বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষ আওয়ামী লীগকে চায় না : মির্জা ফখরুল

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে যারা এখন মাঠে আছে কেবল তারা নয়, দেশের ১৮ কোটি মানুষ আওয়ামী লীগকে দেখতে চায় না।’
আজ শনিবার (১০ মে) বিকেলে বিএনপির তিন সহযোগী ও অঙ্গ সংগঠন যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের যৌথ উদ্যোগে চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক পলোগ্রাউন্ড মাঠে তারুণ্যের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল এসব কথা বলেন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমরা কঠিন ও অস্বাভাবিক সময় অতিবাহিত করছি। কারণ শেখ হাসিনা পালিয়ে গেছে, তাদের প্রেতাত্মারা এখনও আছে। বাংলাদেশে তাদের রাজত্ব কায়েম করার জন্য তারা এখনও ষড়যন্ত্র করছে, কিন্তু তারা সফল হবে না।’
মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘দুর্ভাগ্য আমাদের, আমরা যাদের দায়িত্ব দিয়েছি দেশকে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ফিরে নেওয়ার জন্য, তারা সঠিকভাবে এখনও কাজটি করতে পারছে না। ফলে মাঝে মাঝেই সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে, তাদের (ষড়যন্ত্রকারীদের) আরও শক্তিশালী হওয়ার সুযোগ করে দিচ্ছে।’
চট্টগ্রাম বিভাগের ১১ জেলার ৯৯ উপজেলা নেতাকর্মীরা পলোগ্রাউন্ড মাঠের সমাবেশে অংশ নেন। নেতাকর্মীরা বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, বেগম খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমানের ছবি সম্বলিত ব্যানার, ফেস্টুন দিয়ে সমাবেশস্থলে হাজির হয়ে স্লোগান দিতে থাকেন।
সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হলেও তাদের রেখে যাওয়া পেতাত্মারা আবার আওয়ামী লীগের রাজত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য এখনও দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। আমাদের তরুণদের সামনে তারা টিকে থাকতে পারবে? তাদের ষড়যন্ত্র, চক্রান্ত কি সফল হবে? হবে না। আওয়ামী লীগ স্বাধীনতার পর থেকেই জনগণের ওপর নির্যাতন চালিয়েছে, গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে একদলীয় বাকশাল প্রতিষ্ঠা করেছিল এবং সংবাদপত্রের স্বাধীনতা কেড়ে নিয়েছিল।’
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘বিগত ১৫ বছরের ফ্যাসিস্ট শাসনামলে দেশে ৬০ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে, প্রায় ২০ হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়েছে এবং ১ হাজার ৭০০ মানুষকে গুম করা হয়েছে। এই ফ্যাসিস্ট শাসকগোষ্ঠীই বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে ছয় বছর কারারুদ্ধ করে রেখেছিল এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে দেশে ফিরতে দেয়নি।’ তিনি জোর দিয়ে বলেন, এই শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থার অবসান তরুণদের গণ-আন্দোলনের কারণেই সম্ভব হয়েছে।
শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে ‘মহান পথপ্রদর্শক ও দার্শনিক’ হিসেবে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘জিয়াউর রহমান চট্টগ্রামের মাটি থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন এবং পরবর্তীতে বহুদলীয় গণতন্ত্র, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা এবং মুক্ত অর্থনীতির সূচনা করেছিলেন। দেশের পোশাক শিল্প ও বিদেশে জনশক্তি রপ্তানির মতো গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক খাতের ভিত্তিও জিয়াউর রহমান তৈরি করেছিলেন।’
সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ভূমিকার কথা উল্লেখ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের শাহাদাতের পরে গণতন্ত্রের জন্য দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ৯টা বছর পথে পথে, মাঠে ঘাটে, ঘরে ঘরে ঘুরে এরশাদকে পরাজিত করে গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে এনেছিলেন। তিনি আমাদেরকে পার্লামেন্টারি ডেমোক্রেসি দিয়েছিলেন এবং গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি তৈরির জন্য কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থাও আমাদের সংবিধানে নিয়ে এসেছিলেন।’
তরুণদের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘মাথা ঠান্ডা রেখে, সজাগ দৃষ্টিতে সব চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্রকে ব্যর্থ করে দিতে হবে। আমরা সত্যিকার অর্থে একটি সুন্দর, সমৃদ্ধ ও সম্প্রীতির বাংলাদেশ দেখতে চাই, যেখানে বাংলাদেশের পতাকা বিশ্বজুড়ে সম্মানের সঙ্গে উড়বে।’
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘বাংলাদেশে নির্বাচনি হাওয়া বইতে শুরু হয়েছে, এটা কেউ বাধাগ্রস্ত করতে পারবে না। গণতন্ত্রের পথ কেউ যাতে রুদ্ধ করতে না পারে, সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। আমরা শান্তিপূর্ণ ভাবে এগিয়ে যাব, কারো উসকানিতে পা দেওয়া যাবে না। এটা তারেক রহমানের সিদ্ধান্ত। আমরা রাজনীতিতে নতুন সংস্কৃতি সৃষ্টি করতে চাই, সহনশীল থাকতে হবে সবাইকে।’
আমীর খসরু বলেন, ‘আজকে এখানে তামিম ইকবালকে দেখে বলতে ইচ্ছে হচ্ছে, চট্টগ্রামের তরুণরা আজকে ছক্কা মেরে দিয়েছে। এই তরুণরা ফ্যাসিস্ট হাসিনা হঠানোর মূল শক্তি। ওয়াসিম আকরামের জীবন দিয়ে এ আন্দোলন সফল করেছে। সেদিন ছাত্রদল যুবদল স্বেচ্ছাসেবক দল বুক পেতে দিয়েছে গুলির সামনে। গণতন্ত্র, মানুষের মালিকানাসহ সব অধিকার ফিরে পাওয়ার জন্য লড়াই করেছে।’
বিএনপির এই শীর্ষ নেতা বলেন, ‘আমরা ১৬ থেকে ১৮ বছর আন্দোলন করেছি। মামলা, হামলা, গুম ও খুনের শিকার হয়েছি। পুলিশ হেফাজতে মৃত্যু হয়েছে অনেক নেতাকর্মীর। আমাদের নেতাকর্মীরা যার জন্য এত ত্যাগ স্বীকার করেছে, সেই গণতন্ত্র যেন কেউ জিম্মি করতে না পারে।’
এর আগে সমাবেশে উপস্থিত হয়ে বক্তব্য দেন জাতীয় ক্রিকেট দলের খেলোয়াড় তামিম ইকবাল। তিনি বলেন, ‘আমি পলিটিক্যাল কেউ না। আমি একজন স্পোর্টসম্যান। তাই আমি স্পোর্টস নিয়ে কিছু কথা বলব। একসময় চট্টগ্রাম থেকে পাঁচ থেকে ছয়জন করে ন্যাশনাল টিমে প্রডিউস করত। কিন্তু লাস্ট ১০ থেকে ১৫ বছরে সেরকম প্লেয়ার উঠে আসেনি। আমি চাইব, আগামীতে যেন উঠে আসে। কার জন্য কি প্রতিবন্ধকতা হয়েছে তা নয়। আমরা কেন ন্যাশনাল টিমে যেতে পারিনি তা দেখতে হবে।’
স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসান ও ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন নাসিরের সঞ্চালনায় সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাৎ হোসেন। প্রধান বক্তা ছিলেন যুবদলের সভাপতি আব্দুল মোনায়েম মুন্না। সভাপতিত্ব করেন স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি এস এম জিলানী।
সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ড. মাহাদী আমীন, বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান শামীম, অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়া, সহসাংগঠনিক সম্পাদক হারুনুর রশিদ, ব্যারিস্টার মীর হেলাল, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন, ছাত্রদল সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মো. এরশাদ উল্লাহ, সদস্য সচিব নাজিমুর রহমান নাজিম ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্করসহ অন্যান্যরা।