সাবেক সংসদ সদস্য বেনজিরের ফ্ল্যাট-জমি ও ব্যাংক হিসাব জব্দের নির্দেশ

ঢাকা-২০ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য বেনজির আহমেদের রাজধানীর ইস্কাটন, ধানমন্ডি ও ঢাকার ধামরাইয়ের চারটি ফ্ল্যাট ও পূর্বাঞ্চলের ১০ কাঠার একটি প্লটসহ মোট ১৯৩ শতাংশ জমি জব্দের আদেশ দিয়েছেন আদালত।
বুধবার (২৫ জুন) ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ জাকির হোসেন গালিব এই আদেশ দেন। এদিন আদালতে বেনজিরের নামে থাকা তিনটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার, একটি মোটরযান ও নয়টি ব্যাংক হিসাবও অবরুদ্ধের আদেশ দেওয়া হয়েছে।
একই সঙ্গে তার স্ত্রী সাহিনা বেগমের একটি কোম্পানির শেয়ার, একটি ডিপোজিট ও দুটি ব্যাংক হিসাবের এক কোটি ২০ লাখ ৮৬ হাজার ৫৯৩ টাকা অবরুদ্ধ করা হয়েছে। আদালত দুদকের পৃথক দুই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ আদেশ দেন।
দুদকের পক্ষে উপ-সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ জুলফিকার আবেদন দুটি করেন।
আদালতসূত্রে জানা গেছে, বেনজিরের জব্দ সম্পদের আনুমানিক মূল্য ১৪ কোটি ৮০ লাখ ৪৫ হাজার ২৮০ টাকা। শেয়ার, মোটরযান ও ৯ ব্যাংক হিসাবে আছে এক কোটি ৫৮ লাখ ৪৯ হাজার ২৮৬ টাকা।
বেনজিরের আবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকা-২০ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য বেনজীর আহমদ (৭৩) দায়িত্বে থেকে অসৎ উদ্দেশ্যে অপরাধমূলক অসদাচরণ ও ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে অসাধু উপায়ে জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ ১৭ কোটি ৯৯ লাখ ৫২ হাজার ৯৬১ টাকা মূল্যের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ অর্জন করে ভোগ দখলে করেছেন। তার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নামীয় ১১টি ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে ৪২ কোটি ৪৬ লাখ ৯৭ হাজার ৯৮৯ টাকা জমা এবং ৪১ কোটি ৯৫ লাখ ১০ হাজার ২৬৬ টাকা উত্তোলনসহ মোট ৮৪ কোটি ৪২ লাখ আট হাজার ২৫৫ টাকার সন্দেহজনক লেনদেন করেছেন।
এরপর মানিলন্ডারিংয়ের সম্পৃক্ত অপরাধ দুর্নীতি ও ঘুস সংঘটনের মাধ্যমে উক্ত অর্থ বা সম্পত্তি স্থানান্তর, রূপান্তর ও হস্তান্তর করেছেন। এ কারণে তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৭(১) ধারা, দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭ এর ৫(২) ধারা তৎসহ মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪(২) ৩৪(৩) ধারায় মামলা দায়ের করা হয়।
মামলাটির তদন্তকালে তথ্য পাওয়া যায় যে, আসামি বেনজীর আহমদ অসাধু উপায়ে জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ সম্পদ অন্যত্র বিক্রয় বা হস্তান্তর, স্থানান্তর বা বেহাত করার প্রচেষ্টায় রয়েছেন। এ কারণে তার নিজ নামীয় ও তার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নামে অর্জিত অপরাধলব্ধ স্থাবর সম্পদ ক্রোক এবং অস্থাবর সম্পদ অবরুদ্ধ করা প্রয়োজন।
সাহিনার আবেদনে বলা হয়েছে, সাহিনা আহমদ ও বেনজীর আহমদ অসৎ উদ্দেশ্যে পরস্পর যোগসাজশে অসাধু উপায়ে এবং জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ ৯৭ কোটি ৪৭ লাখ ৩৮৫ টাকার সম্পদের মালিকানা অর্জন ও ভোগ দখলে রেখে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪-এর ২৭(১) ধারা এবং দণ্ডবিধির ১০৯ ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়।
মামলাটি তদন্তকালে তথ্য পাওয়া যায়, আসামি অসাধু উপায়ে অর্জিত ও জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ সম্পদ অন্যত্র বিক্রয় বা হস্তান্তর, স্থানান্তর বা বেহাত করার প্রচেষ্টায় রয়েছেন।
এ কারণে আসামির নিজ নামীয় ব্যাংক হিসাবসহ অস্থাবর সম্পদ অবরুদ্ধ করা প্রয়োজন। তার ব্যাংক হিসাবসহ অস্থাবর সম্পদ অবরুদ্ধ করা না গেলে বিচারকালে তা রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করা সম্ভব হবে না। এতে রাষ্ট্রের অপূরণীয় ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।