বাগদা চিংড়ি উৎপাদনে বাগেরহাট দ্বিতীয়

দেশের সুন্দরবনের পাদদেশে অবস্থিত দক্ষিণাঞ্চলের উপকূলীয় জেলা বাগেরহাট। বাংলাদেশে বাগদা চিংড়ি উৎপাদনে এই জেলা দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে, যেখানে চিংড়ি উৎপাদনের হার ২৭ শতাংশ। লবণাক্ত পানিতে বাগদা চিংড়ি চাষ বেশি উপযোগী হলেও আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার এখন মিষ্টি পানিতেও চাষ সম্ভব হচ্ছে। এ কারণে এলাকার মানুষের জন্য নতুন অর্থনৈতিক সুযোগ তৈরি হয়েছে। পতিত জমি নিয়ে শিক্ষিত ও বেকার যুবকরা লিজ নিয়ে বাগদা চিংড়ি চাষে আগ্রহী হচ্ছে।
বাগদা চিংড়ি বিশ্বে সুস্বাদু হিসেবে খ্যাত। এর উল্লেখযোগ্য ক্রেতা রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশ, বিশেষ করে ফ্রান্স, ইতালি, নেদারল্যান্ডস, আরব দেশ, ভারত, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ায়। দেশে যেকোনো উৎসবে বাগদা চিংড়ি মেন্যুর অংশ হিসেবে নিয়মিত ব্যবহৃত হয়।
২০২৩-২৪ অর্থ বছরে বাগেরহাটে ৫ লাখ ৫১ হাজার ১৫৯.২ হেক্টর জমিতে ৪৬ হাজার ৩১৩টি ঘেরে বাগদা চিংড়ির উৎপাদন হয়েছে, যা ২০ হাজার ৯৪০.৩০ মেট্রিক টন। বিক্রির মাধ্যমে আয় হয়েছে ২ হাজার ৯৪ কোটি টাকা। এছাড়া রুই, কাতলা ও মৃগেল মাছ বিক্রির পরিমাণ ৪২১ কোটি টাকা।
উপজেলা ভিত্তিক সদর উপজেলায় ৭ হাজার ৬৭৩ হেক্টর জমিতে ৪ হাজার ৪৮০টি ঘেরে চিংড়ি উৎপাদন হয়েছে ৬ হাজার ৮৯৯ মেট্রিক টন। কচুয়া উপজেলায় ১ হাজার ৩৩৩.৫হেক্টর জমিতে ২ হাজার ৮৫৬টি ঘেরে চিংড়ি উৎপাদন হয়েছে ৭৫৭ মেট্রিক টন। মোরেলগঞ্জ উপজেলায় ১২ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে ৮ হাজার ৭৫০টি ঘেরে চিংড়ি উৎপাদন হয়েছে ৭ হাজার ৪২৪ মেট্রিক টন।
চিতলমারী উপজেলায় ৯৬৯.৭৭ হেক্টর জমিতে ২ হাজার ৪৯৩টি ঘেরে চিংড়ি উৎপাদন হয়েছে ১ হাজার ৪৫৩.০০ মেট্রিক টন। ফকিরহাট উপজেলায় ১ হাজার ৬১ হেক্টর জমিতে ২ হাজার ৩২৪টি ঘেরে চিংড়ি উৎপাদন হয়েছে ১ হাজার ৫৯৫.৬ মেট্রিক টন। মোল্লাহাট উপজেলায় ৫১৩ হেক্টর জমিতে ১ হাজার ৮১৪টি ঘেরে চিংড়ি উৎপাদন হয়েছে ১ হাজার ১৮৭ মেট্রিক টন। রামপাল উপজেলায় ১৩ হাজার ১২৯ হেক্টর জমিতে ১৭ হাজার ৪৫০টি ঘেরে চিংড়ি উৎপাদন হয়েছে ১১ হাজার ২০১ মেট্রিকটন ও মোংলা উপজেলায় ১৩ হাজার ৬১১ হেক্টর জমিতে ৬ হাজার ৭০টি ঘেরে চিংড়ি উৎপাদন হয়েছে ১১ হাজার ৪৬৭ মেট্রিক টন। শরনখোলা উপজেলায় ৫১ হেক্টর জমিতে ৭৬টি ঘেরে চিংড়ি উৎপাদন হয়েছে ২৩ মেট্রিক টন।
কচুয়া মৎস্য অফিসের ক্ষেত্র সহকারী সুমনা সাহা জানান, ১ একর জমিতে বাগদা চিংড়ি চাষের খরচ ১ লাখ টাকা, যা বিক্রি করলে আয় হয় ২ লাখ ৩০ হাজার টাকা। ফলে চাষির লাভ হয় ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা।
মেরিন ফিশারিজ কর্মকর্তা দীপংকর কুমার চক্রবর্তী জানান, ব্লিচিং পাউডার ব্যবহার করে পানি জীবাণুমুক্ত করলে চিংড়ির ভাইরাসের আক্রমণ কম হয়। ৩০-৪৫ দিন নার্সিং ও ৩.৫-৫ ফুট ঘের গভীরতা রাখলে চিংড়ির বৃদ্ধি ভালো হয়। ৫-২৫ পিপিটি লবণ মাত্রার পানি বাগদা চাষে উপযোগী, তবে ১২ পিপিটিতে বৃদ্ধি সর্বোত্তম। সাধারণত ৯০-১২০ দিনে মাছ বিক্রয়ের উপযুক্ত হয়।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ড. আবুল কালাম আজাদ জানান, বাংলাদেশ পৃথিবীর অন্যতম নিরাপদ চিংড়ি উৎপাদনকারী দেশ। বাগেরহাটে বাগদা চিংড়ি জি আই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে, যা ‘সাদা সোনার’ খ্যাতি দিয়েছে। সমুদ্র উপকূলবর্তী এ জেলা থেকে ১ হাজার ৯১১ মেট্রিক টন ইলিশ আহরণ করা হয়েছে। দেশের রপ্তানি আয় বৃদ্ধিতে ও জেলার জীবিকার ক্ষেত্রে মৎস্য খাত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।