শ্বশুরের হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের গ্রেপ্তার ও ভাসুরের সন্ধানে সংবাদ সম্মেলন

গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরে আকত আলী খান হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের বিচার ও শাস্তির দাবি এবং হয়রানির প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করেছে ভুক্তভোগী পরিবার। বুধবার (১৮ জুন) দুপুরে গোপালগঞ্জ মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের সভাকক্ষে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন নিহত আকত আলী খানের ছেলে সোহেল খান ও পুত্রবধূ হাসনা বেগম।
হাসনা বেগম বলেন, ৪ জুন রাত সোয়া ১১টার দিকে বাড়ির অদূরেই শোরগোল শুনতে পাই। বাড়ি থেকে বের হয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি ওই এলাকার শহিদ সরদারের নেতৃত্বে ২৫-৩০ জন লোক দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে আমার শ্বশুরকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে ও পিটিয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় ফেলে রেখে যায়। ঘটনাস্থলে থেকে উদ্ধার করে মুকসুদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাই। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
তারা আরও বলেন, খবর পেয়ে থানা পুলিশ হাসপাতালে আসে এবং ময়নাতদন্তের জন্য লাশ গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে মর্গে পাঠায়। থানায় গিয়ে আমার দেবর সোহেল শেখ বাদি হয়ে এজাহার দায়ের করেন। ওই দিন পুলিশ মামলা রেকর্ড করেনি। দুই দিন কালক্ষেপণের পর ৬ জুন থানায় মামলা রেকর্ড হয় (মামলা নং মুকসুদপুর জিআর ২০২/২৫)। উল্টো ৯ জুন প্রতিপক্ষ আমাদের বিরুদ্ধে মুকসুদপুর থানায় একটি লুটের মামলা দায়ের করে। ওই মামলায় আমাদের পরিবারসহ ৩১ জনকে আসামি করা হয়৷ ১৬ জুন ওই মামলায় আদালত থেকে জামিন পাই আমরা। ওই রাতে পুলিশ আমার ভাসুর হেলাল খানকে আটক করে। সে এখন কোথায় আছে আমরা তা জানি না। আমার শ্বশুরকে হত্যা করে আসামিরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে এবং আমাদের প্রতিনিয়ত হুমকিধমকি দিয়ে যাচ্ছে ওই বাহিনী। আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।
পুলিশ রহস্যজনক কারণে তাদের গ্রেপ্তার করছে না। অথচ আদালতের জামিন থাকা সত্ত্বেও একটা মিথ্যা লুটের মামলায় আমার ভাসুর হেলাল খানকে (নিহতের বড় ছেলেকে) পুলিশ আটক করে। আমার শ্বশুরের হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি। সেই সাথে প্রশাসনের কাছে ভাসুরের মুক্তির দাবি জানাচ্ছি।
নিহতের ছেলে ও বাটিকামারি ইউনিয়ন যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সোহেল খান বলেন, আমার বড় ভাই হেলাল খান স্থানীয় যুবদল নেতা। বিএনপির পরিবার হিসেবে আমাদের প্রতি প্রতিপক্ষের পূর্ব থেকে একটা আক্রোশ ছিল। বিগত ২০২১ সালে প্রতিপক্ষ শহীদ সরদার ও খন্দকার গ্রুপের লোকজন আমার ভাই হেলালকে মারপিট করে আহত করে। এছাড়াও প্রায় ১৫ বছর আগে আমার মা রেনু বেগমকেও ওই সন্ত্রাসী বাহিনী মারপিট করে রক্তাক্ত জখম করে। ওই সন্ত্রাসী বাহিনী একের পর এক সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে আসছে।
আমার বাবার হত্যার নেতৃত্বে থাকা শহিদ সরদার গোপালগঞ্জের ঘোনাপাড়ায় কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা দিদার হত্যা মামলার আসামি। কয়েকদিন আগে সে ওই মামলায় জামিনে মুক্ত হয়। তার ভাই সবর সরদার ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি। সহিদ সরদার ও তার ভাই লোকজন নিয়ে পূর্বপরিকল্পিতভাবে আমার বাবাকে কুপিয়ে হত্যা করে। আমরা এই হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের গ্রেপ্তার করে শাস্তির দাবি করছি।
সংবাদ সম্মেলনে বিজেপি কেন্দ্রীয় কমিটির যুব বিষয়ক সম্পাদক আবদুল্লাহ আল মামুন, নিহতের স্ত্রী রেনু বেগম, বাদশা মিয়াসহ ওই এলাকার অর্ধশতাধিক নারী পুরুষ উপস্থিত ছিলেন।
মুকসুদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তফা কামাল বলেন, মুকসুদপুরের বাহাড়া পশ্চিমপাড়ায় আকত আলী খান হত্যার ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে। মামলার তদন্ত চলছে। এছাড়া বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ তদারকি করছেন। এ ঘটনার পর ওই এলাকায় ১০ থেকে ১২টি বাড়ি ভাঙচুর হয়েছে সে বিষয়েও একটি মামলা হয়েছে। নিহতের বড় ছেলেকে আমরা গ্রেপ্তার করিনি। যেহেতু মামলাটা অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছিল। তাদের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করার জন্য তাকে আমরা এনেছিলাম।