ময়মনসিংহ জামায়াতের সাবেক আমিরের সদস্যপদ স্থগিত

দলীয় কোন্দলে ময়মনসিংহ জেলা জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির অধ্যাপক জসিম উদ্দিনের সাংগঠনিক কার্যক্রম (রুকনিয়াত) স্থগিত করা হয়েছে। এ ঘটনায় ফুলবাড়িয়া উপজেলা জামায়াতের নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও চলছে আলোচনা-সমালোচনা।
আজ বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) জেলা জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি মাওলানা মোজাম্মেল হক আকন্দ স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বর্তমানে অধ্যাপক জসিম উদ্দিনের সামগ্রিক তৎপরতায় সংগঠনের সুনাম, সুখ্যাতি, ঐতিহ্য, শৃঙ্খলা ও পরিবেশ বিনষ্ট হচ্ছে, যা গঠনতন্ত্রের ধারা ৬২ এর উপধারা ২ (ক) ও (খ) এর সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। এ নিয়ে গত সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) জেলা জামায়াতের কর্মপরিষদের বৈঠকে সর্বসম্মতিক্রমে অধ্যাপক জসিম উদ্দিনের সাংগঠনিক কার্যক্রম (রুকনিয়াত) স্থগিতের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জেলা জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি মাওলানা মোজাম্মেল হক আকন্দ আরও বলেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী একটি সুশৃঙ্খল দল। প্রতিষ্ঠার পর হতে অদ্যবধি কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর ঊর্ধ্বে থেকে দলীয় শৃঙ্খলা অব্যাহত রেখেছে। আগামীতেও দলীয় শৃঙ্খলার ব্যাপারে জামায়াতে ইসলামী আপসহীন থাকবে বলেও জানিয়েছেন।
গত শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) বিকেলে ময়মনসিংহ-৬ (ফুলবাড়িয়া) আসনে জামায়াত মনোনীত প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে অধ্যাপক জসিম উদ্দিনের সমর্থনে হাজারো মানুষের আংশগ্রহণে ‘ফুলবাড়িয়া ঐক্যবদ্ধ জনতা’র ব্যানারে এক গণমিছিল অনুষ্ঠিত হয়। মিছিলের আগের দিন ফুলবাড়িয়া থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারি আব্দুর রাজ্জাক। এই জিডি থেকেই স্পষ্ট হয়ে ওঠে কোন্দলের বিষয়টি।
এ ব্যাপারে ফুলবাড়িয়া উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির ফজলুল হক শামীম সাংবাদিকদের বলেন, অধ্যাপক জসিম উদ্দিনের সাংগঠনিক কার্যক্রম সাসপেন্ড (স্থগিত) করা হয়েছে।
আসনটিতে জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির কামরুল আহসান মিলন দলীয় মনোনয়ন পেয়ে এলাকায় নির্বাচনি গণসংযোগ করে চলেছেন। কিন্তু সাবেক আমির অধ্যাপক জসিম উদ্দিনের সমর্থকরা আসনটিতে দলীয় মনোনয়ন পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়ে আসছিল। এ দাবিতে তারা মিছিল ও সভা করেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে তারা গত শনিবার গণমিছিলের ডাক দেয়। এ খবরে উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারি আব্দুর রাজ্জাক বেশ কিছু লোকের নামে ফুলবাড়িয়া থানায় জিডি করেন। জিডিতে ১০ জনের নামে অভিযোগে বলা হয়, ‘তারা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাবেক নেতাকর্মী এবং অত্যন্ত খারাপ প্রকৃতির। আমাদের দলীয় সংগঠন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কর্মীদের উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় হুমকি দিচ্ছে, আগামী ১৩ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিতব্য জসিম উদ্দিনের গণমিছিলে যোগদান না করলে, খুন করে দুই টুকরো করে ফেলবে এবং ফুলবাড়িয়া উপজেলা হতে বের করে দেবে।’
এ বিষয়ে সাবেক আমির অধ্যাপক জসিম উদ্দিনের সমর্থক উপজেলা শিবিরের সাবেক সভাপতি জাকির হোসেন বলেন, ‘অভিযোগ পেয়ে পুলিশ আমাদের বাড়িতে যায়। আমরা কেউ দুষ্কৃতকারী নই। পরে থানায় গিয়ে অনেকেই পুলিশের সঙ্গে দেখা করে কথা বলেন।’
এদিকে জামায়াতের সাবেক আমির অধ্যাপক জসিম উদ্দিন আজ সন্ধ্যায় বলেন, ‘যাদের নামে থানায় জিডি করা হয়েছে তারা সবাই জামায়াত-শিবিরের সাবেক নেতাকর্মী। তারা এখনও জামায়াতের কর্মী, নিয়মিত এয়ানত (চাঁদা) দিয়ে আসছেন। আমাকে না জানিয়ে, কারণ দর্শানোর নোটিশ না দিয়ে সরাসরি আমার রুকনিয়াত স্থগিত করা হয়েছে।’
আজ সন্ধ্যায় ফুলবাড়িয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো রুকনুজ্জামান বলেন, ‘জিডিতে বলা হয়েছিল আট-দশ জন আওয়ামী লীগের দুষ্কৃতকারী অধ্যাপক জসিমের সমর্থনে মিছিল করতে পারে। এই অভিযোগের পর পুলিশ কারও কারও বাড়িতে যায়। খবর পেয়ে অনেকেই স্বেচ্ছায় থানায় এসে দেখা করেছে। পুলিশ তাদের সঙ্গে কথা বলেছে এবং তদন্ত করে জানতে পারে—যাদের নামে অভিযোগে দেওয়া হয়েছে তারা কেউ আওয়ামী লীগের লোকজন বা দুষ্কৃতকারী নয়। তারা সবাই জামায়াতের লোকজন।’
ময়মনসিংহের ১১টি আসনের মধ্যে এই আসনটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এর আগে আধ্যাপক জসিম উদ্দিন এই আসনে জামায়াতের হয়ে ১৯৯১, ১৯৯৬ সালে ও ২০০১ সালে চারদলীয় জোটের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন । তিনি ১১৯১ সালের নির্বাচনে ২১ হাজার ৮৩০ ভোট পান। তার চেয়ে ৪১৪ ভোট বেশি পেয়ে নির্বাচিত হন বিএনপির প্রার্থী আমিরুল ইসলাম হীরা। ২০০১ সালে চার দলীয় জোটের প্রার্থী হিসেবে তিনি পেয়েছিলেন ৪৭ হাজার ৩৭৫ ভোট। তার চেয়ে তিন হাজার ৯৫২ ভোট বেশি পেয়ে নির্বাচিত হন বিএনপির বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার সামসউদ্দিন। এবার কামরুল আহসান মিলন প্রথমবারের মতো আসনটিতে জামায়াতের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করতে যাচ্ছেন।