কম খরচে বেশি লাভ হওয়ায় মাল্টা চাষে ঝুঁকছেন কৃষকরা

একসময় শুধু দেশের পাহাড়ি এলাকায় সীমাবদ্ধ ছিল মাল্টা চাষ। কিন্তু এখন সেই সীমাবদ্ধতা পেরিয়ে সমতল ভূমিতেও সফলভাবে হচ্ছে এই ফলের চাষ। সম্প্রতি সাতক্ষীরার কৃষকেরা বাণিজ্যিকভাবে মাল্টা চাষ করে আশাতীত সাফল্য পেয়েছেন। উৎপাদন খরচ তুলনামূলক কম, আর স্বাদ ও ঘ্রাণে অতুলনীয় হওয়ায় স্থানীয় চাষীদের মধ্যে মাল্টা চাষে আগ্রহ দিন দিন বাড়ছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, সাতক্ষীরায় উৎপাদিত মাল্টার পুষ্টি ও গুণগত মান আমদানিকৃত মাল্টার চেয়েও ভালো। আবহাওয়া ও মাটির গুণাগুণ অনুকূলে থাকায় কৃষি নির্ভর এই জেলায় মাল্টা চাষের রয়েছে বিরাট সম্ভাবনা। ‘সাদাসোনা’ খ্যাত চিংড়ি মাছের পাশাপাশি মিষ্টি, কুল, ওল, হলুদ ও আমের জন্য সুপরিচিত সাতক্ষীরা এখন মাল্টা চাষেও সুনাম অর্জন করছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের জেলা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরে সাতক্ষীরার বিভিন্ন উপজেলায় মোট ১০৫ হেক্টর জমিতে মাল্টার আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে সর্বাধিক ৪০ হেক্টর জমিতে মাল্টা চাষ হয়েছে কলারোয়া উপজেলায়। মাটি ও আবহাওয়ায় সামান্য লবণাক্ততার কারণে এখানকার মাল্টা হয় অতিমিষ্ট ও সুস্বাদু। উচ্চফলনশীল, ভিটামিন ‘সি’ সমৃদ্ধ সবুজ রঙের এই ফল দেখতে যেমন আকর্ষণীয়, খেতেও তেমনি মনোহর।
কলারোয়া উপজেলার হেলাতলা গ্রামের চাষি মো. আক্তারুজ্জামান জানান, গতবছর ৫০ হাজার টাকা ব্যয়ে ৭ বিঘা জমিতে মাল্টা চাষ করে তিনি সব খরচ বাদ দিয়ে প্রায় দুই লাখ টাকা লাভ করেছেন। এবছর তিনি ১০ বিঘা জমিতে মাল্টা চাষ করেছেন এবং আশা করছেন আড়াই থেকে তিন লাখ টাকা লাভ হবে। তার মতে, সরকারি সহায়তা ও প্রশিক্ষণ বাড়ানো গেলে মাল্টা উৎপাদনে সাতক্ষীরা দেশের শীর্ষ জেলায় পরিণত হতে পারে।
কলারোয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ এসএম এনামুল ইসলাম বলেন, ‘বারি মাল্টা-১’ জাতের মাল্টা মিষ্টতার জন্য বাজারে ব্যাপক জনপ্রিয়। সুষম মাত্রায় সার ও বালাইনাশক ব্যবহারের কারণে চাষীরা ভালো ফল পাচ্ছেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. সাইফুল ইসলাম জানান, সাতক্ষীরার মাটি ও আবহাওয়া মাল্টা চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। ফল হিসেবে মাল্টা শুধু স্বাদে নয়, পুষ্টিগুণেও সমৃদ্ধ, যার ফলে বাজারে রয়েছে এর ব্যাপক চাহিদা। কম খরচে বেশি লাভ হওয়ায় স্থানীয় কৃষকরা মাল্টা চাষে ঝুঁকছেন এবং আধুনিক কৃষি পদ্ধতি অনুসরণ করলে আরও ভালো ফলন পাওয়া সম্ভব।