কুষ্টিয়ার কোরবানির পশু সবার নজর কাড়ছে

দেশীয় সিনেমায় ‘বাংলার ডন’ কিংবা ‘মাফিয়া ডন’ নামের চরিত্র দেখা গেলেও এবার কোরবানির গরুর নামকরণেও দেখা মিলেছে এমনই নামের। কুষ্টিয়ায় কোরবানির পশুর খামারে এই ধরনের গরুর নাম রাখায় স্থানীয়দের মাঝে কৌতূহলের সৃষ্টি হয়েছে।
কুষ্টিয়া সদর উপজেলার বড় আইলচারা গ্রামের বাসিন্দা বোরহান উদ্দিন মন্ডল ছোটবেলা থেকেই কোরবানির গরু মোটাতাজা করে তোলেন। তবে তিনি অন্য খামারিদের মতো নন। তার লক্ষ্যই হচ্ছে বিশাল আকৃতির গরু তৈরি করা। আসন্ন কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে তিনি এবার প্রস্তুত করেছেন অন্তত ১৭টি গরু। এর মধ্যে আটটি গরু তিনি এবারের ঈদে বিক্রি করবেন, বাকি গরুগুলো পরের কোরবানির জন্য রেখে দেবেন।
বিক্রির জন্য প্রস্তুত আটটি গরুর মধ্যে সবচেয়ে নজরকাড়া দুটি গরুর নাম ‘বাংলার ডন’ ও ‘মাফিয়া ডন’। কুচকুচে কালো বিশালদেহী বাংলার ডনের উচ্চতা ৭০ ইঞ্চি এবং ওজন প্রায় ৪৫ মণ। একই উচ্চতা ও গড়নের ‘মাফিয়া ডন’ গরুটিও দৃষ্টিনন্দন। প্রতিটি গরুর দাম ধরা হয়েছে ২১ লাখ টাকা।

গরুগুলোকে প্রতিদিন চারবার গোসল করানো হয় এবং নিয়মিত পশু চিকিৎসকের মাধ্যমে স্বাস্থ্যপরীক্ষাও করা হয়। গরুর খাবারের তালিকায় রয়েছে কাঁচা ঘাস, ছোলা, ডাল, ভুট্টা, সাবুদানা, খড়, বিছালী ও ভুসি। প্রতিটি গরুর পরিচর্যায় খরচ হয় প্রতিদিন ৮০০ থেকে এক হাজার টাকা। খামারটি একেবারে পারিবারিক ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হচ্ছে। পরিবারের সবাই গরুর পরিচর্যায় জড়িত।
খামারি বোরহান উদ্দিন বলেন, আমি রাসায়নিক কিছু ব্যবহার করি না। গরু সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপায়ে মোটাতাজা করি। তবে যেভাবে গরুর খাদ্যের দাম বেড়েছে, তাতে লাভ করা কঠিন হয়ে গেছে। কোরবানির বড় গরু লালনপালন আমার নেশা।

বোরহান মন্ডলের ছেলে গোলজার হোসেন বলেন, আমি প্রতিদিন বাবার সঙ্গে মিলে গরুদের পরিচর্যা করি। দিনে চারবার গোসল করানো হয়। এটি পরিশ্রমের কাজ হলেও আমার ক্লান্তি আসে না, বরং আনন্দ পাই।
স্থানীয় বাসিন্দা মোহাম্মদ পারভেজ জানান, বোরহান উদ্দিন প্রতিবছরই কোরবানির পশু পালন করেন। তার খামারের গরুগুলো অন্যান্যদের তুলনায় আলাদা ও উন্নত মানের।
জানা গেছে, কুষ্টিয়ায় কোরবানির পশু লালন-পালনের দীর্ঘ ঐতিহ্য রয়েছে। এখানে এমন খুব কম বাড়ি আছে যেখানে দুয়েকটি গরু নেই। কোরবানির ঈদকে ঘিরে পুরো জেলায় ব্যাপক প্রস্তুতি চলে। ঈদের পর খামারিরা কম দামে ছোট গরু কিনে বছরজুড়ে লালনপালন করে এবং পরবর্তী ঈদে বিক্রি করে লাভের আশায়।
কিন্তু বর্তমানে গো-খাদ্যের দাম বৃদ্ধি এবং রাজধানীতে গরু বিক্রি করে নিরাপদে টাকা নিয়ে ফিরে আসার শঙ্কা খামারিদের দুশ্চিন্তায় ফেলেছে।
জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর কুষ্টিয়া জেলার সাড়ে ১৮ হাজার খামারে প্রায় ২ লাখ গরু, ছাগল ও মহিষ কোরবানির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। এসব পশু স্থানীয় চাহিদা পূরণ করে দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হবে।

কুষ্টিয়া জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আল মামুন হোসেন মন্ডল বলেন, কোরবানির পশুর জন্য কুষ্টিয়া প্রসিদ্ধ একটি জেলা। এখানকার খামারিরা সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপায়ে পশু লালন করেন। গত বছরের তুলনায় এবার পশুর সংখ্যা বেড়েছে। দেশীয় খামারিদের তৈরি পশুতেই এবার কোরবানির চাহিদা পূরণ হবে। আশা করছি, খামারিরা ন্যায্য দামও পাবেন।
মো. আল মামুন হোসেন মন্ডল আরও বলেন, ভারতীয় গরু না এলে এবার দেশীয় খামারিরা ভালো দাম পাবেন। আর গো-খাদ্যের দাম কমলে খামারিরা লাভবান হবেন, নতুন খামার গড়ে উঠবে এবং কর্মসংস্থানও বাড়বে।