সাগরের পাড়ে বসে নতুন সংবিধানের রূপরেখা নিয়ে ভাবতে চেয়েছি : নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রথম বর্ষপূর্তির দিনে গত মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) কক্সবাজার সফরে যাওয়ার ঘটনায় দলের কারণ দর্শানোর নোটিশের জবাব দিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী। জবাবে তিনি লিখেছেন, ‘সাগরের পাড়ে বসে আমি গভীরভাবে ভাবতে চেয়েছি গণঅভ্যুত্থান, নাগরিক কমিটি, নাগরিক পার্টির কাঠামো, ভবিষ্যৎ গণপরিষদ এবং একটি নতুন গণতান্ত্রিক সংবিধানের রূপরেখা নিয়ে। আমি এটিকে কোনো অপরাধ মনে করি না, বরং একজন রাজনৈতিক কর্মীর জন্য এটি একটি দায়িত্বশীল মানসিক চর্চা।’
বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) বিকেল চারটার দিকে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে কারণ দর্শানোর নোটিশের জবাবটি পোস্ট করেছেন নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী। এর আগে কক্সবাজার সফরের বিষয়ে গতকাল বুধবার নাসীরুদ্দীনসহ এনসিপির পাঁচ নেতাকে দলের পক্ষ থেকে যুগ্ম সদস্য সচিব (দপ্তর) সালেহ উদ্দিন সিফাত স্বাক্ষরিত কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়ে এই সফরের কারণ ও প্রেক্ষাপট সম্পর্কে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দলের দুই শীর্ষ নেতার কাছে সশরীর উপস্থিত হয়ে লিখিত ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়।
এনসিপির অন্যতম এই শীর্ষ নেতা নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী কারণ দর্শানোর নোটিশের জবাবে লিখেছেন, “৫ আগস্ট তাঁর কোনো পূর্বনির্ধারিত রাষ্ট্রীয় বা সাংগঠনিক কর্মসূচি ছিল না। দল থেকেও তাঁকে এ–সংক্রান্ত কোনো দায়িত্ব বা কর্মপরিকল্পনা জানানো হয়নি। ৪ আগস্ট রাতে দলের মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ তাঁর কোচিং অফিসের সহকর্মীর ফোন ব্যবহার করে তাঁকে জানান, তিনি তাঁর স্কুলবন্ধুদের সঙ্গে দুই দিনের জন্য ঘুরতে যাবেন। তিনি হাসনাতকে দলের আহ্বায়ককে বিষয়টি অবহিত করতে বলেন। হাসনাত জানান যে বিষয়টি জানাবেন এবং তাঁকেও জানাতে বলেন, যেহেতু হাসনাতের নিজস্ব ফোন পদযাত্রায় (জুলাই মাসজুড়ে জেলায় জেলায় জুলাই পদযাত্রা) চুরি হয়ে গিয়েছিল।”
নাসীরুদ্দীন আরও লেখেন, ‘৪ আগস্ট রাতে দলীয় কার্যালয়ে আমি এনসিপির আহ্বায়কের (নাহিদ ইসলাম) সঙ্গে দেখা করে বিষয়টি জানাই। একই রাতে আমি দলের সদস্যসচিবের (আখতার হোসেন) সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করে জানতে পারি যে রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে (জুলাই ঘোষণাপত্র পাঠের অনুষ্ঠান) দল থেকে তিনজন প্রতিনিধি যাচ্ছেন এবং সেখানে আমার কোনো কাজ নেই। আমি কোনো দায়িত্বে না থাকায় এবং ব্যক্তিগত প্রয়োজন ও মানসিক প্রস্তুতির অংশ হিসেবে ঘুরতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিই। সফরসঙ্গী হিসেবে সস্ত্রীক সারজিস আলম ও তাসনিম জারা-খালেদ সাইফুল্লাহ দম্পতি যুক্ত হন।’
পরিস্থিতির আলোকে দলের শোকজ নোটিশটি বাস্তবভিত্তিক নয় বলেও মন্তব্য করেছেন এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী। তিনি লিখেছেন, “আমার সফর ছিল স্বচ্ছ, সাংগঠনিক নীতিমালাবিরোধী নয় এবং একান্ত ব্যক্তিগত চিন্তা-ভাবনার সুযোগ মাত্র। তবু দলীয় শৃঙ্খলার প্রতি শ্রদ্ধা রেখে এবং রাজনৈতিক শালীনতা বজায় রেখে আমি এই লিখিত জবাব দিচ্ছি। অসভ্য জগতে সভ্যতার এক নিদের্শন হিসেবে। আমার বক্তব্য স্পষ্ট: ‘ঘুরতে যাওয়া অপরাধ নয়।’ কারণ, ইতিহাস কেবল বৈঠকে নয়, অনেক সময় নির্জন চিন্তার ঘরে বা সাগরের পাড়েও জন্ম নেয়।”