বটতৈলে কৃষক প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগ

কুষ্টিয়ার সদর উপজেলার বটতৈল ইউনিয়নে কৃষকদের জন্য নির্ধারিত বিশ্রামাগার ও টয়লেট নির্মাণ প্রকল্পে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় ইউপি সদস্য জামাল উদ্দীন ব্যাপারী, চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান মিন্টু ফকির ও ইউনিয়নের প্রশাসনিক কর্মকর্তা প্রশান্ত কুমার নন্দীর বিরুদ্ধে। প্রকল্পের নির্ধারিত কাজ না করেই তারা পুরো টাকা উত্তোলন করেছেন বলে অভিযোগ কৃষক ও সচেতন নাগরিকদের।
আজ বুধবার (১৩ আগস্ট) সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, সেখানে নির্মাণ কাজ শেষ হয়নি। টয়লেটের কোনো কাঠামোই নেই, আর বিশ্রামাগারটি অর্ধসমাপ্ত—ইট আর বালির গাঁথুনি ও ওপরে টিনশেড। কোনো প্লাস্টার হয়নি। ফলে কৃষকরা বাধ্য হয়ে পাশের একটি বাঁশের মাচায় বিশ্রাম নিচ্ছেন।
জানা গেছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের অধীনে ইউনিয়ন পরিষদ উন্নয়ন সহায়তা (পিবিজি) প্রকল্পের আওতায় বটতৈল ইউনিয়নের কবুরহাট দোস্তপাড়া এলাকার রেলপাড়া মাঠে কৃষকদের বিশ্রামাগার ও টয়লেট নির্মাণের জন্য দুই লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। কাজ শুরু হয়েছিল ২০২৩ সালের ১ জুলাই। শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২৪ সালের ৩০ জুন।
অভিযোগ রয়েছে, প্রকল্পের কাজ পুরোপুরি শেষ হওয়ার আগেই, বটতৈল ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তার কাছ থেকে ২০২৪ সালের ১৩ জুন পুরো টাকা উত্তোলন করে নেন বটতৈল ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য জামাল উদ্দিন ব্যাপারী। যদিও প্রকল্পটি ছিল ৭ নম্বর ওয়ার্ডে। ওই ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আতিয়ার হোসেন বলেন, প্রকল্পটি দিয়েছে চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান (মিন্টু ফকির)। কাকে কাজ দিয়েছে, কে করছে—আমাকে কিছুই জানানো হয়নি। কিছুটা ইট গেঁথে, পরে কাজ না করেই চেয়ারম্যানের সহযোগিতায় টাকা তোলার জন্য যা যা করা লাগে, সেটা করেই টাকা তুলে নিয়েছে জামাল মেম্বার।
ইউনিয়নের প্রশাসনিক কর্মকর্তা প্রশান্ত কুমার নন্দী স্বীকার করে বলেন, ‘আমি চেয়ারম্যানের নির্দেশে প্রকল্পের জন্য বাজেটের দুই লাখ টাকার চেক দিতে বাধ্য হয়েছি। তিনি ফোন করে বলেন জামাল মেম্বারকে টাকা দিতে। আমি তাই দিয়েছি। তবে যেভাবেই হোক, কাজটি আমি করিয়ে দেব।’
যদিও বিষয়টি অস্বীকার করেন ইউপি সদস্য জামাল উদ্দিন ব্যাপারী। তিনি বলেন, আমি ৪ নং ওয়ার্ডের মেম্বার। আমি কেন ৭ নং ওয়ার্ডে কাজ করব। হয়তো চেয়ারম্যান চেক নিতে বলেছিল তাই নিয়েছি। তাও আমার স্বরণে নেই ।
অভিযুক্ত চেয়ারম্যান কারাগারে থাকায় অভিযোগের বিষয়টি নিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
সামসুল নামে এক সচেতন নাগরিক বলেন, ইউনিয়নের প্রশাসনিক কর্মকর্তার সহায়তায় প্রকল্পের টাকা তুলে আত্মসাৎ করেছেন মিন্টু ফকির ও জামাল উদ্দীন ব্যাপারী মেম্বার। পরে ধামাচাপা দিতে ইউনিয়নবাসীর খাজনার টাকা দিয়ে সামান্য কাজ চালিয়েছে। এটা জনগণের সঙ্গে প্রতারণা। আমরা চাই, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হোক।
একই ক্ষোভ প্রকাশ করেন কৃষকরাও। বারিক প্রামানিক নামে একজন কৃষক বলেন, জনগণের জন্য করা সেই প্রকল্পে আমরা ঠিকভাবে বসতেও পারি না। বিষয়টি নিয়ে বারবার জনপ্রতিনিধিকে বললেও দায়িত্ব পালন করছে না।
আরেক কৃষক নজরুল ইসলাম বলেন, দুই লাখ টাকার কাজ নামমাত্র হয়েছে। বারবার বলেও পুরো কাজ করানো যায়নি। আমরা কার কাছে যাব।
এদিকে প্রকল্পের জন্য জমি দানকারী ব্যক্তি হারোনার রশিদও ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সরকারি জায়গায় নির্মান কাজ করতে চেয়েছিল। আমি নিজের জায়গা দিয়েছি। কারণ ভবিষ্যতে সরকারি জায়গা দিয়ে সড়ক নির্মান করা হলে তা ভাঙাও পড়তে পাড়ে। জায়গা দিয়েও লাভ হয়নি সেখানে কাজের কাজ কিছুই হয় নি। নির্মান করার কথা টয়লেট ও চারচালা ঘর।সেখানে টয়লেটতো হয়নি আবার বিশ্রামাগারটিও পরিপূর্ণ হয় নি।
স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রকল্পে অনিয়মের খবর প্রকাশ পাওয়ার পর বিষয়টি ধামাচাপা দিতে ইউনিয়নবাসীর করের টাকায় আবার কিছু কাজ শুরু করা হয়। কিন্তু কিছুদিন পরই তা আবার বন্ধ হয়ে যায়।
এ বিষয়ে কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক মো. তৌফিকুর রহমান বলেন, অনিয়মের সত্যতা পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।