গণঅভ্যুত্থান না হলে নির্বাচনের স্বপ্নই দেখতে পেতেন না : নাহিদ
জাতীয় সংসদ নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে— এমন অভিযোগ নিয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, অনেকেই বলে, বিভিন্নভাবে আমাদের বিরুদ্ধে প্রপাগাণ্ডা ছড়ানোর চেষ্টা হচ্ছে—আমরা নাকি নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করছি, আমরা নাকি নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছি। কিন্তু এই গণঅভ্যুত্থান না হলে তো আপনারা নির্বাচনের স্বপ্নই দেখতে পেতেন না। শেখ হাসিনার অধীনে আরও চার বছর অপেক্ষা করতেন।
আজ সোমবার (২৮ জুলাই) জামালপুর শহরের ফৌজদারি মোড়ে পথসভায় নাহিদ ইসলাম এসব কথা বলেন।
নাহিদ ইসলাম বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলন যদি গণঅভ্যুত্থানে না নিয়ে যেতাম, পতনের দিকে না নিয়ে যেতাম, আপনারা শেখ হাসিনার অধীনে আরও চার বছর অপেক্ষা করতেন। এনসিপির বিরুদ্ধে নির্বাচন ঠেকানোর অভিযোগ তোলা হলেও বাস্তবতা হলো—নাগরিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় এনসিপির আন্দোলনেই আজ নির্বাচনের আলোচনা সম্ভব করেছে।
নাহিদ ইসলাম আরও বলেন, শুধু সরকার পরিবর্তনের মাধ্যমে আপনার-আমার জীবনের কোনো পরিবর্তন হবে না। আপনার এবং আমার জীবনের পরিবর্তন হবে যদি সংস্কার হয়। অর্থনৈতিক, কৃষি ও স্বাস্থ্য খাতে সংস্কার হয় এবং প্রকৃত গণতন্ত্র নিশ্চিত করতে পারি। আমরা এমন একটি সংসদ তৈরি করতে পারি, যেখানে ক্ষমতার ভারসাম্য থাকবে। যেখানে এক ব্যক্তি এবং শুধু প্রধানমন্ত্রীর কথায় রাষ্ট্র পরিচালিত হবে না। আর সেই সরকার, সেই রাষ্ট্রব্যবস্থা ও নতুন বাংলাদেশের জন্য কথা বলে যাচ্ছি।
নাহিদ আরও বলেন, রাষ্ট্র সংস্কারের অংশ হিসেবে একটি উচ্চ কক্ষ গঠনের বিকল্প নেই। জাতীয় সংসদকে দুই কক্ষে ভাগ করে ভোটের অনুপাতে উচ্চ কক্ষ নির্ধারণ করতে হবে। এতে জবাবদিহিমূলক ক্ষমতার ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা পাবে।
জুলাই সনদ বিষয়ে নাহিদ ইসলাম বলেন, উচ্চ কক্ষ নিয়ে ঐকমত্য না হওয়ায় ‘জুলাই সনদ’ এখনও চূড়ান্ত হয়নি। আশা করি সব রাজনৈতিক দল একমত হয়ে আগামী ৫ আগস্ট সর্বদলীয়ভাবে ‘জুলাই সনদ’ উদযাপন করবে।
বিএনপিকে ইঙ্গিত করে নাহিদ ইসলাম অভিযোগ করেন, তারা সারা দেশে তৃণমূলে একক আধিপত্য তৈরির চেষ্টা করছে। ভিন্ন মত থাকলেই বিরোধিতা করা হচ্ছে।
এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারা বলেন, রাষ্ট্রব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন এবং গুম-খুনের বিচার চাই আমরা। আর যেন কুক্ষিগত ক্ষমতা ফিরে না আসে, সেদিকে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।
এর আগে সকালে জামালপুর জেলা পরিষদের ডাকবাংলোতে শহীদ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন নাহিদ ইসলাম। এরপর হরিজন পল্লী পরিদর্শন ও শহরের তমালতলা থেকে ফৌজদারি মোড় পর্যন্ত পদযাত্রায় অংশ নেন তিনিসহ কেন্দ্রীয় নেতারা। পদযাত্রায় জেলার সাত উপজেলা থেকে বিপুল নেতাকর্মী অংশ নেন।
পথসভায় সভাপতিত্ব করেন এনসিপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম সদস্য সচিব ও জামালপুর জেলার প্রধান সমন্বয়কারী লুৎফর রহমান। সভায় আরও বক্তব্য দেন দলের এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব তানসিম জারা, কেন্দ্রীয় যুগ্ম সদস্যসচিব লুৎফর রহমান ও যুগ্ম আহ্বায়ক হিফজুর রহমান (বকুল) প্রমুখ। সভায় উপস্থিত ছিলেন দলের মুখ্য সমন্বয়কারী নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী ও সংগঠক মোসাদ্দেকুর রহমান প্রমুখ। অসুস্থতার কারণে সভায় বক্তব্য দেননি মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ ও মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম।
এর আগে গতকাল রোববার রাত ৮টায় জামালপুর শহরের চামড়া গুদাম এলাকায় আল জামিয়াতুল হাবিবিয়া কওমি মাদ্রাসা, হজরত শাহজামাল (র.)–এর মাজার, দয়াময়ী মন্দির পরিদর্শন করেন এনসিপিনেতারা। সভা শেষ করে বেলা দেড়টার দিকে ময়মনসিংহের উদ্দেশে যাত্রা করেন তারা।