ইইউ চায় বাংলাদেশে নির্বাচনের মাধ্যমে দ্রুত গণতন্ত্র ফিরে আসুক : আমীর খসরু
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) চায় নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব গণতন্ত্র ফিরে আসুক। এই বিষয়ে আমাদের তাদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে।
আজ বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বিকেলে রাজধানীর গুলশানে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দূতাবাসে ইইউর উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকের পর সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন আমীর খসরু।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান দলটির পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন। বিএনপি প্রতিনিধি দলের অপর সদস্যরা হলেন—স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা হুমায়ুন কবির, দলের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নাসির উদ্দিন অসীম ও সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ।
অন্যদিকে, ইউরোপীয় পার্লামেন্ট প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন মুনির সাতৌরী। এ প্রতিনিধি দলের সদস্যরা হলেন লুক্সেমবার্গের(ইপিপি) ইসাবেলা ভিয়েডার-লিমা, পোল্যান্ডের (ইসিআর) আরকাদিউস মুলারচিক, এস্তোনিয়ার(রিনিউ ইউরোপ) উর্মাস পায়েট ও নেদারল্যান্ডসের (দ্য গ্রিন্স) কাতারিনা ভিয়েইরা।
বৈঠকের পর দূতাবাস থেকে বেরিয়ে এসে আমীর খসরু বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) প্রত্যাশা করছে যত দ্রুত সম্ভব বাংলাদেশ গণতন্ত্র ফিরে আসবে। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ নির্বাচনের দিকে যাচ্ছে। ফেব্রুয়ারি প্রথমার্ধে এই নির্বাচন হবে। বাংলাদেশ যে নির্বাচনের দিকে যাচ্ছে, এটাতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ইউরোপীয় পার্লামেন্ট সন্তুষ্ট্। ওরা চায়, বাংলাদেশ যত তাড়াতাড়ি সম্ভব গণতন্ত্রের পথে চলুক এবং ট্রানজিশনাল করে একটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মধ্যে ফিরে আসুক। এই বিষয় নিয়ে আমাদের আলোচনা হয়েছে।’
আমীর খসরু আরও বলেন, ‘এর প্রেক্ষাপটে আগামী দিনে আমরা কী করতে যাচ্ছি, ওদের ভূমিকা কী হবে এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের যে কথাবার্তা হচ্ছে, সেগুলো আলোচনার মধ্যে উঠেছে। শেষ কথা হলো—বাংলাদেশে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব একটি নির্বাচনের মাধ্যমে দেশে গণতন্ত্র ফিরে আসা দরকার। এটা তারা (ই্ইউ) চায়। আমরা যারা গণতন্ত্রকামী মানুষ বিশ্বজুড়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ সবাই চাচ্ছে, বাংলাদেশে যত তাড়াতাড়ি একটি গণতান্ত্রিক অর্ডার ফিরে আসুক। এজন্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন কাজ করতে চায়। আমরা সবাই মিলে এই কাজটা যত তাড়াতাড়ি সম্পন্ন করতে পারি, সেটা দেশের জন্য মঙ্গল, গণতন্ত্রের জন্য মঙ্গল।’
‘বাণিজ্য আরও সহযোগিতা বাড়ানোর অনুরোধ’
বিএনপি প্রতিনিধি দলের আরেক সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘বাংলাদেশের উন্নয়ন ও বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা—এই দুই ক্ষেত্রেই ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহযোগিতা আমরা পেয়েছি সবসময়। তারা এই সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছে এবং তারা চায়, যত দ্রুত সম্ভব বাংলাদেশ গণতন্ত্রে ফিরে আসুক, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হয় এটা তারা প্রত্যাশা করে। আমরা তাদেরকে গণতন্ত্র সুসংহতকরণে সহযোগিতার পাশাপাশি বাংলাদেশে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহযোগিতা আরও বৃদ্ধি পাবে, এটা আমরা তাদেরকে অনুরোধ করেছি। তারা সেটাতে সম্মতি জানিয়েছে এবং আগ্রহ প্রকাশ করেছে।’
নজরুল ইসলাম খান আরও বলেন, ‘আমরা আশা করি, আগামী দিনে ইনশাল্লাহ বাংলাদেশের জনগণ যেজন্য দীর্ঘ ১৬ বছর লড়াই করেছে, গুম হয়েছে, খুন হয়েছে, নানাভাবে নির্যাতিত হয়েছে, বিশেষ করে গত জুলাই-আগস্টে যে সীমাহীন অত্যাচার সহ্য করেছে; এর মধ্য দিয়ে গণতন্ত্রের যে আকাঙ্ক্ষা সেই আকাঙ্ক্ষা খুব দ্রুত বাস্তবায়ন হবে। সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী ফেব্রুয়ারিতেই নির্বাচন হবে ইনশাল্লাহ এবং সেই নির্বাচনের মাধ্যমে আমাদের দীর্ঘদিনের যে স্বপ্ন গণতন্ত্র, সেটা পুনঃপ্রতিষ্ঠা হবে।’
কয়েকটি রাজনৈতিক দলের পিআর পদ্ধতিতে ভোটের দাবি প্রসঙ্গে কোনো আলোচনা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, ‘এত স্পেসিফিকেলি এগুলো নিয়ে আলোচনার প্রশ্ন না। আর পিআর তো এখন আলোচনা বিষয়বস্তু না। কারণ, যদি আপনি রাজিও হন এই নির্বাচন পিআরের মাধ্যমে হবে না। সেটা তো হবে সংবিধান সংশোধনের পরে। কাজেই আমরা আলোচনা করেছি আসন্ন নির্বাচন নিয়ে। এই নির্বাচনের পরে কী হবে বা সামনের নির্বাচন নিয়ে কী হবে, এটা এখন আলোচনার বিষয়বস্তু না।’
এ প্রসঙ্গে বিএনপিনেতা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘এটা আলোচনা হয়েছে এবং আলোচনার মধ্যে ওরা অনুধাবন করতে পেরেছে, পিআর যদি কেউ চায়ও সেটা তো আগামীতে জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে সংসদে এসে পাস করতে হবে। জনগণের ম্যান্ডেট নিতে হবে। আমরা কিছু লোক টেবিলের চারিদিকে বসে কিছু রাজনৈতিক দল জনগণের পক্ষ থেকে আগ্রহ থেকে এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব না। এটা জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে আগামী নির্বাচনের পরে যদি জনগণ চায় হবে আর না চাইলে হবে না।’
পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন প্রসঙ্গে বিএনপিনেতা নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন একসঙ্গে আন্দোলন করেছি। একজন আরেকজনের বিরুদ্ধে আমরা কিছু বলতে চাচ্ছি না। কিন্তু কবে আমরা পিআরের আলোচনা শুরু করলাম? কে কবে পিআরের দাবিতে আন্দোলন-সংগ্রাম করেছে। এই যে জুলাই আন্দোলন হলো সেখানে কি পিআর এর দাবি ছিল? এটা একটা নতুন দাবি। নির্বাচন সামনে রেখে এই সময়ে এরকম দাবিতে আন্দোলন, এই ধরনের কথা-বার্তা। আমরা মনে করি, তারা বুঝতে পারবে তাদের কী করা উচিত এবং তারা আসন্ন নির্বাচনকে সুষ্ঠু করার ব্যাপারে সহযোগিতা করবে।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু বলেন, ‘কোনো রাজনৈতিক দলকে বাংলাদেশের মানুষ এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে বলেনি, সুতরাং এটা আলোচনার বিষয় না। কোনো রাজনৈতিক দলের যদি এতে ইচ্ছা থাকে, তারা আগামী নির্বাচনে জনগণের কাছে এটা নিয়ে যেতে হবে। ম্যান্ডেট নিয়ে সংসদে আসতে হবে।’