অসময়ে উন্নত জাতের ফুলকপি চাষে লাভবান হচ্ছেন রাজশাহীর কৃষকরা

রাজশাহীর বরেন্দ্র অঞ্চলে উন্নত জাতের ফুলকপি চাষ জনপ্রিয়তা লাভ করছে। শীতকালীন সবজি হিসেবে পরিচিত হলেও কৃষকরা এখন গ্রীষ্মকালেও সফলভাবে ফুলকপি চাষ করে প্রচুর মুনাফা করছেন, যা তাদের আয় বৃদ্ধি ও জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে সহায়ক হচ্ছে।
বিশেষ করে দুর্গাপুর, গোদাগাড়ী, পবা ও পুঠিয়া উপজেলায় গ্রীষ্মকালীন ফুলকপি চাষ ব্যাপকতা পাচ্ছে। বাজারে চাহিদা বৃদ্ধি এবং অসময়ে উৎপাদিত হওয়ায় ভালো দাম পাওয়াই এই পরিবর্তনের মূল কারণ। স্থানীয় কৃষকরা বাণিজ্যিক ও গৃহস্থালী উভয় পদ্ধতিতেই ফুলকপি চাষে মনোনিবেশ করছেন। অনেকেই পানির ওপর নির্ভরশীল ধানের চাষ থেকে সরে এসে লাভজনক সবজি চাষের দিকে ঝুঁকছেন। সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলোর সহায়তা এই টেকসই ও লাভজনক কৃষির দিকে অগ্রসর হওয়ার পথকে আরও প্রশস্ত করেছে।
ধামিলা গ্রামের কৃষক মনিরুল ইসলাম পাঁচ বিঘা জমিতে বাঁধাকপি চাষ করছেন এবং ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে তা বাজারে বিক্রির আশা করছেন। তিনি বলেন, চাহিদা প্রচুর, দামও ভালো। খুচরা বাজারে বর্তমানে প্রতি কেজি ফুলকপি ১৬০ থেকে ১৭০ টাকা। তবে, এক সপ্তাহ আগে দাম আরও বেশি ছিল।
গোদাগাড়ী উপজেলার গোলাই গ্রামের কৃষক মুহাম্মদ মিলন (৪৫) গ্রীষ্মকালীন ফুলকপি চাষ করে ইতোমধ্যে লাভবান হতে শুরু করেছেন। তিনি ১২ বিঘা জমিতে ফুলকপি চাষ করেছেন এবং গত সপ্তাহেই এক বিঘা জমি থেকে ১ লাখ ৬০ হাজার টাকায় ফুলকপি বিক্রি করেছেন। তিনি বলেন, উৎপাদন খরচ প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা। প্রথম দিকের ফসলের ফলন অনেক ভালো হয়। মিলন জুন মাস থেকে ফুলকপি ও বাঁধাকপি রোপণ শুরু করেছেন এবং শীতকালে একাধিক পর্বে চাষ করার পরিকল্পনা করেছেন। তিনি আরও বলেন, প্রথম দিকের ফসল শীত বা গরম যেটাই হোক সবসময় বেশি লাভজনক হয়।
কৃষি উপ-সহকারী কর্মকর্তা অতনু সরকার জানান, গ্রীষ্মকালীন সবজি চাষের প্রতি কৃষকের আগ্রহ বেশি দেখতে পাচ্ছি। কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ কৃষকদের সর্বাধিক মুনাফা অর্জনে সহায়তা করার জন্য প্রযুক্তিগত সহায়তা দিচ্ছে। দীর্ঘ সময় ধরে চাষ করে আসা শস্য ধানের তুলনায় সবজি চাষ বেশি লাভজনক প্রমাণিত হচ্ছে।
রাজশাহীর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক উম্মে সালমা জানান, বর্তমানে জেলায় প্রায় ৩০ হেক্টর জমিতে ফুলকপি ও বাঁধাকপি চাষ করা হচ্ছে। তিনি বাণিজ্যিক চাষ ও গৃহস্থালি বাগান উভয়ের ক্রমবর্ধমান প্রবণতার কথা তুলে ধরেন। উম্মে সালমা বলেন, কৃষকরা উন্নত, উচ্চ-ফলনশীল জাতের দিকে ঝুঁকছেন। এতে ভালো দাম পাওয়া যায়। অনেকেই এখন কেবল শীতকালেই নয়, গ্রীষ্মকালেও ফুলকপি চাষ করছেন। যার ফলে তাদের লাভ বেশি হচ্ছে।