লেখক ও বামপন্থি রাজনীতিক বদরুদ্দীন উমর আর নেই

প্রবীণ বামপন্থি রাজনীতিক, লেখক, গবেষক ও বুদ্ধিজীবী বদরুদ্দীন উমর আর নেই (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় আক্রান্ত বদরুদ্দীন উমরের শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে আজ সকালে তাঁকে রাজধানীর বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে আজ রোববার (৭ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০টা ৫ মিনিটের দিকে তিনি ইন্তেকাল করেন।
তাঁর মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সম্পাদক ফয়জুল হাকিম বলেন, উনার শারীরিক অবস্থা তো আগে থেকেই খারাপ ছিল। সকালে তার শারীরিক অবস্থা খারাপ দেখে হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে ১০টা ৫ মিনিটে তাঁকে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। শ্বাসকষ্ট ও রক্তচাপের সমস্যার কারণে গত ২২ জুলাই তাঁকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল।
বদরুদ্দীন উমর ১৯৩১ সালে ২০ ডিসেম্বর ভারতের বর্ধমান জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা আবুল হাশিম ছিলেন ভারতীয় উপমহাদেশের একজন মুসলিম জাতীয়তাবাদী রাজনীতিবিদ।
ভারত ভাগের পর ১৯৫০ সালে বদরুদ্দীন উমর ইন্টারমিডিয়েট পাস করে ঢাকায় চলে আসেন। এসে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। স্নাতক শেষ করে ১৯৫৫ সালে দর্শন শাস্ত্রে স্নাতকোত্তর করেন। এরপর পড়তে যান যুক্তরাজ্যে। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স করেন দর্শন, রাজনীতি ও অর্থনীতিতে। তারপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্স শেষ করার আগেই দর্শন বিভাগের খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে চাকরি শুরু করেছিলেন বদরুদ্দীন উমর। ১৯৫৬ সালে চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ এবং ১৯৫৭ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগে শিক্ষক হিসেবে তিনি যোগ দেন। তার হাত দিয়েই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞান বিভাগ চালু হয়।
ষাটের দশকে প্রকাশিত তার তিনটি বই ‘সাম্প্রদায়িকতা’ (১৯৬৬), ‘সংস্কৃতির সংকট’ (১৯৬৭) ও ‘সাংস্কৃতিক সাম্প্রদায়িকতা’ (১৯৬৯) বাঙালি জাতীয়তাবাদের গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ।
১৯৬৮ সালে শিক্ষকতার কাজে ইস্তফা দিয়ে সরাসরি রাজনীতি ও সার্বক্ষণিক লেখালেখিতে নিজেকে নিয়োজিত করেন বদরুদ্দীন উমর। তিনি ছিলেন বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশনের সভাপতি এবং গণতান্ত্রিক বিপ্লবী জোটের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী। এক সময় পূর্ববাংলার কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটিতে ছিলেন বদরুদ্দীন উমর। ২০০৩ সালে তিনি জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল নামে একটি সংগঠন গড়ে তোলেন, যার সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন আমৃত্যু। অন্তর্বর্তী সরকার চলতি বছরের স্বাধীনতা পুরস্কারের জন্য বদরুদ্দীন উমরকে মনোনীত করলেও তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন।