মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় মা-নানা-দাদীকে হারাল একদিনের নবজাতক

জন্মের এক দিনও পেরোয়নি, এর মধ্যেই নিঃসঙ্গ জীবনের এক নির্মম অধ্যায় শুরু হয়েছে এক নবজাতকের। পটুয়াখালী জেলার গলাচিপা উপজেলার গোলখালী ইউনিয়নের নলুয়াবাগি গ্রামের এই শিশুটি পৃথিবীর আলো দেখার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই হারিয়েছে তার মা, নানা ও পরিবারের আরেক সদস্যকে। এখন সে নিজেই মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নবজাতক পরিচর্যা কেন্দ্রে।
শুক্রবার (২০ জুন) রাত ৮টা ৩০ মিনিটে শিশুটির জন্ম হয়। তবে জন্মের পরই তার মা মোসাদ্দিকার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে পরদিন শনিবার সকালে পরিবারের সদস্যরা তাকে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। নবজাতক, তার মা, বাবা, দাদা এবং আরও কয়েকজন স্বজন একটি অটোরিকশাযোগে রওনা দেন পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উদ্দেশে।
কিন্তু ভাগ্য যেন অন্য কিছু লিখে রেখেছিল। পথেই থমকে যায় তাদের সব স্বপ্ন। আমতলী-পটুয়াখালী মহাসড়কে একটি বাসের সঙ্গে অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান নবজাতকের মা মোসাদ্দিকা, নানা আব্দুল আলিম ও মায়ের দাদী শ্বাশুড়ি। গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন নবজাতকের বাবা জাহিদুল ইসলাম ও দাদা।
নিহতদের এক আত্মীয় মাওলানা মাহমুদুল হাসান জানান, দুর্ঘটনার পরও শিশুটা অলৌকিকভাবে বেঁচে যায়। তবে সেও নিরাপদ ছিল না। দীর্ঘক্ষণ পানিতে পড়ে ছিল, মাথায়ও আঘাত লাগে। বিকেল ৩টার দিকে তাকে ভর্তি করা হয় হাসপাতালে।
হাসপাতালের শিশু বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. শামিম ওয়াহিদ জানান, নবজাতকটির অবস্থা অত্যন্ত সংকটাপন্ন। মাথায় অভ্যন্তরীণ আঘাত ও শরীরজুড়ে সংক্রমণ তাকে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় ঠেলে দিয়েছে। তার জীবন বাঁচাতে সব ধরনের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
ডা. শামিম ওয়াহিদ আরও বলেন, জন্মের একদিনের মাথায় যে শিশু তার মায়ের কোল হারিয়েছে, পারিবারিক ভালোবাসার ছায়া থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছে, তার এই করুণ ও নিঃসঙ্গ অবস্থা যে কাউকে নাড়া দেবে।