কারও দপ্তরে ফাইল পাঠালে সঙ্গে একজন লোক পাঠাতে হয় : সাখাওয়াত হোসেন
শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে কর্মসংস্থান শব্দটি উল্লেখ থাকলেও বাস্তবে এ নিয়ে কোনো কাজ করা হয় না বলে মন্তব্য করেছেন উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন। এ সময়ে আমলাদের কাজের ধীরগতির সমালোচনা করে তিনি বলেন, কারো দপ্তরে ফাইল পাঠালে দ্রুত কাজ করাতে সঙ্গে একজন লোক পাঠাতে হয়। শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে কর্মসংস্থান শব্দটা শুধু খাতাতেই আছে, বাস্তবে এর কোনো কাজ নেই।
রোববার (১০ আগস্ট) বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) আয়োজিত ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ৩৬৫ দিন’ শীর্ষক সেমিনারে সাখাওয়াত বলেন, ‘দায়িত্ব নেওয়ার পর কর্মসংস্থান উন্নয়নে যখন কাজ করতে চেয়েছি তখন বুঝেছি আমলাতান্ত্রিক জটিলতা কাকে বলে। এই মন্ত্রণালয়ের কর্মসংস্থানকেন্দ্রিক কাজকে বাস্তবমুখী করতে চেয়েও আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় আটকে যেতে হয়েছে।’
আমলাদের ওপর ক্ষোভ ঝেড়ে সাখাওয়াত বলেন, ‘কারো দপ্তরে ফাইল পাঠালে দ্রুত কাজ করাতে সঙ্গে একজন লোক পাঠাতে হয়। এভাবে করে কাজ করতে গেলে এক বছরে কিছুই করা সম্ভব না।’
এক বছর সরকারে থাকার হতাশা ব্যক্ত করে সাখাওয়াত জানান, একজন উপদেষ্টা হিসেবে চারবার মন্ত্রণালয় বদল হয়েছে তার। এতে করে বেশিরভাগ কাজই অসমাপ্ত রেখে অন্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নিতে হয়েছে।
শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে উপদেষ্টা বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর পুলিশদের কাজে ফেরাতে দিনের পর দিন তাদের সঙ্গে বৈঠক করতে হয়েছে। এখনো পুলিশের সক্ষমতা আসেনি, হয়নি কাঠামোগত পরিবর্তন।
শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের চ্যালেঞ্জ প্রসঙ্গে সাখাওয়াত বলেন, বিশাল কোম্পানি বেক্সিমকো একেবারে ধসে গেছে। তাদের কর্মী সংখ্যা ৩৮ হাজার। এই বিশাল কর্মীদের সামাল দেওয়া ছিল বড় চ্যালেঞ্জ।
‘অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক ঋণ নিয়ে পালিয়ে গেছে। একটি প্রতিষ্ঠানই ১৬ ব্যাংক থেকে ৪৮,০০০ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে। শুধু জনতা ব্যাংক থেকেই ঋণ নিয়েছে ২৪,০০০ কোটি টাকা। কোনো দেশে এমন নজির নেই—রাষ্ট্রায়ত্ত একটি ব্যাংক থেকে এত বড় ঋণ নিয়ে কেউ পালিয়ে গেছে,’ বলেন সাখাওয়াত।
বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) সফরের প্রসঙ্গ টেনে সাখাওয়াত জানান, কোনো দেশে শ্রমিকদের অধিকার প্রসঙ্গে আইএলও যাওয়া মানে ওই দেশের রপ্তানি বাজার শেষ। আইএলওর নানা প্রস্তাবকে গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করতে হয়েছে। চাইলেও এখানে ঔদ্ধত্য দেখানোর সুযোগ নেই। একটি ভুল সিদ্ধান্তে পুরো বাজারে ধস নামতে পারত।
চা বাগানের শ্রমিকদের প্রসঙ্গে সাখাওয়াত জানান, দেশে বড় বড় উন্নয়নের কথা বললেও আজ পর্যন্ত চা বাগানের শ্রমিকদের উন্নয়নে নেওয়া হয়নি কোনো ব্যবস্থা। সেখানকার নারী শ্রমিকদের জন্য টয়লেটের ব্যবস্থা পর্যন্ত নেই। অনেক নারী শ্রমিক জরায়ু ক্যান্সারে আক্রান্ত। এত বড় চা বাগান অথচ শ্রমিকদের পানি খাওয়ার একটি টিউবওয়েল নেই।
‘একটি দেশে মেট্রোরেল আর এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে হচ্ছে মানে বিশাল উন্নতি হচ্ছে—এটি ভুল ধারণা। উন্নতির সুফল সবার ভাগে গেলেই বুঝতে হবে এটি উন্নতি’, বলেন উপদেষ্টা।
এক বছরে সরকার ব্যর্থ কিনা—এমন প্রসঙ্গে সাখাওয়াত বলেন, ‘সরকার ব্যর্থ হলে সেই দায় বাকিদেরও। সবার যেখানে সহযোগিতা করার কথা ছিল সেখানে অনেকেই হাত গুটিয়ে বসে থেকেছে। অথচ আমাদের দরজা সবার জন্যই খোলা ছিল।’
সরকারের সমালোচনা করার অধিকার সবার আছে—উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, আগে শ্রমিক নেতারা মালিক বা সরকারের বিরুদ্ধে কথা বললে তাদের গুম করা হতো, খুন করা হতো, দেওয়া হতো জেলে। ৪২ জন শ্রমিক নেতা জেলে ছিলেন; বের করা হয়েছে তাদের। যার যা ইচ্ছা বলছে, সরকার সব হজম করছে।