পিআর নিয়ে যদি ঐকমত্য না হয়, ক্লোজ দ্য চ্যাপ্টার : আমীর খসরু

১৪ মাস পরেও ঐকমত্যের বাইরে গিয়ে কেন এত আলোচনা করতে হচ্ছে, এমন প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, এ নিয়ে ১৪ মাস পরেও কেন আলোচনা করতে হবে? ঐক্যমত্য কমিশন হয়েছে। ভালো। আমি তো ঐকমত্য করি। যেসব বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে এবার ক্লোজ দ্য চ্যাপ্টার। ঐকমত্যের বাইরে গিয়ে আবার কেন আমাদেরকে এত আলোচনা আমাদেরকে করতে হচ্ছে? কেন আমাদেরকে পিআর নিয়ে আলোচনা করতে হচ্ছে? পিআর এ যদি ঐকমত্য না হয়, ক্লোজ দ্য চ্যাপ্টার।
আজ শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রাজধানীর ইস্কাটনে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের (বিআইআইএসএস) মিলনায়তনে ‘সংস্কার ও নির্বাচন : প্রেক্ষিত জাতীয় ঐক্য’ শীর্ষক এক সেমিনারে এসব কথা বলেন আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। এ সেমিনারের আয়োজন করে ‘ডেমোক্রেসি ডায়াস বাংলাদেশ’। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন সংগঠনটির চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল মামুন।
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী আরও বলেন, ‘সংস্কার নিয়ে বহু আলোচনা হয়েছে, ঐক্যমত্য কমিশন হয়েছে, আমাদের কোনো আপত্তি নেই। অনেস্টলি বলছি, ঐকমত্য কমিশন হোক আর না হোক, সংস্কার নিয়ে ঐকমত্য হোক আর না হোক; বিএনপির পক্ষ থেকে আমরা ৯ বছর আগে ভিশন-২০৩০ এর মাধ্যমে কী কী সংস্কার হবে, তা আমরা জাতির সামনে তুলে ধরেছি। আমরা পরে ২৭ দফার মাধ্যমে বিএনপি কী কী সংস্কার করবে তা জাতির কাছে ডিক্লিয়ার্ড করেছি। পরবর্তীতে আমাদের সঙ্গে যারা যুগপৎ আন্দোলন করেছে, তাদের মতামতের পরিপ্রেক্ষিতে ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছি। সুতরাং, ঐকমত্য কমিশনের যে এক্সারসাইজ, আমাদের এতে কোনো আপত্তি নেই।’
বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, ‘এই এক্সারসাইজের মাধ্যমে ১৪ মাস পরে আমাকে এখনও আলোচনা করতে হবে কেন? ঐক্যমত্য কমিশন হয়েছে। ভালো। আমি তো ঐকমত্য করি। শব্দটা হচ্ছে, ঐকমত্য কমিশন। অনেস্টলি বলছি, যেসব বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে এবার ক্লোজ দ্য চ্যাপ্টার। ঐকমত্যের বাইরে গিয়ে আবার কেন আমাদেরকে এত আলোচনা আমাদেরকে করতে হচ্ছে, কেন আমাদেরকে পিআর নিয়ে আলোচনা করতে হচ্ছে। পিআর এ যদি ঐকমত্য না হয়, ক্লোজ দ্য চ্যাপ্টার।’
আমীর খসরু বলেন, ‘আমরা জনগণের মালিকানার কথা বলেছি। জনগণের মালিকানা যদি হয়ে থাকে, আমরা কয়েকটি দল টেবিলে চারদিকে বসে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করব? এই দায়িত্ব কে দিয়েছে? কোনো রাজনৈতিক দল, এমনকি বিএনপিকেও দেয় নাই, অন্য কোনো দলকেও দেয়নি।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘আমরা একদিকে বলি, জনগণের মালিকানা, আবার অন্যদিকে আমরা নিজেরা বসে সব নির্ধারণ করতে বসে যাই। আগামীর বাংলাদেশে কী কী সংস্কার দরকার হবে, আমাদের মধ্যে যেসব ঐকমত্য হয়েছে সেসবও তো জনগণের কাছে নিয়ে যেতে হবে। বাংলাদেশের জনগণের কাছে আগামী নির্বাচনে আমাদেরকে জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে সংসদে আসতে হবে, এটা পাস করার জন্য।’
আমীর খসরু বলেন, ‘আজকে যদি আমরা সবাই নাকে খত দিয়ে সব অলিখিত জিনিসে ঐকমত্য হয়ে যাই, কাল যদি বাংলাদেশের মানুষ এটা না চায়, ম্যান্ডেট না দেয়—তাহলে কী হবে? এটার সহজ পথ হচ্ছে, যেটা আমরা বিএনপির পক্ষ থেকে করেছি, পরবর্তীতে ৩১ দফায় বলেছি—আমাদের বিষয়টা আমরা তো পরিষ্কার করেছি জনগণের কাছে এবং এই ৩১ দফা নিয়ে আমরা জনগণের কাছে যাব। তার বাইরে গিয়ে যে একটা এক্সারসাইজ চলছে, এই এক্সারসাইজের মাধ্যমে লাভের থেকে ক্ষতি বেশি হচ্ছে কিনা, আমাদেরকে এটা বিবেচনা করতে হবে। জাতিকে কি আমরা কনফিউজ করছি? কোনো কারণ ছাড়া প্রতিনিয়ত আমরা কি জাতির মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করছি?’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, ‘খুবই পরিষ্কার কথা, প্রত্যেক দলের চিন্তা, ভাবনা, দর্শন, ভবিষ্যৎ রূপরেখা থাকতে হবে। আগামী নির্বাচনে আপনি সেগুলো নিয়ে যান জনগণের কাছে, আপনি ম্যান্ডেট নিয়ে সংসদে আসেন, পাস করেন। কিন্তু আপনি জোর করে ঐকমত্যের একটা কমিশনের কথা বলে, এর মধ্যে কতদিন এক্সারসাইজ করলেন? এখনও আবার কমিশন? ঐকমত্যের বাইরে গিয়ে আবার নতুন নতুন দাবি নিয়ে জাতিকে বিভক্ত করবেন? আমি যেটা বলেছি, যে সমস্ত দেশ এই প্রক্রিয়ার মধ্যে ঢুকেছে, এই চক্রের মধ্যে যারা ঢুকছে, সেই সমস্ত দেশ আজকে অত্যন্ত খারাপ অবস্থায় আছে। আমরা বাংলাদেশকে তো সেদিকে নিয়ে যেতে পারব না।’
রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়ে আমীর খসরু বলেন, ‘আসুন, আগে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করে নির্বাচনের মাধ্যমে দেশে ডেমোক্রেটিক অর্ডার ফিরিয়ে আনি। ডেমোক্রেটিক অর্ডারের অনুপস্থিতিতে আজ বাংলাদেশ খারাপ অবস্থায়। আমরা ডেমোক্রেটিক অর্ডার ফিরিয়ে আনার পরে প্রত্যেকটি দলের অধিকার থাকবে সংসদের ভেতরে শুধু নয়, সংসদে বাইরেও। তারা তাদের দাবিদাওয়া নিয়ে প্রতিনিয়ত জনগণের কাছে যেতে পারবে, তাদের কথা বলতে পারবে, জনমত সৃষ্টি করতে পারবে—এটাই তো গণতন্ত্র।’
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘আপনি জনমত সৃষ্টি করে আপনার দাবি প্রতিষ্ঠিত করেন। জনমত সৃষ্টি না করে যদি আপনি এখানে ঐকমত্যের কথা বলেন, এখানে অন্যান্য দাবি তুলে আজকে একটা কনফিউশনের সৃষ্টি করেন, তাহলে তো সেটা কাজ করবে না।’
বিএনপি ক্ষমতায় গেলে এক কোটি মানুষের কর্মসংস্থান, বিনামূল্যে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবাসহ বিভিন্ন খাতে দলের পরিকল্পনা তুলে ধরে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘ফেব্রুয়ারিতে যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা বলা হয়েছে, আমরা বিশ্বাস করি, সেই সময় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এবং বাংলাদেশ একটি স্থিতিশীলতার দিকে ফিরবে এবং যে সংস্কারগুলোর কথা বলা হচ্ছে, সেই সংস্কারগুলো করব।’
আলোচনা সভায় নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাবেক সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মহাসচিব মহিউদ্দিন ইকরাম, গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান ও সাংবাদিক সোহরাব হাসানসহ অন্যান্যরা বক্তব্য দেন।