এক যুগ ধরে শেকলে বাঁধা মিজানুর

লালমনিরহাটে প্রায় এক যুগ ধরে শেকলে বাঁধা রয়েছেন মিজানুর রহমান নামের এক যুবক। মানসিক ভারসাম্যহীন হওয়ার পর যাতে হারিয়ে না যান সেজন্য শেকলে বাঁধা রয়েছেন তিনি। তিন বছর চিকিৎসা চললেও বর্তমানে অর্থাভাবে এই যুবকের চিকিৎসাও বন্ধ রয়েছে। ছেলে হারিয়ে যাওয়ার ভয়ে বাবা-মা বাধ্য হয়ে আদরের ছেলেকে বেঁধে রেখেছেন শেকলে। চিকিৎসা ছাড়াই লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার ২৮ বছর বয়সী মানসিক ভারসাম্যহীন যুবক মিজানুর রহমানের জীবন কাটছে এরকম বন্দি অবস্থাতেই।
সরেজমিনে দেখা যায়, গত ১১ বছরেরও বেশি সময় ধরে শিকলে বাঁধা যুবক মিজানুর ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে আর বাঁধা হাত বারবার নাড়ায়। প্রথমে তাকে বেঁধে রাখা হয়েছিল পায়ে শেকল দিয়ে কিন্তু দীর্ঘদিন শেকল থাকায় সেখানে ঘায়ের সৃষ্টি হয়। তাই বর্তমানে হাতে শেকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে মিজানুরকে। শেকল খুলে দিলে মানুষের ক্ষতি করে মিজানুর। তাই মিজানুরের কৃষক বাবা আশরাফুল আলম বলেন, ‘শেকল খুলে দিলে সে হারিয়ে যায় তাই বাধ্য হয়ে আদরের ছেলেকে শেকল দিয়ে বেঁধে রেখেছি।’
জানা গেছে, আদিতমারী উপজেলার ভাদাই ইউনিয়নের ভাটাবাড়ি গ্রামের এই মানসিক ভারসাম্যহীন যুবক স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ালেখা করতেন। একদিন হঠাৎ করে পরিবারের সবার উপর অভিমান করে চলে যান রাজধানী ঢাকায়। কিছুদিন যোগাযোগ ঠিকঠাক চলছিল পরিবারের সঙ্গে। জানিয়েছিলেন ঢাকায় রিকশা চালান তিনি। কিন্তু হঠাৎ পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয় মিজানুরের। দীর্ঘদিন পরে মিজানুরের খোঁজ মেলে ঢাকাতেই। মানসিক ভারসাম্যহীন অবস্থায় ছেলেকে বাড়িতে নিয়ে আসেন বাবা-মা। লালমনিরহাটে ও রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চলতে থাকে মিজানুরের চিকিৎসা। তবে কি কারণে মিজানুর মানসিক ভারসাম্য হারালেন তা আজও জানে না পরিবারের সদস্যরা।
তিন বছর বিভিন্ন স্থানে চিকিৎসা নিলেও অর্থাভাবে দীর্ঘ আট বছর ধরে বন্ধ রয়েছে মানসিক ভারসাম্যহীন এই যুবকের চিকিৎসা। আর অন্যের অনিষ্ট যাতে না করতে পারে, জন্মদাতা বাবা তাই শত কষ্ট বুকে চেপে বেঁধে রেখেছেন আদরের সন্তানকে।
বেশ কয়েকজন প্রতিবেশির সঙ্গে এনটিভির প্রতিনিধির কথা হলে তারা জানান, সঠিক চিকিৎসা পেলে আবার স্বাভাবিক জীবন ফিরে পেতে পারে মিজানুর রহমান নামের এই যুবক। তবে প্রয়োজন সরকারি-বেসরকারি সহযোগিতা।
প্রতিবন্ধী ভাতা ভোগকারী মিজানুরকে বন্দিদশা থেকে মুক্ত করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে সাধ্যানুযায়ী চেষ্টা করার আশ্বাস দিয়েছেন লালমনিরহাট সমাজ সেবা অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোহাম্মদ মতিয়ার রহমান। আর শেকলে বাঁধা মিজানুরকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে সরকারের পাশাপাশি সমাজের বিত্তবানেরাও সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেবেন, এমন প্রত্যাশা করছেন এলাকার সবাই।