ভাঙন ঝুঁকিতে দৌলতদিয়ার সবগুলো ফেরিঘাট

জুলাইয়ের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে পদ্মা নদীতে পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দেখা দিয়েছে ভাঙন। ভাঙন বেড়ে যাওয়ায় রাজবাড়ীর দৌলতদিয়ার তিনটি ফেরিঘাটের সবকটি ভাঙন ঝুঁকিতে পড়েছে। জরুরি মেরামতের অংশ হিসেবে বিআইডব্লিউটিএ ফেরিঘাট রক্ষায় বালুভর্তি বস্তা ফেললেও প্রয়োজনের তুলনায় তা অপ্রতুল। এ ছাড়া ঘাটসংলগ্ন তিনটি গ্রাম, বাজার, মসজিদ, স্কুল, মাদ্রাসাসহ বহু স্থাপনাও ঝুঁকিতে পড়েছে।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহণ কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) আরিচা কার্যালয় জানায়, রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়ায় ৭টি ফেরিঘাট রয়েছে। এর মধ্যে ৩, ৪ ও ৭ নম্বর ঘাট তিনটি সচল রয়েছে। ৬ নম্বর ঘাট থাকলেও সেটি এখনো সচল হয়নি। ঘাটটি পানি উঁচু স্তরের হওয়ায় ভরা বর্ষায় সেটি সচল হবে। এ ছাড়া কয়েক বছর আগে ১, ২ ও ৫ নম্বর ঘাটগুলো নদীভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে।
এদিকে দৌলতদিয়া ঘাটের প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকায় ভাঙন দেখা দেওয়ায় সবকটি (৩, ৪ ও ৭ নম্বর) ফেরিঘাট এখন ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে। এর মধ্যে ৪ ও ৭ নম্বর ফেরিঘাট রয়েছে অধিক ঝুঁকিতে। ঘাটসংলগ্ন বাহির চর ছাত্তার মেম্বারপাড়া, মজিদ মাতুব্বরপাড়া ও শাহাদত মেম্বারপাড়াসহ স্থানীয় বাজার, মসজিদ, স্কুলসহ একাধিক স্থাপনাও রয়েছে ঝুঁকিতে।
দৌলতদিয়া ঘাটের সর্বশেষ পরিস্থিতি দেখতে শনিবার (২ আগস্ট) ভাঙনকবলিত এলাকায় আসেন বিআইডব্লিউটিএর নির্বাহী প্রকৌশলীসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। তারা ঘাটের সার্বিক খোঁজখবর নেন এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানান।
সরেজমিন দেখা যায়, দৌলতদিয়ার ৩, ৪ ও ৭ নম্বর ফেরিঘাটসহ মধ্যবর্তী এলাকার সর্বত্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। কয়েক দিনের বৃষ্টিতে ভাঙন বাড়ায় ৭ নম্বর ঘাটে ফেরির পন্টুন ধরে রাখা কষ্টকর হয়ে পড়ছে। ৪ ও ৭নম্বর ফেরিঘাটে কিছু বালুর বস্তা ফেলা হলেও প্রয়োজনের তুলনায় নগণ্য। আতঙ্কে অনেকে আশপাশের স্থাপনা সরিয়ে নিয়েছেন। ছাত্তার মেম্বার পাড়ার চারটি পরিবার তাদের ঘরও সরিয়ে নিয়েছে।
ফেরিঘাট এলাকার চা দোকানি শাহিন শেখ বলেন, শুষ্ক মৌসুমে কারো খেয়াল থাকে না। অথচ ওই সময় ভাঙন প্রতিরোধে শক্ত ব্যবস্থা নেওয়া যায়। তা না করে প্রতি বছর বর্ষায় ভাঙন শুরু হলে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতারা ইচ্ছেমতো কিছু বস্তা ফেলেন। পানির ভেতর কত বস্তা ফেলা হলো, তার হিসাব থাকে না। তার ওপর বেশিরভাগ বস্তা অনেকটাই খালি থাকে।
স্থানীয় আলতাফ মোল্লা, শাহাদাত প্রামানিক, ময়ান সরদার বলেন, আমরা রিলিফ চাই না, শুধু চাই নদী শাসন। আমাদের শেষ ঠিকানা ধরে রাখতে চাই। ভাঙন প্রতিরোধে কতজন কত আশ্বাস দিল, কেউ কথা রাখেনি। কয়েক দিনে যে হারে ভাঙছে, এভাবে ভাঙন অব্যাহত থাকলে ফেরিঘাট, বাহির চর ছাত্তার মেম্বারপাড়া, মজিদ মাতুব্বরপাড়া, শাহাদত মেম্বারপাড়া, বাজার, মসজিদ, স্কুল, মাদরাসাসহ অনেক স্থাপনা নদীতে বিলীন হয়ে যাবে।
বিআইডব্লিউটিসি দৌলতদিয়া কার্যালয়ের সহকারী মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন বলেন, ‘ভাঙন দেখা দেওয়ায় ফেরিঘাট ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। বিআইডব্লিউটিএকে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানিয়েছি। তিনটি ঘাট সচল থাকলেও ভাঙন আরও বৃদ্ধি পেলে যানবাহন ও যাত্রী পারাপার ব্যাহত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।’
বিআইডব্লিউটিএ আরিচা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী নেপাল চন্দ্র দেবনাথ বলেন, ‘জুলাইয়ের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে ফেরিঘাটের দুই কিলোমিটার জুড়ে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ৪ ও ৭ নম্বর ঘাট অধিক ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় কর্তৃপক্ষকে জানানোসহ জরুরি মেরামত এবং সংরক্ষণ কাজের অংশ হিসেবে সম্প্রতি প্রায় সাতশ বালুর বস্তা ফেলা হয়েছে। তবে ফেরিঘাটের মধ্যবর্তী এলাকায় বস্তা ফেলা হয়নি। প্রয়োজনীয় বরাদ্দ মিললে বাকি কাজ করতে পারব।’