ডিসি-শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের কলিজা খুলে নেওয়ার হুমকি বিএনপিনেতার, অডিও ভাইরাল
কুমিল্লা ১০ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপি নেতা আব্দুল গফুর ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মো. আমিরুল কায়সার ও কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যান মো. শামসুল আলমকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। নাঙ্গলকোট উপজেলার ভোলাইন বাজার উচ্চ বিদ্যালয় অ্যান্ড কলেজের সভাপতি পদ নিয়ে সৃষ্ট বিরোধের জেরে এ ঘটনা ঘটে বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে একটি অডিও রেকর্ড সম্প্রতি ফাঁস হয়েছে, যা এই প্রতিবেদকের হাতে এসেছে। অডিওতে অপর প্রান্তে কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যান শামসুল আলমের কণ্ঠও শনাক্ত করেছেন প্রতিবেদক।
সূত্রমতে, চলতি বছরের ১৮ মে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার প্রেস উইংয়ের সদস্য শামসুদ্দিন দিদারের বড় ভাই ড. মীর আবু সালেহ শামসুদ্দীনকে (শিশির) ওই ভোলাইন বাজার স্কুল অ্যান্ড কলেজের সভাপতি হিসেবে কুমিল্লা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানের কাছে সুপারিশ করেন জেলা প্রশাসক। পরে সুপারিশটি ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানের কাছে পাঠান শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যান। ওইদিনই সাবেক এমপি আব্দুল গফুর ভূঁইয়া অডিও কলে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ ও নানান হুমকি ধামকি দেন। এ ছাড়া পরদিন স্বশরীরে কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডে গিয়ে মব তৈরি করে চেয়ারম্যানকে ভয়ভীতি দেখান বলে অভিযোগ রয়েছে। ঘটনাটি এতদিন ধামাচাপা থাকলেও অডিও ফাঁসের পর বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে।
অডিও রেকর্ডটি পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো, অডিও রেকর্ডের শুরুতেই সাবেক এমপি আব্দুল গফুর ভূঁইয়া উত্তেজিত কণ্ঠে বলেন, যে মিডিয়া সেলের দায়িত্বে ছিল, সে এখন নাই, এখন নাই সে।
অপর পাশ থেকে শিক্ষাবোর্ড চেয়ারম্যান শামসুল আলম বলেন, ‘আমাকে সে বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ে কাজ করে বলে পরিচয় দিয়েছিল।’
পালটা জবাবে সাবেক এমপি গফুর ভূঁইয়া বলেন, ‘সে পরিচয় দিক, তারপরও একজন সাবেক সংসদ সদস্যকে আপনি এভাবে অপমান করতে পারেন না। আমি আপনার অফিসে এসে আপনাকে অপমান করব। আপনার কত বড় কলিজা হয়েছে আমি দেখব আপনাকে। আপনাকে কে এখানে বসাইছে আমি তার কলিজা খুলে ফেলব, আপনার কলিজাও আমি খুলে ফেলব। বেয়াদবির একটা সীমা আছে। একটা টোকাইয়ের ইয়ে দিয়েছেন আপনি। একটা চাকরি করে সে এখানে, টোকাই।’
শিক্ষাবোর্ড চেয়ারম্যান শামসুল আলম প্রতি উত্তরে বলেন, ‘উনি আমাকে বলেছেন উনি খালেদা জিয়ার প্রেস…’
এসময় সাবেক এমপি গফুর ভূঁইয়া তাকে থামিয়ে বলতে শুরু করেন, ‘আপনি আমাকে বলতেন যে এইরকম একটা তদবির আছে। ওখানে তো সে ঢুকতে পারবে না, তার ভাই ঢুকতে পারবে না। আপনি যে ভেজাল লাগাইছেন একজন ইয়ে করে, আপনি এটার দায়-দায়িত্ব নিতে হবে। আমি কালকে আপনার বিরুদ্ধে মামলা করব। কত বড় সাহস আপনার, আমি দেখে নিব। এখন যদি ফেরত না আনেন ওই .... বলেন, কিসের কো-অর্ডিনেটর তুমি? ডকুমেন্ট দেখাও। আপনাকে আমি বলছি, আপনি এটা সুন্দরভাবে করেন না হলে আপনার ক্ষতি হবে, আপনি অপমানিত হবেন। আমি আপনাকে দেখে নিব। আমি টোকাই না, আই এম নট কাউবয়। আই ওয়াজ আ ল মেকার, আই নো ল। আপনি এটা করেন, আমি বলে দিলাম।’
এদিকে জানা যায়, ঘটনার পরপরই বোর্ড চেয়ারম্যনের বিশেষ অনুরোধে ড. মীর আবু সালেহ শামসুদ্দীন (শিশির) ওই প্রতিষ্ঠানের সভাপতির পদ থেকে অব্যাহতি নেন। কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মো. আমিরুল কায়সারের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার সঙ্গে সাবেক এমপি গফুর ভূঁইয়ার কোনো কথা হয়নি। উনার সঙ্গে কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের কথা হয়েছে। হয়তো উনাকে গালিগালাজ করেছেন।
এই বিষয়ে কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যান শামসুল আলম বলেন, এ বিষয়ে আমি কোনো মতামত জানাতে ইচ্ছুক নই।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার প্রেস উইংয়ের সদস্য শামসুদ্দিন দিদার বলেন, এই লোকটি প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরের লোকজনকে ক্ষমতার অপব্যবহার করে হেনস্থা ও হুমকি দিয়ে থাকে। শুধু তা-ই নয়, উনি (আব্দুল গফুর ভূঁইয়া) এলাকায় আওয়ামী পুনর্বাসনেরও দায়িত্ব নিয়েছেন। ওনার এমন সব কর্মকাণ্ডে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। দলের অভ্যন্তরে সৃষ্টি হচ্ছে চরম বিশৃঙ্খলা। ছিটকে পড়ছে দীর্ঘদিনের ত্যাগী নেতা-কর্মীরা।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে, সাবেক এমপি আবদুল গফুর ভূঁইয়া সাংবাদিকদের বলেন, এগুলো আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচার ছড়ানো হচ্ছে। এ বিষয়ে আমি আর কিছু বলতে চাই না।