২০ বছর পর ধানের বাম্পার ফলন, নড়াইলে কৃষকের মুখে হাসি

দীর্ঘ দুই দশক পর নড়াইল জেলার কালিয়া উপজেলার পিরোলী এলাকায় আউশ ও আমন ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। প্রায় ১২৫ একর জমিতে ধানের সোনালি শস্য দোল খেতে দেখে এই অঞ্চলের কৃষকদের মুখে ফিরেছে হাসি।
স্থানীয় কৃষকরা জানান, গত ২০ বছর ধরে চিত্রা নদীর লবণাক্ত পানির কারণে এই বিস্তীর্ণ বিলে আউশ ও আমন ধান চাষ করা সম্ভব হচ্ছিল না। তবে এবার স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে নদীর স্লুইচগেটগুলো বন্ধ করে লোনা পানি প্রবেশ ঠেকানো হয়। এর ফলে জমি আবার উর্বর হয়ে ওঠায় দুই শতাধিক কৃষক নতুন করে ধান চাষে নেমে সাফল্য পেয়েছেন।
কৃষক ইসরাইল শেখ জানান, তিনি পাঁচ একর জমিতে আউশ ধান চাষ করে ভালো ফলন পেয়েছেন। এছাড়া আফজাল শেখ, কিবরিয়া মোল্যা, সুরত মোল্যা, খাজা জোয়ারদার ও বাইজিদ শেখসহ অনেকেই এবার দুই থেকে পাঁচ একর জমিতে ধান চাষ করেছেন। তারা বলেন, বহু বছর পর হারানো এই কৃষি ঐতিহ্য ফিরে পাওয়ায় সবাই খুব খুশি।
বয়োবৃদ্ধ কৃষক আব্দুল হান্নান শেখ (৮০) আবেগাপ্লুত হয়ে বলেন, আমাদের বাপ-দাদারা এই বিলে ধান করেছেন, আমরাও করেছি। ২০ বছর পর আবার সেই দৃশ্য ফিরে এসেছে।
স্থানীয়রা জানান, আগে কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি ও জেলেদের কারণে ধানের মৌসুমে স্লুইসগেট খুলে রাখা হতো। এতে নদীর মাছ সহজে বিলে ঢুকলেও জমি লোনাপানিতে তলিয়ে যেত এবং ফসল নষ্ট হতো।
কালিয়া প্রেসক্লাবের সভাপতি গোলাম মোর্শেদ শেখ কৃষকদের পক্ষ থেকে এই বিষয়টি উপজেলা প্রশাসনের নজরে আনেন। এরপর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রাশেদুজ্জামান এবং কৃষি কর্মকর্তা ইভা মল্লিকের উদ্যোগে চিত্রা নদীর স্লুইসগেট বন্ধ করে দেওয়া হয়। পাশাপাশি যশোরের অভয়নগর উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যানরাও তিনটি স্লুইসগেট বন্ধ করে দেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রাশেদুজ্জামান বলেন, কৃষকদের দাবির ভিত্তিতে লোনাপানি প্রবেশ বন্ধে প্রশাসন, কৃষি ও মৎস্য অফিস এবং পানি উন্নয়ন বোর্ড একসঙ্গে কাজ করেছে। কৃষকদের সাফল্যে আমরা আনন্দিত। এই ভালো ফলনের পাশাপাশি খড় এবং দেশি মাছের উৎপাদনও বেড়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষকরা।