পরিবেশবান্ধব কেঁচো সার উৎপাদনে স্বাবলম্বী মাদারীপুরের রাশিদা

মাদারীপুর সদর উপজেলার পাচখোলা ইউনিয়নের মহিষেরচর এলাকার রাশিদা বেগম পরিবেশবান্ধব কেঁচো সার উৎপাদন করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। সারের সঙ্গে উৎপাদিত কেঁচোও তিনি বিক্রি করছেন। তার উদ্যোগে স্থানীয় নারীরা উৎসাহ পাচ্ছেন, কারণ রাসায়নিক সারের তুলনায় এই জৈব সার ফসলের জন্য অনেক উপকারী।
৪৫ বছর বয়সী রাশিদা বেগমের চার সন্তান রয়েছে। তার স্বামী আনোয়ার হোসেন সৌদি প্রবাস থেকে দেশে ফিরে এখন কৃষিকাজে তার পাশে রয়েছেন। সংসারের খরচ ও ছেলেদের পড়াশোনার জন্য রাশিদা প্রথমে বাড়ির পাশের জমিতে সবজি চাষ শুরু করেন। লাউ, মিষ্টি কুমড়া, ডাটা, শশা, ঢেড়শসহ বিভিন্ন সবজি চাষের সময় সারের প্রয়োজন বুঝে তিনি নিজ উদ্যোগে কেঁচো সার উৎপাদনের কাজ শুরু করেন।
প্রথমে জেলা কৃষি অফিস থেকে প্রশিক্ষণ নেওয়া রাশিদা বাড়ির পাশেই একটি টিনের চালা নির্মাণ করেন। সেখানে ৬টি সিমেন্টের রিং বসিয়ে কেঁচো সার উৎপাদন শুরু করেন। বর্তমানে উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়ে তিনি ৯টি রিং ব্যবহার করছেন। তার পালিত দুইটি গাভীর গোবর থেকে ২৫-৩০ দিনের মধ্যে কেঁচো সার তৈরি হয়।
একটি রিংয়ে এক মণ সার উৎপাদন হয়। এক মণ সার ৬০০ টাকা ও এক কেজি কেঁচো ১৫০০ টাকা বিক্রি করা হয়। জেলা কৃষি অফিস ও স্থানীয় মানুষজন নিয়মিত তার কাছ থেকে সার কিনছেন। বর্তমানে রাশিদা প্রতিমাসে সার, কেঁচো, গরুর দুধ ও সবজি বিক্রি করে ২০-২৫ হাজার টাকা আয় করছেন।
রাশিদা বেগম বলেন, সার বিক্রি করে আয় হবে তা ভাবিনি। কৃষি অফিসের প্রশিক্ষণ ও সহযোগিতায় আমি এই কাজ শুরু করেছি। আমার উৎপাদিত সার জৈব এবং গুণগতমান ভালো হওয়ায় চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। ভবিষ্যতে উৎপাদন আরও বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে।
তার স্বামী আনোয়ার হোসেন বলেন, আমার স্ত্রী তিন বছর ধরে কেঁচো সার উৎপাদন করছেন। জৈব সার ফসলের জন্য উপকারী হওয়ায় এর চাহিদা অনেক। আমি সবসময় তার পাশে আছি।
প্রতিবেশী তাহমিনা আক্তার বলেন, রাশিদা আপার উদ্যোগ দেখে আমরা উৎসাহ পাচ্ছি। আমরা নিজেও ঘরে বসে এই সার উৎপাদন করার চেষ্টা করবো। এতে নিজে স্বাবলম্বী হওয়া সম্ভব।
মাদারীপুর উন্নয়ন সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অ্যাড. মাসুদ পারভেজ বলেন, সামান্য পুঁজি দিয়ে এই সার উৎপাদন করা সম্ভব। দেশের কৃষিখাতে এই সার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বিষমুক্ত সবজি উৎপাদনের জন্য জৈব সারের প্রসার প্রয়োজন।
সদর উপজেলার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সাবরিনা আক্তার বলেন, রাশিদা একজন নারী উদ্যোক্তা। তিন বছর ধরে তিনি কেঁচো সার উৎপাদন করছেন। তার নিজস্ব সবজি বাগানও রয়েছে। নিজের চাহিদা পূরণ ও বিক্রির মাধ্যমে তিনি স্বাবলম্বী হয়েছেন। তাকে দেখে অন্যান্য নারীরাও উৎসাহ পাচ্ছেন। আমাদের পক্ষ থেকে তাকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।