বন্যাপ্রবণ চরাঞ্চলে টিকে থাকার নতুন ভরসা ‘গুচ্ছ বসতভিটা’

বন্যা ও নদীভাঙনে প্রতি বছরই চরম ভোগান্তিতে পড়ে কুড়িগ্রামের চরাঞ্চলের মানুষ। তবে এবার টিকে থাকার লড়াইয়ে নতুন করে আশার আলো ছড়িয়েছে স্থানীয়দেরই এক যুগান্তকারী উদ্যোগ- ‘গুচ্ছ বসতভিটা’। ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমারসহ ১৬টি নদ-নদী বিধৌত এ জেলায় চরের মানুষ নিজেরাই গড়ে তুলছেন এই উঁচু বসতভিটা, যা শুধু আবাসস্থল নয়, বন্যার সময় হয় নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্র।
প্রতিটি গুচ্ছ বসতভিটায় পাঁচ থেকে ১০টি পরিবার একসঙ্গে বসবাস করে। এসব বসতভিটা সাধারণত সমতল জমি থেকে ৮ থেকে ১০ ফুট উঁচু হয়। নির্মাণ ব্যয় গড়ে ৪০ হাজার থেকে ৬০ হাজার টাকা পর্যন্ত পড়ে। জমির পরিমাণ ১৫ থেকে ২৫ শতক পর্যন্ত হয়।
কুড়িগ্রাম জেলায় বর্তমানে চরের সংখ্যা প্রায় ৪৬৯টি। এর অনেক জায়গায় ইতোমধ্যেই ছড়িয়ে পড়েছে গুচ্ছ বসতভিটার এই মডেল।
চিলমারী উপজেলার চর মনতলার দিনমজুর মিজানুর রহমান বলেন, গত বছর আমরা ১০টি পরিবার মিলে ২৫ শতক জমিতে গুচ্ছ বসতভিটা তৈরি করি। এতে খরচ হয়েছিল ৬০ হাজার টাকা। বন্যার সময় চারপাশ ডুবে গেলেও আমাদের ভিটা নিরাপদ থাকে। আশপাশের অনেক পরিবারও এসে এখানে আশ্রয় নেয়।
উলিপুর উপজেলার বজরা এলাকার কৃষক নজরুল ইসলাম বলেন, আমরা পাঁচটি পরিবার মিলে তিন বছর ধরে একটি গুচ্ছ বসতভিটায় বসবাস করছি। গাছপালা লাগিয়ে এটিকে বাসযোগ্য করেছি। বন্যা ও ভাঙনের সময় একসঙ্গে থাকায় আমাদের নিরাপত্তা এবং সহমর্মিতা দুটোই বেড়েছে।
ফুলবাড়ী উপজেলার চর গোড়কমণ্ডলের সেকেন্দার আলী বলেন, আগে প্রতিবছর বন্যায় বাড়িঘর ডুবে যেত। স্কুল বা রাস্তার ধারে আশ্রয় নিতে হতো। এখন আমরা ৮টি পরিবার মিলে যে গুচ্ছ বসতভিটা বানিয়েছি, সেটি ১০ ফুট উঁচু, ফলে আর ডোবে না।
কুড়িগ্রাম চর উন্নয়ন কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক শফিকুল ইসলাম বেবু বলেন, গুচ্ছ বসতভিটা চরের মানুষের জন্য কার্যকর হলেও অধিকাংশ পরিবার অর্থাভাবে এটি করতে পারে না। সরকারি সহায়তা খুবই সীমিত। বন্যা এলেই বোঝা যায়, এর প্রয়োজনীয়তা কতটা। তাই চরবাসীর জন্য সরকারি সহায়তায় গুচ্ছ বসতভিটা নির্মাণ নিশ্চিত করতে হবে।
শফিকুল ইসলাম বেবু আরও বলেন, আমরা চরবাসীর পক্ষে দীর্ঘদিন ধরে চর বিষয়ক আলাদা মন্ত্রণালয়ের দাবি জানিয়ে আসছি। পার্বত্য অঞ্চলের মতো চরাঞ্চলের জন্যও আলাদা মন্ত্রণালয় দরকার। এ বিষয়ে চরবাসীর সঙ্গে আমাদের সংলাপ অব্যাহত রয়েছে।
কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক নুসরাত সুলতানা বলেন, আমি ১০ মাস ধরে দায়িত্বে রয়েছি। কুড়িগ্রামের ১৬ নদী ও শাখা নদীর চরে প্রায় ৬ লাখ মানুষ বাস করে। এখানে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, চিকিৎসাসহ অনেক সমস্যাই রয়েছে। এসব বিষয়ে আমি সরকারকে জানিয়েছি। জেলা প্রশাসন চরের জীবনমান উন্নয়নে নানা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। ভবিষ্যতে আরও পরিকল্পিতভাবে কাজ করা হবে।