেয়।
খবর পেয়ে উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) মো. মাসুম বিল্লাহ ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে শিক্ষার্থীরা তাদের সামনে প্রধান শিক্ষক নাসিরউদ্দিন ও তার ভাই সহকারী শিক্ষক সাইফুদ্দিন কাজলের পদত্যাগ এবং বিচারের দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকে।
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. মাসুম বিল্লাহ দ্রুত সময়ের মধ্যে তদন্ত পূর্বক শিক্ষক সাইফুদ্দিন কাজলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে প্রতিশ্রুতি দিলে বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীরা ক্লাসে ফিরে যায়।
জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক নাসিরউদ্দিনের ভাই বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক সাইফুদ্দিন কাজল বিভিন্ন শ্রেণির ছাত্রীদের কুপ্রস্তাব দিয়ে উত্ত্যক্ত করে আসছিলেন। বিভিন্ন সময় এসব ঘটনা জানাজানি হলেও প্রধান শিক্ষক নাসিরউদ্দিনের প্রভাবে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায়নি।
গতকাল সোমবার রাতে দশম শ্রেণির এক ছাত্রীকে মোবাইলফোনে কুপ্রস্তাব দিলে ওই ছাত্রী কৌশলে শিক্ষক সাইফুদ্দিন কাজলের কথাগুলো রেকর্ড করে অভিভাবকদের জানায়। পরবর্তীতে এই অডিও রেকর্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা ক্ষোভে ফেটে পড়ে।
ভুক্তভোগী ছাত্রীর মা এনটিভি অনলাইনকে বলেন, একজন শিক্ষক হয়ে মেয়ের বয়সী ছাত্রীকে সে কীভাবে কুপ্রস্তাব দেয়? শিক্ষক সাইফুদ্দিন কাজল দীর্ঘদিন ধরে আমার মেয়েসহ বিভিন্ন মেয়েকে কুস্তাব দিচ্ছে বলে আমার মেয়ে জানিয়েছে। এ বিষয়ে আমরা একাধিকবার প্রধান শিক্ষক নাসিরউদ্দিনকে জানালেও তিনি তার ভাইয়ের বিচার করেননি।
দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী সুরভী বলেন, শিক্ষক সাইফুদ্দিন কাজল ক্লাসে ও প্রাইভেট পড়ানোর সময় প্রায়ই ছাত্রীদের সাথে অশোভন আচরণ ও কুপ্রস্তাব দিত। আমরা প্রতিবাদ করতে চাইলে পরীক্ষায় ফেল করানোর হুমকি দিত। ভয়ে আমরা চুপ থাকতাম।
বিদ্যালয়টির সাবেক শিক্ষার্থী সাগর শেখ বলেন, আমরা বিদ্যালয়ে পড়াকালীনও শিক্ষক সাইফুদ্দিন কাজলের বিরুদ্ধে ছাত্রীদের উত্ত্যক্ত করার কথা শুনেছি। তবে আমরা তখন কোনো প্রমাণ পাইনি। এবার একটি অডিও রেকর্ডের মাধ্যমে এই লম্পট শিক্ষকের মুখোশ উন্মোচন হলো। আমরা তার পদত্যাগসহ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
এ বিষয়ে জানার জন্য বিদ্যালয়ে ও বাড়িতে গিয়ে প্রধান শিক্ষক নাসিরউদ্দিন ও তার ভাই সহকারী শিক্ষক সাইফুদ্দিন কাজলকে পাওয়া যায়নি। দুজনের মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।
কোটালীপাড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবুল কালাম আজাদ এনটিভি অনলাইনকে বলেন, বিদ্যালয়টির পরিবেশ বর্তমানে শান্ত রয়েছে। এখন পর্যন্ত আমরা কোনো অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে তদন্তপূর্বক আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. মাসুম বিল্লাহ বলেন, এ ঘটনায় উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা এস এম শাহজাহান সিরাজকে দিয়ে এক সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটিকে দুই কার্য দিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।