ভারি বৃষ্টি ও জোয়ারে প্লাবিত নিম্নাঞ্চল, উপকূলবাসীর দুর্ভোগ

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের অন্তত ১৪ জেলায় ভারী বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। উঁচু জোয়ারে নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ভোলা, পটুয়াখালী, বরগুনা, পিরোজপুর, বাগেরহাট, খুলনা ও সাতক্ষীরাসহ উপকূলবর্তী কয়েকটি এলাকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। টানা বৃষ্টিতে কোথাও কোথাও জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এতে দুর্ভোগে পড়েন বাসিন্দারা।
আমাদের বরিশাল প্রতিনিধি জানিয়েছেন, বরিশালে নদ–নদীর উপচেপড়া জোয়ার আর দিনভর ভারী বৃষ্টিতে নগরের বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। নিম্নচাপের প্রভাব আর টানা বৃষ্টির সঙ্গে যোগ হয় নদ-নদীর উঁচু জোয়ার। এতে নগরের ব্যস্ততম সদর রোডসহ বটতলা থেকে নবগ্রাম, চৌমাথা, বগুড়া রোড, মুনশি গ্যারেজ ও ভাটিখানাসহ অধিকাংশ এলাকার সড়কে হাঁটুপানি জমে গেছে। এ ছাড়া নগরের পলাপুর, মোহাম্মদপুর বস্তি, ধান গবেষণা এলাকা, রূপাতলী হাউজিং, কালিজিরা, দপদপিয়া এলাকার বাড়িঘরে পানি ঢুকে ভোগান্তিতে পড়েছেন বাসিন্দারা। বৈরী আবহাওয়ার কারণে বরিশাল-ঢাকা নৌপথসহ অভ্যন্তরীণ নৌপথে লঞ্চ চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বিআইডব্লিউটিএর নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের উপপরিচালক এবং বরিশাল নদীবন্দরের কর্মকর্তা মোহাম্মদ সেলিম রেজা জানান, বৈরী আবহাওয়ায় নৌবন্দরে ২ নম্বর সতর্কসংকেত থাকায় অভ্যন্তরীণ ১০টি রুটের লঞ্চ চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। বিকেলে ঢাকা-বরিশাল নৌপথের লঞ্চ চলাচলও বন্ধ রাখার নির্দেশনা জারি করা হয়।
ভোলা প্রতিনিধি জানিয়েছেন, জলোচ্ছ্বাসে ভোলার তজুমদ্দিন উপজেলার স্লুইসগেট এলাকায় বৃহস্পতিবার বিকেল চারটার দিকে বন্যা-জলোচ্ছ্বাস নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়। মনপুরা উপজেলায় কয়েকটি এলাকায় উঁচু জোয়ারে বাঁধ উপচে লোকালয়ে পানি ঢুকেছে।
এ ছাড়া বন্যা-জলোচ্ছ্বাস নিয়ন্ত্রণ বাঁধ না থাকায় সদর উপজেলার ভেলুমিয়া, ভেদুরিয়া ইউনিয়ন, দৌলতখান উপজেলার মদনপুর ইউনিয়ন, তজুমদ্দিন উপজেলার সোনাপুর, মলংচড়া ইউনিয়ন, মনপুরা উপজেলার কলাতলী ইউনিয়ন ও চরফ্যাশন উপজেলার ঢালচর, চর কুকরি-মুকরি ও মুজিবনগর ইউনিয়ন এবং সদর উপজেলার কাচিয়া ও রাজাপুর ইউনিয়নের কিছু অংশ, দৌলতখান উপজেলার মেদুয়া, ভবানীপুর, চরপাতা ও হাজীপুর ইউনিয়নের কিছু অংশ, তজুমদ্দিন উপজেলার চাঁদপুর ইউনিয়নের অংশ, লালমোহন উপজেলার পশ্চিম চর উমেদ ইউনিয়নের অংশ, বোরহানউদ্দিন উপজেলার গঙ্গাপুর ও সাঁচড়া ইউনিয়নের কিছু অংশসহ ৭৪টি চরাঞ্চলে জোয়ার ও বৃষ্টির পানিতে প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন।
ভোলার জেলা প্রশাসক মো আজাদ জাহান জানান, মনপুরা, তজুমদ্দিন ও লালমোহনে বাঁধ উপচে পানি প্রবেশের কথা জেনেছেন। পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলীদের বাঁধ সংস্কারের জন্য বলা হয়েছে। এ ছাড়া অনেক চরাঞ্চলের প্লাবিত লোকজনকে নিরাপদে আনার চেষ্টা চলছে।
পটুয়াখালী প্রতিনিধি জানান, নিম্নচাপের প্রভাবে উচ্চ জোয়ার ও ভারী বৃষ্টিতে পটুয়াখালীর বিভিন্ন নদনদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। জেলার রাঙ্গাবালী উপজেলার চালিতাবুনিয়া ও চরমন্তাজ ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন দ্বীপচর ইউনিয়নের বাসিন্দারা। অস্বাভাবিক জোয়ারে কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকত লাগোয়া নতুন সড়কটি ভেঙে ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে। উপজেলার আন্ধারমানিক নদ ও রাবনাবাদ চ্যানেলের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে তিন থেকে চার ফুট বেড়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। জোয়ারের পানিতে কলাপাড়া পৌর শহরের বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধের বাহির পাশের মাছ বাজার, পুরান বাজার, হেলিপ্যাড মাঠ, বড় কলবাড়ী, গোডাউন ঘাট, বাদুড়তলী এলাকা প্লাবিত হয়েছে।

মোংলা প্রতিনিধি জানিয়েছেন, নিম্নচাপের প্রভাবে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৫ থেকে ৬ ফুট বেশি উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হয়েছে সুন্দরবন। এ অবস্থায় বিপাকে পড়েছে বন্য প্রাণী।
খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক (সিএফ) ইমরান আহমেদ বলেন, দিনের জোয়ারে সুন্দরবনের সব নদ–নদীতে কয়েক ফুট পানি বেড়েছে। এতে সুন্দরবনের পূর্ব ও পশ্চিম অঞ্চলের অধিকাংশ এলাকা তলিয়ে গেছে।
বরগুনা প্রতিনিধি জানান, নিম্নচাপের প্রভাবে বরগুনার প্রধান পায়রা ও বিষখালী নদনদীর পানি বিপৎসীমার ৫৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বরগুনা সদর উপজেলার অংশে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৪৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়েছে। দুপুর পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় বরগুনায় ৫৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। অস্বাভাবিক জোয়ারে নদীর তীরবর্তী বড়ইতলী, পোটকাখালী, মাঝেরচর, বাওয়ালকারসহ নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।

পাউবোর বরগুনা কার্যালয়ের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী শওকত হোসেন মেহেরাজ বলেন, নিম্নচাপ ও অমাবস্যার প্রভাবে বরগুনার নদ–নদীতে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়েছে। বাঁধের বাইরের এলাকাগুলো প্লাবিত হয়েছে।