কুমিল্লায় ভোরের আলো ফোটে ছিনতাই আতঙ্কে

কুমিল্লা নগরীর শান্ত ভোর মুহূর্তেই পরিণত হয় ছিনতাই আতঙ্কে। শহরের ঘুম ভাঙার আগেই সকালের পথচারীরা ও দূরবর্তী গন্তব্যের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ পড়েন ছিনতাইকারীর খপ্পরে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ভোরের ফাঁকা সড়ককে টার্গেট করে দাপট দেখাচ্ছে ছিনতাইকারীরা। মোটরসাইকেলে এসে ধারালো অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে মুহূর্তেই লুটে নিচ্ছে সর্বস্ব। কখনো টার্গেট করা ব্যক্তিকে কুপিয়ে আহত করা হয়। এতে সাধারণ মানুষের মাঝে তীব্র উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে।
গতকাল রোববার (৭ সেপ্টেম্বর) ভোর সাড়ে ৫টার দিকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। নগরীর কাপ্তান বাজার এলাকার বাসিন্দা মো. মঈনুল ইসলাম ঢাকা যাওয়ার জন্য রওনা হন। বাসা থেকে বের হওয়ার কিছুক্ষণ পর রাস্তায় একটা সিএনজিচালিত অটোরিকশা আসে। তিনি সেই অটোরিকশাতে ওঠেন। অটোরিকশার পেছনে আগে থেকেই দুজন যাত্রী বসা। সামনে চালকসহ দুজন। মঈনুল পেছনে বাম পাশের সিটে বসেন। আদালতের উত্তর গেটে আসার পর অটোরিকশা চালক বলেন, পেছনের চাকায় হাওয়া কম, তাই পেছন থেকে একজন নেমে আসে ও মঈনুলকে ছুরি ধরে বলে, যা আছে সব বের কর। অন্য আরেকজন অটোরিকশা মধ্যে থেকেই ছুরি ধরে মঈনকে আঘাত করে। ভয়ে তিনি সব কিছু দিয়ে দেন। ঘটনার পর থানায় গেলেও আশানুরূপ সাড়া মেলেনি। পরে একটি মোবাইল ফোন হারানোর সাধারণ ডায়েরি করতে বলে পুলিশ। সপ্তাহ পার হলেও এখনো ছিনতাইকারীরা অধরা।
দেড়মাস আগে কক্সবাজার থেকে বেড়ানো শেষে ভোরে কুমিল্লায় নিজ বাড়িতে ফিরছিলেন কালীপদ দেবনাথ ও তার বন্ধু পলাশ দে। ভোর সাড়ে ৫টার দিকে নগরীর সালাউদ্দিন মোড়ে আসার পর ছিনতাইকারীরা ধারালো অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে মোবাইলফোনসহ অন্যান্য বেশ কিছু নিত্য ব্যবহার্য জিনিসপত্র নিয়ে যায়। থানায় লিখিত অভিযোগ করা হলেও এখনো অধরা ছিনতাইকারী চক্র।
গেল কয়েক মাস ধরে কুমিল্লা নগরীতে ভোর হলেই এমন ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। থানায় ও গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে মৌখিক ও লিখিত অভিযোগ আসছে অহরহ। কেউ কেউ আবার ঝামেলা এড়িয়ে চলতে ছিনতাইয়ের বিষয়গুলো গোপন রাখছেন।
নগরীর ঠাকুরপাড়া বিসিক এলাকার বাসিন্দা আবুল হোসেন বলেন, ভোর হলেই ঠাকুরপাড়া, রানীরবাজার এলাকার বিভিন্ন মোড়ে ছিনতাইকারীরা ওঁৎপেতে থাকে। রিকশায় বা হেঁটে কাউকে যেতে দেখলেই ধারালো অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে সর্বস্ব ছিনিয়ে নেয়।
সম্প্রতি পুলিশ সুপারের বাসভবনের সামনে একটি ছিনতাইয়ের ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায় কুমিল্লা পুলিশ সুপারের বাসভবন এলাকা রোববার দিনগত রাত সোয়া ৩টার দিকে মোটরসাইকেলে আসা তিনজন ছিনতাইকারী এক অটোরিকশাযাত্রীর মোবাইলফোন ও টাকা নিয়ে যায়।
৭ আগস্ট ভোর ৬টার দিকে নগরীর টমছম ব্রিজ সংলগ্ন কাসেমুল উলুম মাদ্রাসার পাশে এক মাদ্রাসা শিক্ষক ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে গুরুতর আহত হন। এ সময় তার কাছ থেকে নগদ টাকা, মোবাইল ফোন ও মানিব্যাগ ছিনিয়ে নেয় দুর্বৃত্তরা।
এর আগে, ৪ আগস্ট ভোরে শাসনগাছা এলাকায় ছিনতাইয়ের শিকার হন চান্দিনার বাসিন্দা ইব্রাহীম। তার কাছ থেকেও মোবাইলফোন ও নগদ টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার পর ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায় ছিনতাইকারীরা।
অনুসন্ধানে জানা যায়, নগরীর এখন কুড়িটির বেশি ছিনতাইকারী গ্রুপ সক্রিয় আছে। যাদের বেশির ভাগ মাদকাসক্ত। মাদকের টাকা জোগাড় করতে তারা ছিনতাই করছে। তাদের অনেকের বিরুদ্ধে থানায় মামলা রয়েছে।
এদিকে নগরবাসীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বসানো সিসিটিভি ক্যামেরাগুলোর বেশিরভাগই অকার্যকর। কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের আওতাধীন এসব ক্যামেরা মেরামতের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ কর্মকর্তারা।
ছিনতাই বেড়েছে ও ছিনতাইকারী ধরাও পড়েছে বলে স্বীকার করেন কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মহিনুল ইসলাম। তিনি জানান, গেল এক বছরে ৪০ জন ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে পর্যাপ্ত পুলিশ সদস্য, গাড়ির অভাব রয়েছে। পাশাপাশি সিসি ক্যামেরার অভাব রয়েছে। লজিস্টিক সাপোর্ট বাড়লে টহল বৃদ্ধি করা যেতে। তাতে ছিনতাইকারীর দৌরাত্ম্য কমে যেত।