পরিবারের প্রয়োজনীয় সব পণ্যই নিজে উৎপাদন করেন খলিল

পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের ছোট ডালিমা গ্রামের বাসিন্দা মো. খলিলুর রহমান (৫৫) এখন এলাকার আদর্শ কৃষক উদ্যোক্তা। ১৯৯৭ সালে এসএসসি পাস করার পর ঢাকায় প্রাইভেট ফার্মে চাকরি করলেও সেখানে মন টেকেনি তার। অবশেষে ২০০০ সালে চাকরি ছেড়ে ফিরে আসেন গ্রামের বাড়িতে এবং কৃষিতে মনোনিবেশ করেন।
২০০০ সালে ইন্টিগ্রেটেড পোস্ট ম্যানেজমেন্ট (আইপিএম) প্রশিক্ষণ শুরু করে ২০০৫ সালে শেষ করেন। এরপর ইন্টিগ্রেটেড ক্রপ ম্যানেজমেন্ট (আইসিএম) কোর্স সম্পন্ন করেন ২০১০ সালে। ২০১২ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ইন্টিগ্রেটেড ফার্ম ম্যানেজমেন্ট (আইএফএমসি) কোর্সে অংশ নিয়ে তিনি কৃষিতে পূর্ণতা অর্জন করেন। এরপর থেকেই নিজের খামারে লবণ ও কেরোসিন ছাড়া পরিবারের প্রায় সব প্রয়োজনীয় পণ্য উৎপাদন শুরু করেন।
খলিলুর রহমানের বাড়ি এখন এক বিশাল পুষ্টি বাগান। আম, জাম, কাঁঠাল, লিচু, পেয়ারা, আখ, জাম্বুরা, জলপাইসহ নানা ফলদ ও বনজ বৃক্ষর পাশাপাশি রয়েছে সবজি ও মসলার আবাদ। বাড়ির এক কোণে গরু-মহিষের বর্জ্য থেকে সার তৈরি করেন, ফলে বাইরে থেকে সার কিনতে হয় না। সূর্যমুখীর আবাদ থেকে তৈল উৎপাদন করে পরিবারের চাহিদা মেটান। হাঁস-মুরগিও পালন করেন তিনি।
মূলত সবজি চাষই তার প্রধান পেশা। বর্তমানে লাউ, মিষ্টি কুমড়া ও ধুন্দল চাষ করে মাসে প্রায় ৫০ হাজার টাকা আয় করেন তিনি। এই আয় দিয়েই চার সন্তানের পড়াশোনা, মা-বাবার ভরণপোষণসহ সংসার চালাচ্ছেন। স্থানীয় কৃষি অফিস থেকেও নিয়মিত সহযোগিতা পাচ্ছেন তিনি। তার জমিতে মাচাং পদ্ধতিতে লাউ, ধুন্দল, মিষ্টি কুমড়া চাষ করেন এবং নিচে লতিরাজ কচু লাগান। এতে পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে বাজারেও বিক্রি করতে পারেন।
খলিলুর রহমান বলেন, সরকারের কাছে জোর অনুরোধ- আমরা যারা কৃষক পেশায় আছি। আমাদেরকে যেন আরেকটু সহযোগিতা করা হয়। তাহলে আমরা কৃষকরা নিত্য নতুন চাষে আগ্রহী হবো। দেশের কৃষি আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যাবে। আমরা সরকারের কাছ থেকে পূর্ণ সমর্থন পেলে দেশ এবং গোটা জাতির জন্য ভালো কিছু উপহার দিতে পারবো। কেননা কৃষক বাঁচলে দেশ বাঁচবে।
স্থানীয়রা জানান, খলিলের কাছ থেকে তারা আধুনিক কৃষি পদ্ধতি শিখছেন- যেমন ব্রি ও বিয়ার জাতের ধান, হাইব্রিড সবজি, এক জমিতে তিন ফসল চাষ, গরু মোটাতাজাকরণ, উন্নত ঘাস চাষ, ইউরিয়া মোলাসেস তৈরি এবং হাঁস-মুরগি পালনের নতুন কৌশল।
বাউফল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মিলন বলেন, খলিলুর রহমান আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি ব্যবহার করে সফলতা পেয়েছেন। মালচিং ও রেইস বেড পদ্ধতিতে অমৌসুমে সবজি আবাদ করে তিনি লাভবান হয়েছেন। তিনি এখন উপজেলার কৃষকদের জন্য অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত।