স্কুল মাঠের মাটি কেটে হচ্ছে ‘শিশুপার্ক’

রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলায় চর আষাড়িয়াদহের দুটি বিদ্যালয়ের খেলার মাঠ থেকে মাটি কেটে গভীর গর্ত করার অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের তত্ত্বাবধানেই মাটি উত্তোলন করা হয়েছে। তবে প্রশাসনের দাবি, একটি শিশুপার্ক তৈরির জন্য মাটি কাটা হয়েছে। এতে স্থানীয়দের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
প্রায় ২০-২৫ দিন আগে চর আষাড়িয়াদহের কানাপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয় ও উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠের মাটি কেটে অন্যত্র ফেলা হয়। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউএনও’র উপস্থিতিতে এই মাটি দিয়ে স্কুলেরই একটি খাল ভরাট করা হয়েছে। এতে খেলার মাঠে গভীর গর্ত তৈরি হয়েছে, যা সাম্প্রতিক বৃষ্টির কারণে এখন পুকুরের মতো আকার নিয়েছে। ফলে চারপাশের মাটি ধসে পড়ছে এবং সরকারি অর্থায়নে নির্মিত দুটি বিদ্যালয় ভবনও ঝুঁকির মুখে পড়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা আঙ্গুর হোসেন বলেন, হঠাৎ করে এত বড় গর্ত খোঁড়ার কারণে মানুষ কিছু বুঝতে পারছে না। স্কুলের শিশুরা যেকোনো মুহূর্তে গর্তে পড়ে মারাত্মক দুর্ঘটনার শিকার হতে পারে। এটি অত্যন্ত বিপজ্জনক। আমরা দ্রুত এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা চাই।
চর আষাড়িয়াদহ ইউনিয়ন যুবদলের সদস্য সচিব মো. শামিম বলেন, ইতোমধ্যে দুই শিশু এই গর্তে পড়ে গিয়েছিল। স্থানীয়দের সহায়তায় তারা বেঁচে গেলেও ভবিষ্যতে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়া বিদ্যালয়ের ভবন দুটিও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে।
চর আষাড়িয়াদহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আফতাব উদ্দিন জানান, তিনি ইউএনওকে বলেছিলেন অন্য জায়গা থেকে মাটি আনার জন্য। তখন ইউএনও তাকে আশ্বাস দিয়েছিলেন যে পরবর্তীতে গর্ত ভরাট করে দেওয়া হবে এবং তার সিদ্ধান্তের ওপর আস্থা রাখতে বলেন। প্রধান শিক্ষক বলেন, আমি যথেষ্ট চেষ্টা করেছিলাম, কিন্তু তিনি আমার কথা শোনেননি।
একই কথা জানিয়েছেন কানাপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আজগর আলী। তিনি বলেন, চেয়ারম্যান আমাকে বলেছিলেন সরকারি কাজের জন্য মাটি দরকার। আমি তাকে অন্য জায়গা থেকে মাটি নিতে অনুরোধ করেছিলাম। তিনি ইউএনও’র কথা বলে মাটি তুলেছেন। প্রথমে গর্ত কম হবে ভেবেছিলাম, কিন্তু এখন গভীরতা অনেক বেশি হওয়ায় আমাদের প্রতিষ্ঠান ঝুঁকির মধ্যে আছে।
চর আষাড়িয়াদহ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আশরাফুল ইসলাম ভোলা বলেন, আমরা স্কুলের জমিতেই একটি শিশুপার্ক তৈরি করব। বন্যার কারণে অন্য কোথাও মাটি পাওয়া যাচ্ছে না। তাই স্কুলের মাঠ থেকে মাটি নিয়ে ওই জায়গাটি প্রস্তুত করেছি। স্কুলের জায়গা, স্কুলেরই পার্ক- এতে কোনো সমস্যা নেই। আমরা শিক্ষকসহ সবার সঙ্গে আলোচনা করে মাটি তুলেছি এবং ভবিষ্যতে গর্ত ভরাট করে দেব।
স্কুল মাঠ থেকে মাটি তোলার সুযোগ আছে কি না, এমন প্রশ্নে চেয়ারম্যান বলেন, ‘হ্যাঁ, আছে। ইউএনও স্যার নিজে উপস্থিত থেকে এই কাজ করিয়েছেন।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে গোদাগাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ফয়সাল আহমেদ প্রথমে পুরো ঘটনাটি জানেন না বলে দাবি করেন। পরে তিনি জানান, তারা সেখানে একটি শিশু মিনি পার্ক করবেন এবং বর্ষার কারণে খেলনা বসানোর জন্য মাটি দিয়ে জায়গাটি উঁচু করছিলেন। ইউএনও বলেন, আমাদের পরিকল্পনা ছিল পরবর্তীতে গর্ত ভরাট করে দেব। তবে চেয়ারম্যান হয়তো বেশি গভীর করে ফেলেছেন। আমরা তাকে বলেছি ব্যবস্থা নিতে, তিনি ব্যবস্থা নিবেন।