ফ্যাসিবাদের পতন হলেও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার হয়নি : নজরুল ইসলাম খান

বেঁচে থাকতে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আপস নয় মন্তব্য করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, দীর্ঘ লড়াই সংগ্রামের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদের পতন হয়েছে। কিন্তু গণতন্ত্র এখনো পুনরুদ্ধার হয়নি।
জাতীয় প্রেসক্লাবের আব্দুস সালাম মিলনায়তনে আজ রোববার (১৯ মে) এক সভায় নজরুল ইসলাম খান এসব কথা বলেন।
এসময় অন্য বক্তারা বলেন, প্রয়োজন হলে সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে আবারও মাঠে নামবো। নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র প্রতিহতকরণ ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণের দাবিতে এই সমাবেশের আয়োজন করে ১২ দলীয় জোট।
নজরুল ইসলাম খান বলেন, আমরা আওয়ামী পুনর্বাসন করছি বলে আলোচনা হচ্ছে! যেই দলটা সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত, দলের চেয়ারপারসনকে বিনা কারণে কারাগারে রেখেছে। তারেক রহমানকে নির্বাসনে রেখেছে। ছোট ভাই মালয়েশিয়ায় মারা গেছেন। বিএনপির মহাসচিবসহ এমন কোনো নেতাকর্মী নেই যার বিরুদ্ধে মামলা দেয়নি? আর আমরা আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন করছি! এটা কী সম্ভব? এসব ফাইজলামির শেষ হওয়া উচিৎ। আমরা বেঁচে থাকতে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আপস হবে? কেউ করতে গেলেও আমরা বাধা দেবো।
নজরুল ইসলাম খান আরও বলেন, দীর্ঘ ১৬ বছরের বেশি সময় ধরে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন করে যাচ্ছি। এই আন্দোলনে জাতিসংঘের রিপোর্ট অনুযায়ী ১৭০০ এর বেশি মানুষ মারা গেছে। জুলাই আন্দোলনে সহস্রাধিক মানুষ খুন হয়েছে। লাখ লাখ মানুষের নামে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। হাজারো মানুষ আহত ও অঙ্গহানির শিকার হয়েছে। অনেকেই হয়রানি ও নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এরপরও আন্দোলন করেছি। যার মূল লক্ষ্য ছিল গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করা ও ফ্যাসিবাদী সরকারের পতন ঘটানোর জন্য। শেষ পর্যন্ত ফ্যাসিবাদের পতল হয়েছেও। দলমত নির্বিশেষে দেশের সকল গণতন্ত্রকামী মানুষ এই লড়াইয়ে শরিক হয়েছিল। তবে জনগণের নির্বাচিত সরকার তথা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার হয়নি।
বিএনপির এই সিনিয়র নেতা বলেন, শহীদদের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে হলে দেশে জনগণের ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। সেজন্য কিছু মেরামত প্রয়োজন। ফলে সংস্কারের দাবি ওঠে। অবশ্য যখন কেউ সংস্কার নিয়ে কথা বলেনি তখন ২০১৭ সালে খালেদা ‘ভিশন-২০৩০’ ঘোষণা দেন। এরপর ২০২৩ সালের ১৩ জুলাই তারেক রহমান ২৭ দফা রূপরেখা ঘোষণা করেন। যেটি সকল দলের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তীতে ৩১ দফা করা হয়েছে। আজ পর্যন্ত অন্তর্বর্তী সরকার যে সংস্কার প্রস্তাব করছে সেগুলো আমাদের ৩১ দফার মধ্যে রয়েছে।
নজরুল ইসলাম খান বলেন, আমরা কখনো জনগণের ভোটে ক্ষমতায় গেলে সেই রূপরেখা বাস্তবায়ন করবো ইনশাআল্লাহ। দুইবারের বেশি কেউ প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারবেন না সেটি আমরাই প্রথম বলেছি। ক্ষমতায় ভারসাম্য আনার কথা বলেছি। কারণ আমরা চাই রাষ্ট্রটি ভালো চলুক। যাতে কেউ একক ক্ষমতার অধিকারী ও জনগণ ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য আরও বলেন, আমরা সংস্কার চাই। তবে সেটি অবশ্যই প্রয়োজন ও সক্ষমতা অনুযায়ী হতে হবে। সংবিধান সংশোধনের জন্য পরবর্তী সংসদের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। ঐকমত্য কমিশনে আমরা যারা ঐকমত্য পোষণ করেছি সেটার একটা তালিকা করে সনদ করা হোক। তাহলেই তো সমস্যা থাকার কথা না। ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন করতে বাধা কেনো? নির্বাচন দেরি কেনো হবে তার ব্যাখ্যা তো আপনাদেরকে দিতে হবে। আমরা জনগণের ভোটে নির্বাচিত সংসদ ও সরকার চাই।
সভাপতির বক্তব্যে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও ১২ দলীয় জোট প্রধান মোস্তফা জামাল হায়দার অবিলম্বে নির্বাচনি রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি জানান। মোস্তফা জামাল হায়দার বলেন, তারেক রহমানের মতো পাহাড়সম জনপ্রিয় নেতা দেশে আসতে পারছেন না একথা আমরা বিশ্বাস করি না। তার দেশে ফিরতে কোনো প্রতিবন্ধকতা থাকলে সরকারকে বলবো তা স্পষ্ট করুন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব নিয়ে কাউকে ছিনিমিনি খেলতে দেওয়া হবে না।
বাংলাদেশ এলডিপির চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেন, তারেক রহমানকে দেশে ফেরার নিশ্চয়তা দিন। কিন্তু আপানারা কোনো কথা বলেননি। নির্বাচন নিয়ে আবারো দাবি জানাতে হবে সেটি ভাবিনি। আজকে ড. ইউনূসের চারপাশে মাফিয়া চক্র ঘিরে রেখেছে। দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির চক্রান্ত চলছে। যা দেশের জন্য বিপজ্জনক। প্রেস সচিবের পদত্যাগ দাবি করছি। চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কন্টেইনার টার্মিনাল বা এনসিটি বিদেশি কোম্পানিকে দেওয়ার চক্রান্ত মেনে নেওয়া হবে না। তাহলে অনেক প্রতিষ্ঠান ও সংস্থা তো কাজ করছে না। সেসব কী বিদেশিদের হাতে তুলে দেবেন? এসব বাদ দিয়ে অবিলম্বে অক্টোবর থেকে নভেম্বর সর্বোচ্চ ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন দিন। অন্যথায় ডিসেম্বরের পর আপনাদেরকে আমরা এক মুহূর্তের জন্যও সহ্য করবো না। শেখ হাসিনাকে যখন নামিয়েছি তেমনই আপনাদেরও পরোয়া করবো না।
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও ১২ দলীয় জোট প্রধান মোস্তফা জামাল হায়দারের সভাপতিত্বে সভায় এবং বাংলাদেশ এলডিপির মহাসচিব তমিজ উদ্দিন টিটুর সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য দেন ১২ দলীয় জোটের মুখপাত্র ও এলডিপির চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম, জোটের সমন্বয়ক ও বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা প্রমুখ।