হাসিনা-কাদেরসহ সব অপরাধীর বিচার চেয়ে শহীদ ইয়াকুবের মায়ের সাক্ষ্য

জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে রাজধানীর চানখারপুলে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন সদস্যদের গুলিতে শিক্ষার্থীসহ ছয়জনকে হত্যা মামলায় তৃতীয় দিনের মতো সাক্ষীর জবানবন্দিতে শহীদ মো.ইয়াকুবের মা রহিমা আক্তার কান্নারত অবস্থায় বলেন, যারা আমার ছেলের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিল, যারা নির্দেশ দিয়েছিল, তাদের বিচার চাই। আমি হাসিনা, কাউয়া কাদের ও যারা ওখানে ছিল, যারা এই আদেশ দিয়েছে তাদের সকলের বিচার চাই।
আজ বুধবার (১৩ আগস্ট) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ মামলায় সাক্ষ্য প্রদানকালে শহীদ ইয়াকুবের মা এসব কথা বলেন।
জবানবন্দিতে শহীদ ইয়াকুবের মা বলেন, আমার নাম রহিমা আক্তার। আমার বর্তমান বয়স আনুমানিক ৫৪ বৎসর। আমার ঠিকান- নাজিমুদ্দিন রোড, শেখ বোরহানউদ্দিন কলেজের পাশে সিপি গলি। আমি একজন গৃহিনী।
আমার ছেলে মো. ইয়াকুব আন্দোলনে গিয়েছিল। আমার ছেলে নিউমার্কেটের একটি প্রতিষ্ঠানের ডেলিভারিম্যান ছিল।
আমার ছেলে গোপনে ছাত্র আন্দোলনে যেত। আমি তার দেখা না পেয়ে জিজ্ঞাসা করতাম তুমি কোথায় যাও? কিন্তু সে কিছুই বলতো না। গত বছরের ঘটনা।
হত্যার বর্ণনা দিয়ে রহিমা আক্তার বলেন, ইয়াকুব গত ০৫-০৮-২০২৪ তারিখে চানখারপুল নাজিমুদ্দিন রোডে আন্দোলনে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়। গুলি লাগার বিষয়ে শুনে আমি চিৎকার করে বাসা থেকে বের হয়ে গলিতে যাই। মহল্লার লোকজন আমাকে যেতে দেয়নি। আমাকে জানায় আমার ছেলে সুস্থ আছে। তাকে মিটফোর্ড হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ঐ সময় আমার ছেলের বয়স ছিলো ৩৫ বছর। প্রতিবেশীরা কান্নাকাটি শুরু করলে আমার সন্দেহ হয় আমার ছেলের কিছু হয়েছে। বেলা আনুমানিক ২টার দিকে দেখি আমার ছেলের লাশ খাটিয়ায় করে গলির ভিতর নিয়ে আসে। শহীদসহ অনেকেই ছিল। ছেলের শরীর থেকে তখনও খাটিয়া বেয়ে অনেক রক্ত পড়ছিল। তারপর কাপড় সরিয়ে দেখি পেটে গুলি লেগে পিছন দিয়ে বেরিয়ে গেছে। ভুঁড়ি বেরিয়ে গেছে, রক্ত পড়া থামছে না।
আমি পরবর্তীতে টিভি নিউজ, ভিডিও এবং বিভিন্ন মাধ্যমে দেখেছি যারা গুলি করেছে তারা ছাপা কাপড়ের পোশাক পরিহিত ছিল। পুলিশের গুলিতে আমার ছেলে পড়ে যায়। প্রতিবেশী শহীদ এই দৃশ্য তার মোবাইলে ধারণ করেছিল। আমি তা টিভি নিউজে দেখেছি। তদন্তকারী কর্মকর্তাকে আমি ভিডিও এবং চিকিৎসা সংক্রান্ত কাগজ দিয়েছি। এই সেই ভিডিওর জব্দ তালিকা। এই সেই ভিডিও।
রহিমা আক্তার বলেন, যারা আমার ছেলের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিল, যারা নির্দেশ দিয়েছিলো তাদের বিচার চাই। আমি হাসিনা, কাউয়া কাদের ও যারা ওখানে ছিল, যারা এই আদেশ দিয়েছে তাদের সকলের বিচার চাই। তদন্তকারী কর্মকর্তা আমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। এই আমার জবানবন্দি।
জবানবন্দি শেষে আসামির আইনজীবীরা তাকে জেরা করেন।
গত ২৫ মে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট রাজধানীর চানখারপুলে গুলি করে ছয়জনকে হত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় প্রথম আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) আমলে নেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। গত ২৫ মে এ মামলায় আট পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়।
গত ১৪ জুলাই এ মামলায় পলাতক চার আসামিসহ আটজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। গত বছরের ৫ আগস্ট চানখারপুল এলাকায় শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে গুলি চালায় পুলিশ। এতে বহু হতাহতের ঘটনা ঘটে। এতে শাহরিয়ার খান আনাস, শেখ মাহদী হাসান জুনায়েদ, মো. ইয়াকুব, মো. রাকিব হাওলাদার, মো. ইসমামুল হক ও মানিক মিয়া শাহরিক শহীদ হন।