সাকিবের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা, দেশের হয়ে খেলতে পারবেন?

শেয়ারবাজার থেকে শত কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সাবেক ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর সাকিব আল হাসানের বিরুদ্ধে মামলা করেছে প্রতিষ্ঠানটি। তিনি বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক ও মাগুরা-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য।
আজ মঙ্গলবার (১৭ জুন) দুপুরে দুদকের মহাপরিচালক আক্তার হোসেন এ তথ্য জানান। দুদকের সহকারী পরিচালক সাজ্জাদ হোসেন বাদী হয়ে মামলাটি করেন।
আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর আর দেশে ফেরা হয়নি সাকিবের। ঘরের মাঠে জাতীয় দলের জার্সিতে শেষ ম্যাচ খেলতেও চেয়েছিলেন তিনি। ইতোমধ্যে করা হত্যা মামলা আর আজ দুর্নীতির মামলার পর সাকিব কী আবারও জাতীয় দলে খেলার সুযোগ পাবেন?
এমন প্রশ্নের জবাবে দুদক মহাপরিচালক বলেন, তার (সাকিব) বিরুদ্ধে আমরা দুর্নীতির মামলা করেছি। সে খেলতে পারবে কি পারবে না এটা একান্তই বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) ও ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিলের (আইসিসির) সিদ্ধান্ত। সংস্থাগুলো যদি সুযোগ দেয় তাহলে সে খেলবে।
প্রতারণার মাধ্যমে শেয়ারবাজার থেকে শত কোটি টাকা আত্মসাতের মামলায় সাকিব ছাড়া আরও ১৪ জনকে আসামি করা হয়েছে। এর আগে গতাকাল সোমবার সাকিব আল হাসানসহ ১৫ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেন আদালত।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন– সমবায় অধিদপ্তরের উপনিবন্ধক আবুল খায়ের ওরফে হিরু, তার স্ত্রী কাজী সাদিয়া হাসান, আবুল কালাম মাদবর, কনিকা আফরোজ, মোহাম্মদ বাশার, সাজেদ মাদবর, আলেয়া বেগম, কাজি ফুয়াদ হাসান, কাজী ফরিদ হাসান, শিরিন আক্তার, জাভেদ এ মতিন, জাহেদ কামাল, হুমায়ুন কবির ও তানভির নিজাম।
আসামিদের বিরুদ্ধে ২৫৬ কোটি ৯৭ লাখ ৭০ হাজার ৩০৪ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে।
মামলার এজাহারে বলা হয়, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ক্ষমতার অপব্যবহারপূর্বক দ্রুত আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার অসৎ অভিপ্রায়ে শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ সংক্রান্ত প্রচলিত আইন ও বিধি (সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অধ্যাদেশ, ১৯৬১ এর ১৭ ধারা) পরিকল্পিতভাবে লঙ্ঘনপূর্বক নিজেদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিও অ্যাকাউন্টসমূহে অসাধু, অনৈতিক ও অবৈধ উপায়ে ফটকা ব্যবসার মতো একাধিক লেনদেন, জুয়া ও গুজবের মাধ্যমে বাজারের কারচুপি করেছেন।
এজাহারে বলা হয়, পরিকল্পিতভাবে নির্দিষ্ট কিছু শেয়ার সংঘবদ্ধভাবে ক্রমাগত ক্রয়-বিক্রয়পূর্বক কৃত্রিমভাবে দাম বাড়িয়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ওই শেয়ারগুলোয় বিনিয়োগে প্রতারণাপূর্বক প্রলুব্ধ করে ব্যাপক ক্ষতিসাধন করে তাদের ২৫৬ কোটি ৯৭ লাখ ৭০ হাজার ৩০৪ টাকা আত্মসাৎপূর্বক অস্বাভাবিক রিয়ালাইজড ক্যাপিটাল গেইনের নামে অর্জিত অপরাধলব্ধ অর্থ বা প্রসিড অব ক্রাইম শেয়ারবাজার থেকে সংঘবদ্ধভাবে উত্তোলন করেছেন।
মামলায় সাকিব আল হাসানের সম্পৃক্ততা প্রসঙ্গে বলা হয়, আসামি আবুল খায়ের ওরফে হিরুর শেয়ারবাজারে কারসাজিকৃত প্যারামাউন্ট ইনস্যুরেন্স লিমিটেড, ক্রিস্টাল ইনস্যুরেন্স লিমিটেড এবং সোনালি পেপারস লিমিটেডের শেয়ারে সাকিব আল হাসান বিনিয়োগ করে বাজার কারসাজিতে যোগসাজশ করেন। সরাসরি সহায়তাপূর্বক সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কারসাজি করা শেয়ারে বিনিয়োগে প্রতারণাপূর্বক প্রলুব্ধ করে তাদের দুই কোটি ৯৫ লাখ ২ হাজার ৯১৫ টাকা রিয়ালাইজড ক্যাপিটাল গেইনের নামে অপরাধলব্ধ আয় হিসেবে শেয়ারবাজার হতে উত্তোলনপূর্বক আত্মসাৎ করেছেন।
আক্তার হোসেন আরও বলেন, তিনটি কোম্পানির শেয়ারে সাকিব আল হাসান বিনিয়োগ করেছেন। বিনিয়োগ কার্যক্রমে মার্কেট ম্যানুপুলেট করা হয়েছে। মার্কেট ম্যানুপুলেশনের সঙ্গে তিনি (সাকিব) জড়িত।
এর আগে গত এপ্রিলে সাকিবে বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। অর্থপাচার ও জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানে জন্য দুদকের উপপরিচালক মাহবুবুল আলমের নেতৃত্বে দুই সদস্যের একটি তদন্ত দল গঠন করা হয়।
ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হিসেবে ২০১৮ সালে সাকিব আল হাসানের সঙ্গে চুক্তি হয় দুদকের। এ ছাড়া হটলাইন-১০৬ উদ্বোধনকালেও সাকিবের সঙ্গে কাজ করে দুদক। বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ উঠলে ২০২২ সালে সাকিবকে আর ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর না রাখার কথা জানিয়েছিল দুদক।