শতবর্ষী নৌকার হাটে নেই ক্রেতাদের হাঁকডাক
গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা মাছের ঘের, সরকারি খাল ও জলাশয়ের দখল, এবং প্রকৃতিগত নানা পরিবর্তনের কারণে কমে গেছে নৌকার ব্যবহার। ফলে উপজেলার শত বছরের পুরোনো নৌকার হাটগুলোতে আগের মতো বেচাকেনা হচ্ছে না।
সরেজমিনে দেখা যায়, এক সময়ের জমজমাট নৌকার হাটে এখন বিক্রেতারা অলস সময় কাটাচ্ছেন। নেই বাহারি ধরনের নৌকা, নেই ক্রেতাদের আগ্রহ। আগে যেখানে শত শত নৌকা নিয়ে বিক্রেতারা হাটে বসতেন, এখন গুটিকয়েক বিক্রেতা দেখা যায়। হাটে নেই আগের মতো ক্রেতাদের হাঁকডাক।
স্থানীয় জাঠিয়া গ্রামের নরেশ বাড়ৈ বলেন, আগে সুন্দরি ও লোহা কাঠ দিয়ে তৈরি নৌকা ১৫-২০ বছর পর্যন্ত ব্যবহার করা যেত। এখন রেইন্ট্রি ও মেহগনি কাঠ দিয়ে তৈরি নৌকা এক বছরও টেকে না। ফলে বাধ্য হয়েই তিনি প্রতি বছর নতুন নৌকা কিনতে আসেন। তবে এ বছর দাম অনেক বেশি বলে জানান তিনি।
নৌকা বিক্রেতা গোপাল ঘরামী বলেন, ‘কাঠ, লোহা ও শ্রমিকের মজুরি বেড়ে যাওয়ায় আমাদের বেশি দামে নৌকা বিক্রি করতে হচ্ছে। আগে প্রতি হাটে ২০-৩০টি নৌকা বিক্রি করতাম, এখন হয়তো তিন-চারটি বিক্রি হয়।’
স্থানীয় সাংস্কৃতিক কর্মী সজল বালা বলেন, ‘ঘাঘর নৌকার হাট ঘিরে একসময় নদীকেন্দ্রিক সাংস্কৃতিক বলয় তৈরি হয়েছিল। আগে গান গাইতে গাইতে নৌকা বেয়ে বিক্রেতারা হাটে আসতেন, ক্রেতারাও কিনে একইভাবে যেতেন। এখন সেই দৃশ্য আর দেখা যায় না। ভ্যানগাড়িতে করে নৌকা আনা-নেওয়া হচ্ছে। এটা আমাদের সংস্কৃতির ক্ষতি।’
সজল বালা আরও বলেন, ‘অপরিকল্পিত উন্নয়ন, ঘের নির্মাণ ও দখলদারিত্ব আমাদের ঐতিহ্যকে হত্যা করছে। আমি এর প্রতিবাদ জানাই। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য হলেও আমাদের নৌকার প্রচলন ধরে রাখা উচিত।’
উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. মাসুম বিল্লাহ বলেন, নৌকা হচ্ছে এ জনপদের মানুষদের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের একটি অংশ। একটা সময় এ এলাকায় মানুষদের মাঝে নৌকার প্রচলন বা ব্যবহার ছিল। কালের পরিক্রমায় নানা কারণে এই নৌকার প্রচলন বা ব্যবহার কমে গেছে। তাই এ এলাকায় নৌকা তৈরি বা ব্যবহার বাড়াতে উপজেলা প্রশাসনের কাছে যদি কেউ কোনো প্রকার সহযোগিতা চায় তা হলে আমরা তাকে সহযোগিতা করব।
ইউএনও মো. মাসুম বিল্লাহ আরও বলেন, অপরিকল্পিতভাবে মাছের ঘের তৈরি ও খাল বিল দখলমুক্ত করার জন্য উপজেলা প্রশাসন শীঘ্রই পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।