ভাঙ্গায় সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্বিন্যাস নিয়ে আন্দোলন স্থগিত

ফরিদপুরের ভাঙ্গায় সীমানা পুনর্বিন্যাস নিয়ে মহাসড়ক অবরোধ আজ মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) সকালে শুরু হলেও সকাল সাড়ে ৯টা থেকে আবার যান চলাচল শুরু হয়। সপ্তম দিনের মতো উপজেলার আলগী ও হামিরদী ইউনিয়ন দুটি ফরিদপুর-২ আসনে অন্তর্ভুক্ত করায় ফরিদপুর-ভাঙ্গা মহাসড়ক অবরোধ করে রেখেছিল স্থানীয়রা। এরপর সর্বদলীয় বৈঠকে সিদ্ধান্ত সীমানা পুনর্বিন্যাস নিয়ে প্রতিবাদ কর্মসূচি চার দিনের জন্য স্থগিত ঘোষণা করা।
আজ সকাল সাড়ে ৯টার দিকে সড়ক থেকে সরে যায় অবরোধকারীরা। এরপর থেকেই সড়কে প্রশাসনের ব্যাপক তৎপরতা দেখা যায়। সড়ক ও ভাঙ্গা গোলচত্ত্বর এলাকায় সেনাবাহিনীর পাশাপাশি পুলিশ, র্যাব ও এপিবিএনের সদস্যরা নিয়োজিত রয়েছেন। তারা মহাসড়ক ছাড়াও বিভিন্ন এলাকা প্রদক্ষিণ করছেন।
সর্বদলীয় বৈঠকে সিদ্ধান্ত
ভাঙ্গায় সর্বদলীয় বৈঠকে সিদ্ধান্ত সীমানা পুনর্বিন্যাস নিয়ে যে প্রতিবাদ কর্মসূচি তা চার দিনের জন্য স্থগিত ঘোষণার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সৈয়দ মোদাররেস আলী ইছা। তিনি বলেন, এ আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে বৈঠকে বসে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আগামী ২১ তারিখে হাইকোর্টে এই আসনের দুটি ইউনিয়ন অন্য আসনে যাওয়া নিয়ে একটি রিট করা হয়েছে। ওই দিন শুনানি রয়েছে।
শুনানিতে কী সিদ্ধান্ত আসে তার পরই নতুন করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানান মোদাররেস আলী।
এদিকে, দুপুরে নৈরাজ্যের প্রতিবাদে উপজেলা বিএনপির উদ্যোগে বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। মিছিলে জেলা ও উপজেলা বিএনপির নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
যা বললেন বিএনপি নেতারা
ভাঙ্গার সীমানা পুনর্বিন্যাস নিয়ে গতকাল যে নৈরাজ্যের ঘটনা ঘটেছে তার জন্য আওয়ামী লীগের দোসর নিক্সন চৌধুরী ও কাজী জাফর উল্লাহকে দায়ী করে বক্তব্য দেন ফরিদপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সৈয়দ মোদাররেস আলী ইছা। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনের সীমানা পুনর্বিন্যাস নিয়ে সাধারণ মানুষের আন্দোলনের সঙ্গে আওয়ামী লীগের লোকজন প্রবেশ করে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে। আন্দোলন নিয়ে কোনো নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে দেওয়া হবে না।
এদিকে বেলা ১টায় ভাঙ্গা কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মসজিদের সামনে সর্বদলীয় সমাবেশ থেকে আগামী ২১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আন্দোলন স্থগিতের ঘোষণা দেন ভাঙ্গা উপজেলা বিএনপির সভাপতি ইকবাল হোসেন সেলিম। তিনি বলেন, সম্প্রতি ফেসবুক লাইভে নিক্সন চৌধুরীরএকটি বক্তব্য ভাইরাল হয়। ভাঙ্গা সীমানা নিয়ে সাধারণ মানুষের আন্দোলনের সঙ্গে আওয়ামী লীগের লোকজন প্রবেশ করে বিভিন্ন নৈরাজ্য সৃষ্টি করছে।
উপজেলার পরিস্থিতি
উপজেলার বিভিন্ন সরকারি অফিসে ভাঙচুর করা স্থানগুলো এখনও পরিষ্কার করা হয়নি। এলোমেলো ছিটানো রয়েছে অফিসসহ বাইরে পরিবেশ। এখনও ওই স্থানগুলো থেকে পোড়া গন্ধ নাকে আসে। উপজেলা পরিষদের বাইরে পুরোনো অবস্থায় থাকা আটটি মোটরসাইকেল এখনও সেই অবস্থায় রয়েছে। প্রতিটি স্থানেই ধ্বংসের চিহ্ন এখনও স্পষ্ট রয়েছে। অনেকেই অফিস করতে এলেও উপজেলার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিচতলার তাদের নির্ধারিত কক্ষে বসতে পারেননি।
বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক
তবে সকাল থেকে তিন মহাসড়কে যানবাহন চলছে স্বাভাবিকভাবেই। তবে স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় যানবাহন কম ছিল রাস্তায়। বাজারেও দোকানপাট পুরোপুরি খোলেনি। তবে গতকাল সোমবার দুপুরের ঘটনার পর থেকেই অনেকের মনে ভয় রয়েছে। এজন্য তারা সরকারের কাছে অতি দ্রুত এর সমাধান চেয়েছে।
ঘটনা পর বাসিন্দারা যা বলছেন
হামিরদী ইউনিয়নের পুকুরিয়া এলাকাল কয়েকজন বাসিন্দা জানান, তারা জেলা প্রশাসকের আশ্বাসে অবরোধ থেকে সরে এসেছেন। তারা ২১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে চান। তবে তাদের দাবি না মানা হলে আবারও কঠোর আন্দোলন করতে চান তারা। এ সময় তারা বলেন, কোনোভাবেই আমাদের দূরের সেই সালথা উপজেলার সঙ্গে যুক্ত করলে আমরা কোনোভাবেই মেনে নিব না।
ইউনিয়নটির বাসিন্দারা অনেকেই গতকালের ঘটনার পর থেকে গ্রেপ্তার আতঙ্কে রাতে নিজ বাড়িতে থাকছেন না। তারা নিরাপত্তার জন্য আশপাশের বাড়িতে অবস্থান করছেন।
ইসিকে ডিসির চিঠি, যা লেখা আছে চিঠিতে
ফরিদপুর-৪ আসনের ভাঙ্গা উপজেলার আলগী ও হামিরদী ইউনিয়ন ফরিদপুর-২ আসনে যুক্ত করার প্রতিবাদে আন্দোলন অব্যাহত রয়েছে। এরই প্রেক্ষাপটে বিষয়টি পুনর্বিবেচনার অনুরোধ জানিয়ে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে চিঠি দিয়েছেন জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ কামরুল হাসান মোল্যা। গতকাল সোমবার নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদের কাছে অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দেন তিনি।
চিঠিতে জেলা প্রশাসক লেখেন, ফরিদপুর-২ এবং ফরিদপুর-৪ সংসদীয় সীমানা পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে। ওই তালিকায় ফরিদপুর-৪-এর অন্তর্গত দুটি ইউনিয়ন (আলগী ও হামিরদী) ফরিদপুর-২ আসনের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তালিকা প্রকাশিত হওয়ার পর গত ৪ সেপ্টেম্বর থেকে ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা উপজেলার আলগী ও হামিরদী ইউনিয়নসহ ভাঙ্গা উপজেলার সাধারণ জনগণ ওই আসনবিন্যাস বাতিলের দাবিতে মহাসড়ক ও রেলপথ অবরোধসহ বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করতে থাকে। ফলে ক্রমান্বয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে থাকে। সর্বশেষ ১৫ সেপ্টেম্বর বিক্ষোভকারীরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়, উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়, ভাঙ্গা থানা, হাইওয়ে পুলিশের কার্যালয় ও সরকারি গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। ফলে দক্ষিণাঞ্চলের ২১টি জেলার সঙ্গে যোগাযোগ ব্যাহত হওয়ার কারণে সাধারণ জনগণকে তীব্র ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হয়।
পুলিশ সুপার যা বললেন
পুলিশ সুপার মো. আব্দুল জলিল বলেছেন, যারা এ ঘটনায় জড়িত তাদের অবশ্যই আইনের আওতায় আনব। ইতোমধ্যে আমি তাদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার করতে নির্দেশ দিয়েছি। জনগণের শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য যা যা করণীয় আমরা সব ব্যবস্থা নেব।
এই ঘটনায় এখনও কোনো মামলা রুজু হয়নি জানিয়ে পুলিশ সুপার বলেন, এখন জড়িতদের চিহ্নিত ও ঘটনা নিরূপণের কাজ চলছে।
জেলা প্রশাসক যা বললেন
জেলা প্রশাসক (ডিসি) কামরুল হাসান মোল্লা বলেছেন, আমরা নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে কথা বলেছি এবং মানুষের আবেগ-অনুভূতি তুলে ধরে একটি প্রতিবেদন পাঠিয়েছি। সেটি বিবেচনা করা হবে বলে আমি মনে করছি। যেহেতু দুটি ইউনিয়ন কেটে নেওয়ার বিষয়ে হাইকোর্টে রিট হয়েছে, ২১ তারিখে শুনানির পর জানা যাবে বিষয়টি নিয়ে। তিনি ভাঙ্গার জনগণকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়ে আরও বলেন, আপনাদের কর্মসূচি থেকে ফিরে আসুন এবং সময়ের জন্য অপেক্ষা করুন। ভাঙ্গার সুনাম রক্ষায় জনগণের যেন কষ্ট না হয়, সেজন্য আপনারা কর্মসূচি থেকে সরে আসুন।
এদিকে কর্মসূচি স্থগিত থাকায় ভাঙ্গার পরিবেশ শান্ত ও স্বাভাবিক রয়েছে। যান চলাচল স্বাভাবিক অবস্থায় রয়েছে। অতি দ্রুত নির্বাচন কমিশন একটি সময়োচিত সিদ্ধান্ত নেবে বলেই তারা মনে করছে।
ভাঙ্গার দুই ইউনিয়ন ফিরিয়ে দেওয়ার বিষয়ে কৃষক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুলের করা রিটের পরিপ্রেক্ষিতে মহামান্য হাইকোর্ট নির্বাচন কমিশনকে রুল জারি করেছে। আজ দুপুরে এই রুল জারি করেন আদালত।