পাথরঘাটায় স্ত্রীকে পিটিয়ে হত্যার ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে, স্বামী গ্রেপ্তার

বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার কালমেঘা ইউনিয়নে যৌতুকের দাবিতে স্ত্রী কৈতুরিকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় স্বামী হানিফ মিয়াকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আজ রোববার (২৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে খাগড়াছড়ি থেকে অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করা হয়।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পাথরঘাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মেহেদী হাসান। গত ১১ সেপ্টেম্বর রাতে স্বামীর নির্যাতনে মৃত্যু হয় কৈতুরির। তার সাত মাসের একটি মেয়ে সন্তান রয়েছে।
স্বামী হানিফ পাথরঘাটা উপজেলার কালমেঘা ইউনিয়নের কালিবাড়ী এলাকার চান মিয়ার ছেলে। তিনি পেশায় একজন চা বিক্রেতা এবং অনলাইন জুয়ায় আসক্ত। কৈতুরি পাথরঘাটা উপজেলার চরদুয়ানী ইউনিয়নের গাড়াবাড়িয়া এলাকায় মোহাম্মদ মজিবুর রহমানের মেয়ে।
কৈতুরির পারিবারিক সূত্র জানায়, কয়েক বছর আগে গার্মেন্টসে চাকরির সুবাদে কৈতুরি ও হানিফের পরিচয় ঘটে। পরে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পরিবারের আপত্তি থাকলেও কৈতুরির জেদের কারণে উভয় পরিবার বিয়েতে রাজি হয়। বিয়ের পর প্রথম বছর সুখের সংসার কাটলেও, কন্যা সন্তানের জন্মের পর হানিফ অনলাইন জুয়ায় আসক্ত হয়ে পড়েন।
অনলাইন জুয়ার জন্য টাকার প্রয়োজনে হানিফ স্ত্রীর কাছে যৌতুক দাবি করতে থাকেন। পরিবার থেকে তা না পেয়ে স্ত্রীকে নিয়মিত শারীরিক নির্যাতন শুরু করেন। প্রতিবেশীরা বাধা দিলেও তিনি থামেননি। সংসার ভাঙনের ভয়ে কৈতুরি মা-বাবার কাছেও কিছু প্রকাশ করতেন না।
গত ১১ সেপ্টেম্বর নির্মম নির্যাতনের শিকার হন কৈতুরি। এক প্রতিবেশী গোপনে সেই ভিডিও ধারণ করে। এরপর ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দেয়। ভিডিওতে দেখা যায় হানিফ স্ত্রীকে নির্দয়ভাবে মারধর করছেন। গুরুতর আহত অবস্থায় কৈতুরীকে শ্বশুরবাড়ি এলাকার প্রতিবেশীরা উদ্ধার করে পাথরঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে এলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ঘটনার পর পরই হানিফ পালিয়ে যান।
হানিফ এর আগেও সাতটি বিয়ে করেছিলেন। এ ঘটনায় নিহত কৈতুরির বড় ভাই বাদী হয়ে পাথরঘাটা থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। মামলার ভিত্তিতে ১৭ দিন পর হানিফকে খাগড়াছড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
পাথরঘাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মেহেদী হাসান জানান, তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে পুলিশ সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে হানিফকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছে। আসামিকে খাগড়াছড়ি থেকে পাথরঘাটায় আনার ব্যবস্থা চলছে।